রামপুরহাট কান্ডের তদন্তে সিটে ভরসা নেই সিপিএমের। প্রত্যেকটা ঘটনার পর প্রমাণ লোপাটের জন্যই সিট গঠন করে সরকার- অভিযোগ সেলিমের।
রামপুরহাট :বগটুইয়ের গণহত্যাস্থলে দাঁড়িয়ে রাজ্য প্রশাসনকে ধুয়ে দিলেন মহম্মদ সেলিম। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছেই দগ্ধ বাড়িঘরগুলি ঘুরে দেখেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। সেলিমের সঙ্গে ছিলেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমও। সাংবাদিকদের সেলিম বলেন,” যখন বগটুইয়ের পশ্চিমপাড়ায় খুন হচ্ছিল। বোমা পড়ছিল তখন পুলিশ চারটি গাড়ি নিয়ে গ্রামের মোড়ে দাঁড়িয়ে অপরাধীদের পাহারা দিচ্ছিল।” ঘটনার পর রাজ্য সরকার সিট গঠন করলেও বিষয়টিকে কটাক্ষ করেন মহম্মদ সেলিম। সেলিম মনে করেন সিট তৈরি হয়েছে তথ্য লোপাট করার জন্য। বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে সেলিম বলেন, “এখানে তদন্ত হবে। সিট আসবে। কেউ যেন প্রমাণ নষ্ট না করে। আমাদের রাজ্যে প্রমাণ নষ্ট করার একমাত্র অধিকার আছে শুধু সিট-এর। সেই কারণেই সিট গঠন করা হয়েছে।”
বগটুইয়ের গণহত্যায় গ্রামের এক নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ।কাজি সাজিদুল রহমান নামে ওই যুবকের বাড়ি বীরভূমের নানুরে। আগুনে পুড়ে মৃতদের মধ্যে কাজি সাজিদুল ও তাঁর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীও রয়েছেন বলে সন্দেহ। কিন্তু তাদের দেহ এখনও শনাক্ত করা যায় নি। পুলিশ এই ব্যাপারে কোনও সাহায্য করছে না বলে মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ। সেলিম জানান, সাজিদুলের বাবা কাজি নুরুল হন্যে হয়ে ছেলে-বউয়ের লাশ খুঁজছেন কিন্তু পুলিশ কোনও সহযোগিতা করছে না। নানুর এবং রামপুরহাট থানা সাজিদুলের বাবার এফআইআর নিতে পর্যন্ত অস্বীকার করেছে বলে বুধবার সকাল বগটুইয়ে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করলেন সেলিম।
সোমবার রাতে গণহত্যার পর বগটুই গ্রাম কার্যত এখন জনশূন্য। গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তৃণমূলের উপপুরপ্রধান ভাদু শেখ। যিনি সেদিন রাত আটটা নাগাদ স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসে থাকাকালে বোমা হামলায় খুন হন। ঘটনার জেরে রাত বারোটার পর থেকে পশ্চিম পাড়ায় হামলা চালায় ভাদুর অনুগামীরা। নিহত তৃণমূল নেতার অনুগামীরা প্রতিশোধ নিতে পারে, এটা জানার পরেও পুলিশ হিংসা আটকাতে পদক্ষেপ করল না কেন? প্রশ্ন তোলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। মঙ্গলবারই বাম প্রতিনিধিদলকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা জানিয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। বুধবার সকালে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের দিকে রওনা দিলে পুলিশ অবশ্য সেলিমদের আটকানোর কোনও চেষ্টা করে নি।
হত্যাকান্ডের পরপরই মমতার নির্দেশে বগটুই গ্রামে যান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি। ঘটনা ধামাচাপা দিতেই রাজ্যের মন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছিল বলে কটাক্ষ করেন মহম্মদ সেলিম। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা পর্যন্ত প্রশাসন চেপে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনা জানাজানি হতেই বগটুই হত্যাকান্ড নিয়ে পরস্পর বিরোধী মত দিতে থাকে নবান্ন, পুলিশ এবং তৃণমূলের রাজ্য ও স্থানীয় নেতৃত্ব। ঘটনাটিকে শর্টসার্কিট থেকে টিভি ব্লাস্ট বলেও চালানোর চেষ্টা করেন অনুব্রত মণ্ডল। বিষয়টিতে রাজনীতি জড়িত নয় বলে ঘোষণা করে দেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। আবার মঙ্গলবার একটু বেলা বাড়তেই রামপুরহাটের ঘটনার মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান কুণাল ঘোষ ও মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুরো ব্যাপারটিকেই সত্য আড়াল করার মরীয়া চেষ্টা বলে কটাক্ষ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
উপপ্রধান খুন ও তার জেরে গণহত্যার পেছনে শাসকদলের তোলাবাজি কাজ করছে বলে দাবি করেন মহম্মদ সেলিম। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আশীষ ব্যানার্জির ভাইপোর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন সেলিম। ভাইপোর তোলাবাজির টাকার ভাগ পুলিশের অফিসারেরাও পেতো বলে অভিযোগ করেন তিনি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কটাক্ষ করে বলেন,“কালীঘাটে মমতার ভাইপোর মতোই এখানে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। আশিসেরর ভাইপো এসডিপিও-কে কিনে রেখে এখানে অত্যাচার চালাচ্ছে।’’ সেলিমের কটাক্ষ- “মমতার হাওয়াই চপ্পলের দাগ আছে প্রত্যেকটা রক্তপাতে। প্রত্যেকটা গণহত্যায়।”
রাজ্য বিজেপি বগটুই হত্যাকান্ডের সিবিআই তদন্ত দাবি করলেও তাতে কোনও আশার আলো দেখছেন না মহম্মদ সেলিম। সেলিমের দৃষ্টিতে সিবিআই-সিআইডি দুই-ই সমান। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন,”মমতার হাতে সিট-সিআইডি। অমিত শাহের হাতে সিবিআই। কোনও পার্থক্য নেই। কাক কাকের মাংস খায় না। মমতা আর অমিত ঠিক করে দেন তদন্তে কী হবে।”
ভিডিওতে দেখুন-
Photo and Video source- CPM official FB page.