জলপাইগুড়ি পুরসভার দায়িত্ব সঁপতে গিয়ে ক্যারিশ্মাটিক নয় বরং অবিতর্কিত মুখকেই গুরুত্ব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জলপাইগুড়ি :প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন থেকে নির্বাচিত পুরবোর্ডের প্রধান পাপিয়া পাল। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১৩৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধান। বুধবার সকালে কলকাতা থেকে পাঠানো খাম খুলে পুরপ্রধান হিসেবে পাপিয়া পালের নাম ঘোষণা করেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি মহুয়া গোপ। উপপুরপ্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈকত চট্টোপাধ্যায়। এবার ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হয়েছেন পাপিয়া। ভোটে তৃণমূলের বিজয় প্রত্যাশিতই ছিল। যদিও ভোটের দিন বেনজির গোলমালের সাক্ষী ছিল শহর জলপাইগুড়ি, যা বিরোধীদের অভিযোগ তোলার সুযোগ করে দেয়। বহু ওয়ার্ডেই ব্যাপক ছাপ্পা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।
ভোটে অনিয়ম না হলেও তৃণমূলই জলপাইগুড়ির পুরভোটে জিতত বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। হয়তো কয়েকটি আসন কমত শাসকদলের। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে পঁচিশে বাইশ করে তৃণমূল। প্রচারপর্ব থেকেই চেয়ারম্যান নিয়ে জল্পনা। পাপিয়া না অন্য কেউ – কাকে জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রধান বানান মমতা, এ নিয়ে কৌতুহলের শেষ ছিল না তৃণমূলের ভেতরে-বাইরে সর্বত্রই। এবার শুরু থেকেই পুরপ্রধান পদের বড় দাবিদার ছিলেন সৈকত চট্টোপাধ্যায়। ১৫ থেকে ২০- মোহন বোসের বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলেছেন সৈকত। পাপিয়া পালের নেতৃত্বে গঠিত প্রশাসক বোর্ডেও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। একই দায়িত্বে দেখা গিয়েছিল সন্দীপ মাহাতোকেও।
শেষ পর্যন্ত পাপিয়া পালের উপরেই জলপাইগুড়ি পুর প্রশাসনের দায়িত্ব ছাড়লেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এবারও আশাভঙ্গ হতে হল সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে । জলপাইগুড়ির পুর রাজনীতিতে বরাবরই সক্রিয় জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি। পুরসভার কাজেও প্রথমের সারিতে। কোভিড পিরিয়ডে লকডাউন কালে সার্ভিসও দিয়েছেন সবার থেকে বেশি। পুরভোটের প্রচারেও শহর জুড়ে খেটেছেন। আবার মনোনয়ন পর্বে এক নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় কান্ডে অভিযোগের আঙুলও উঠেছিল সৈকতের বিরুদ্ধে। পুলিশের বাধায় মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেন নি শেখর। এই নিয়ে মামলা হলে জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসককে সশরীরে হাইকোর্টে হাজিরা দিতে হয়। তাঁকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি।
শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোর করে মনোনয়ন জমা না দিতে দেওয়ার ঘটনাকে জেলা তৃণমূলের ভেতরেও অনেকেই ভালভাবে নেন নি। বিতর্কিত ভোটপর্ব মিটেছে ২মার্চ। পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা হল ১৬ মার্চ। ১৪ দিন ধরে শহরের রাজনৈতিক মহলে সবথেকে বেশি চর্চিত বিষয় ছিল পাপিয়া পাল না সৈকত চট্টোপাধ্যায় নাকি অন্য কেউ- কে পাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় সদরের এক নম্বর নাগরিকের দায়িত্ব ? শীর্ষ নেতৃত্বের নজর কাড়তে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন নি কেউই। কিন্তু তৃণমূলে শেষ কথা মমতাই। দেখা গেল অবিতর্কিত পাপিয়ার উপরেই নির্ভর করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
বুধবার বিকেলে জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রয়াস হলে নব নির্বাচিত ২৫ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান সদর মহকুমা শাসক সুদীপ পাল। পুরপ্রধান হিসেবে শপথ নেন পাপিয়া পাল। পাপিয়া ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সৈকতের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব করলে তা সমর্থন করেন অন্যরা। জলপাইগুড়িকে দূষণমুক্ত, প্লাস্টিক মুক্ত সবুজ শহর হিসেবে গড়ে তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য বলে সাংবাদিকদের জানান নতুন পুরপ্রধান। তাঁর উপরে আস্থা রাখায় মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান পাপিয়া পাল।
ভিডিওতে দেখুুন-
Video & Pictures- Reporter.