হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও পুলিশের বাধা! মনোনয়ন জমা দিতে ব্যর্থ জলপাইগুড়ির বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা - nagariknewz.com

হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও পুলিশের বাধা! মনোনয়ন জমা দিতে ব্যর্থ জলপাইগুড়ির বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা


পুলিশের এসপি এবং মহকুমা শাসকের বিরুদ্ধেওআদালত অবমাননার অভিযোগ ! ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ফের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা।বৃহস্পতিবার শুনানির সম্ভাবনা।

জলপাইগুড়ি : হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও বুধবার জলপাইগুড়িতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারলেন না বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা। দলের মনোনয়ন না পেয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা। শেখর বাবুর আইনজীবীদের অভিযোগ, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকার পরেও ইচ্ছাকৃতভাবে প্রার্থীকে জায়গায় জায়গায় বারেবারে আটকেছে পুলিশ। বিস্তর বাদানুবাদের পর পুলিশ যখন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর আইনজীবীদের পথ ছাড়ে ততক্ষণে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়‌ পেরিয়ে গেছে। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা ও তাঁর আইনজীবীদের মহকুমা শাসকের দফতরের ভেতরেও ঢুকতে দেওয়া হয় নি। মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়ে দফতরের প্রবেশপথ থেকেই ফিরে আসেন তাঁরা।

মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার আগেই গ্রেফতার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা শেখর ব্যানার্জি।

পুরো ঘটনার দায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের উপর চাপিয়েছেন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী ‌পার্থ চৌধুরী। তিনি বলেন,” মনোনয়ন জমা নিতে‌ বিচারপতি রবিকিষাণ কপূরের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ থাকার পরেও পুলিশ তৃণমূল নেতাদের অঙ্গুলি হেলনে কাজ করেছে। শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন আদালত অবমাননার অপরাধ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। রিটার্নিং অফিসার থেকে পুলিশ সুপার- সবার বিরুদ্ধেই তাঁরা আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু। বুধবার‌ই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দিতে গেলে এক‌ই রকমভাবে দফায় দফায় বাধা দেয়‌ পুলিশ। দুপুর তিনটে বাজার‌ পর পুলিশ যখন তাঁর পথ ছাড়ে তখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ। শেষ দিন‌ও তাঁর সঙ্গে এক‌ই নাটক হবে, এটা বুঝতে পেরেই কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি ধার্য করে আদালত। সকালে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে র‌ওনা হলে আবার আগের দিনের নাটক মঞ্চস্থ করতে নেমে পড়ে পুলিশ। এসডিও অফিসের বহু আগে পিডব্লিউডি মোড়ে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর আইনজীবীদের আটকে দেয় পুলিশ।‌ শুরু হয় বাদানুবাদে। শেষে ধস্তাধস্তি। কিছুক্ষণ পর শেখরবাবুকে ধরে জোর করে গাড়িতে তুলে থানার নিয়ে যায় পুলিশ। কোভিড বিধি অমান্য ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের আধিকারিকেরা জানান। পরে অবশ্য বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও এইভাবেই বারে বারে শেখর ব্যানার্জিকে আটকায় পুলিশ।

দুপুর সোওয়া দুটোর দিকে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বের হ‌ওয়ার পর ফের হ‌ওয়ার পর ফের মনোনয়ন জমা দিতে এসডিও অফিসের দিকে র‌ওনা দেন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে তাঁর আইনজীবীরা। এবার‌ও এক‌ই ঘটনা। দফায় দফায় নানা টালবাহানা করতে করতে পুলিশ তাঁদের ৩৫ মিনিট আটকে রাখে বলে শেখরবাবুর আইনজীবীদের অভিযোগ। এই সময় পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় আইনজীবীদের। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার ফের হাইকোর্টে যাচ্ছেনবিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারের পুরো ঘটনা প্রমাণ সহ হাইকোর্টের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী ‌পার্থ চৌধুরী।

নির্দল প্রার্থীর আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের বাদানুুবাদ।

শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, আমার মনোনয়ন জমা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকার পরেও ডিএসপি আমাকে তিনটা পর্যন্ত আটকে রাখল। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। কাল আবার হাইকোর্টে যাচ্ছি। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবো।” জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি সৈকত চ্যাটার্জির প্ররোচনাতেই পুলিশ হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে তাঁর মনোনয়ন জমা আটকে দিয়েছে বলে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ। এই নিয়ে সৈকত চ্যাটার্জিকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান,” কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম এমনকি এসইউসিআইয়ের প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকানো হয়নি। সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ দেখা হোক।” ১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে তৃণমূল ভীত নয় বলেও জানান সৈকত চ্যাটার্জি। তিনি বলেন,” যাঁরা কোনও দল পান না তাঁরাই নির্দলে দাঁড়ান।”

রাজনৈতিক চাপান-উতর যাই চলুক। মঙ্গলের পর বৃহস্পতিবারের ঘটনায় অশনিসংকেত দেখছে জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক মহল। বাইশের পুরভোটে আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ‌হবে না তো ? এটাই এখন ভাবাচ্ছে নাগরিক সমাজকে।

খবরটি দেখুন ভিডিওতেও –

Photo and Video- Reporter.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *