মুকুলকে দলে নিয়ে বিব্রত তৃণমূল,যেন সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা - nagariknewz.com

মুকুলকে দলে নিয়ে বিব্রত তৃণমূল,যেন সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা


মুকুল রায়কে চরম কটাক্ষ করলেন কুণাল ঘোষ। মুকুল সপ্তাহে দু’বার দল বদলান আর রবিবার করে মাথার ডাক্তার দেখান‌ – বললেন ‌রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক

বিশেষ প্রতিবেদন : নিজের দলেই রীতিমতো উপেক্ষার পাত্র মুকুল রায়। অবশ্য মুকুল যদি তৃণমূলেই থাকেন তবেই এই কথা বলা চলে। কেননা, মুকুল এখন কোন ফুলে- এটা নিয়েই ‌জব্বর ধোঁয়াশা বাংলার রাজনৈতিক মহলে। গত ১১ জুন তৃণমূল ভবনে গিয়ে মমতা ও অভিষেকের উপস্থিতিতে সপুত্র মুকুল তৃণমূলের যোগদানের পরেও‌ ঘটনাটা দৃষ্টিবিভ্রম না বাস্তব তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষকে লেখা মুকুল রায়ের আইনজীবীর চিঠি। চিঠিতে সুস্পষ্ট ভাষায় দাবি করা হয়েছে, মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন। কখনও তৃণমূলে যোগ দেন নি। এদিকে মুকুল স্বয়ং স্বমুখে যখন বিজেপির হয়ে ব্যাটিং করছেন তখন তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু বলছেন, বাবার সোডিয়াম-পটাশিয়ামের লেভেল আপ-ডাউন করছে দেখে বাবা আবোলতাবোল বকছেন। বাবা তৃণমূলেই আছেন। যেদিন বিধানসভায় গিয়ে মুকুলের আইনজীবী ‌স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়ে এসেছেন যে, তিনি বিজেপিতেই আছেন ঠিক সেই দিন‌ই শান্তিনিকেতনে অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে আসন্ন পুরভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন মুকুল রায়। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে দু’টি ঘটনা নেহাতই সমাপতন না সব‌ই চাণক্য মুকুলের চাল?

১১ জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন মুকুল রায়।

মুকুল রায় কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রতীকে জেতা বিধায়ক। বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে মুকুল‌ই প্রথম দলত্যাগী। দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকারকে চিঠি দিতে দেরি করে নি বিজেপি। ঘর বাপসির উপহার স্বরূপ মুকুলকে‌ই বিধানসভার পিএসি’র চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয় তৃণমূল। পরিষদীয় রীতিনীতির পরিপন্থী হলেও তা মেনে নিতে দেরি করেন নি রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দবি থেকে পিএসি’র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ – জল আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে মুকুল বলেছেন, “এই পৌর নির্বাচনে সারা পশ্চিম বাংলায় বিপুলভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে।” অনুব্রত ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা পেছন থেকে খোঁচাখুঁচি করলে মৃদু সহাস্য বদনে মুকুল বলেন,” ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।” এই ঘটনার ঠিক ১৩৮ দিন আগে ৬ অগাষ্ট কৃষ্ণনগরেও সাংবাদিকদের সামনে মুকুল রায় বলে বসেন, “দেখা যাক উপনির্বাচন হোক। ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি তৃণমূল উপনির্বাচনে পর্যুদস্ত হবে। কৃষ্ণনগরে ভারতীয় জনতা পার্টি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা পাবে। এখানে তৃণমূল হেরে যাবে।” ১৩৮ দিনের ব্যবধান। কিন্তু বিজেপির ব্যাপারে মুকুলের ভবিষ্যদ্বাণী অভিন্ন। যদি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেই মুকুল রায়ের সোডিয়াম-পটাশিয়াম লেভেল ড্রপ করে তবে আলাদা কথা। নচেৎ মুকুল রায়ের মতো ঝানু রাজনীতিবিদ, যিনি মেপে কথা বলতেই অভ্যস্ত তিনি দীর্ঘ ১৩৮ দিনের ব্যবধানে এক‌ই ভুল করবেন এটা মানতে চাইছেন না অনেকেই। এমনকি তৃণমূলের ভেতরেও এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে।

মুকুলের মন্তব্যে একদিকে সামাজিক মাধ্যমে চরম খিল্লি অন্য দিকে চেপে ধরেছেন বিরোধীরা। বাম-কংগ্রেসের দাবি, মুখ ফস্কে সত্যি কথাটাই বলে ফেলেছেন মুকুল রায়- যাহা বিজেপি তাহাই তো তৃণমূল। মুকুল সত্যিটা বলে দিয়েছেন তৃণমূল এখন মুকুলকে পাগল সাব্যস্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে বলে কটাক্ষ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ” মুকুলবাবুর যদি মানসিক স্থিতি ঠিকই না থাকে তবে পিএসি’র চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেখেছে কেন সরকার? সরকারের মানসিক স্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। দলত্যাগী মুকুল রায় সম্পর্কে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষের ( মুকুল রায় বিজেপিতে থাকা কালীন রাজ্য বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের দ্বন্দ্বের কথা রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। ) মন্তব্যে যথেষ্টই সহানুভূতি ঝড়ে পড়লেও মুকুলকে রীতিমতো বিদ্রূপ করেছেন কুণাল ঘোষ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “আমি মুকুল রায় প্রসঙ্গে খুব একটা কিছু বলতে পারব না। মুকুল রায় সোম-বূধ-শুক্র এক দল করেন। মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনি আরেক দল করেন। আর রবিবার মাথার চিকিৎসা করান।‌”

নিজের জেল যন্ত্রণার জন্য মুকুল রায়কেই দায়ী মনে করেন কুণাল ঘোষ।

মুকুল রায়ের উপর কুণাল পুরোনো রাগ মেটাচ্ছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মুকুলের অঙ্গুলি হেলনেই সারদা মামলায় ফেঁসে তাঁর লম্বা দুর্ভোগ বলে এর আগে একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন কুণাল‌ ঘোষ। মুকুল বিজেপিতে থাকতেই ফের তৃণমূলে বড় পদ লাভ করেন কুণাল। সিবিআই কেন সারদা মামলায় মুকুল রায়কে ধরে না, এই নিয়ে একাধিকবার সোচ্চার হয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। এখন মুকুলের সঙ্গে ঘর করতে বাধ্য হলেও পূর্বস্মৃতি ভোলেন নি কুণাল ঘোষ। তাই মুকুল মুখ হড়কাতেই খোঁচা কুণালের। মুকুলকে দলে নিয়ে কি সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা তৃণমূলের?

Photo Credit- Official FB page of Kunal Ghosh and Mukul Roy.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *