ঘাড়ে ধরে অসামরিক রাষ্ট্রপ্রধানকে গদি থেকে নামিয়ে দেওয়া পাকিস্তানের জেনারেলদের কাছে কোনও ব্যাপারই না । এবার মনে হয় ইমরান খানের ঘাড়ধাক্কা খাওয়ার পালা । ইসলামাবাদে ক্ষমতার অলিন্দে পরিস্থিতি যা তাতে যেকোনও মুহুর্তে পদত্যাগ করতে হতে পারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : না । ইমরান খানের সময়টা ভাল যাচ্ছে না । পাকিস্তান পয়দা হওয়ার পর থেকেই এই সমস্যার শুরুয়াৎ । খুব বেশিদিন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানদের বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকে না । শনি চাপে ঘাড়ে । শনির নাম আর্মি । পাকিস্তানিরা যদিও গর্ব করে বলে তাদের পাকসাফ দেশটাকে দুশমনের ‘ বুড়িনজর ‘ থেকে রক্ষা করছে আসমানে আল্লাহ আর জমিনে আর্মি । জমিনে দেশের মালিক যখন আর্মি তখন নির্বাচিত ওয়াজির এ আজমেরা যে জেনারেলেদের চোখে নফরের চেয়ে বেশি কিছুই নয় তা বহু আগেই মেনে নিয়েছে পাকিস্তানের জনগণ । ইসলামাবাদের বাতাসে জোর কানাঘুষা , জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাওয়াল চরমে উঠেছে। আগের জামানা হলে জেনারেল বাজওয়া কবেই পশ্চাদ্দেশে লাত্থি মেরে ইমরানকে তখত থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই ওই জায়গায় বসে পড়তেন । এখন সরাসরি ফৌজির হুকুমত আন্তর্জাতিক সমাজ ভালচোখে নেয় না বলে এতদিন পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে ইমরানের বেয়াদবি বরদাস্ত করে যাচ্ছেন বাজওয়া। দু’জনের মধ্যে নানা ইস্যুতে খটাখটি লেগেই ছিল । সম্প্রতি মতান্তর চরমে উঠেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের শীর্ষপদে নিয়োগকে ঘিরে । আইএসআইয়ের নতুন ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে আগামী ২০ নভেম্বর দায়িত্বভার বুঝে নেওয়ার কথা লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমের । নাদিম ইমরানের খাতিরের লোক । এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার ইচ্ছা আইএসআইয়ের বর্তমান ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈজ হামিদই আরও কিছুদিন স্বপদে বহাল থাকুন ।

সেনাপ্রধান সরকার প্রধানের উপর নাখোশ থাকলে সরকার প্রধানের দিন গুনতে শুরু করে দেয় পাকিস্তানের পাবলিক । রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন , বিশ নভেম্বরই এত হাউসের তখত ছাড়তে হতে পারে খানসাহেবকে । ঘরে-বাইরে দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিতে নেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান । মুদ্রাস্ফীতি আসমান ছুঁয়েছে। জিনিসপত্রের দাম আগুন। সরকারের উপর সাধারণ মানুষ চরম বিরক্ত। পার্লামেন্টের অন্দরেও বেশ বেকায়দায় ইমরান। খানসাহেবের দল পাকিস্তান তেহেরিক -ই- ইনসাফ ক্ষমতায় এসেছিল পিএমএল ( কিউ ) ও মুত্তাহিদা কৌমি মুভমেন্টের ( এমকিউএম ) সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে। বেশ কিছুদিন ধরেই জোটসঙ্গীরা প্রধানমন্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট। দুটি দলই যেকোনও মুহুর্তে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে বলে খবর । পিএমএল( কিউ) ও এমকিউএম যাতে সত্ত্বর ইমরানের সঙ্গ ত্যাগ করে , সেই লক্ষ্যে জেনারেল বাজওয়া ক্যান্টনমেন্টে বসে কলকাঠি নাড়ছেন বলে যথেষ্টই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে । এই দুটি দল সমর্থন তুলে নিলেই ইমরান খানের পতন নিশ্চিত ।

পার্লামেন্টের আস্থা হারিয়ে ইমরান পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়েও ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গেছে । পিএমএল( কিউ)র নেতা শাহবাজ শরিফ অথবা তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা পারভেজ খট্টক – এই দু’জনের মধ্যে কারও প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল । শেষ পর্যন্ত কী হবে তা অবশ্য জানেন ক্যান্টনমেন্টের জেনারেলরা । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ লন্ডনের নির্বাসিত জীবন ছেড়ে শীঘ্রই স্বদেশে ফিরতে পারেন বলে মিডিয়ায় চাউর হয়েছে । দুর্নীতির মামলায় আদালতে সাজাপ্রাপ্ত নওয়াজকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীই ফিরিয়ে আনতে চাইছে বলে বাজারে খবর রটেছে। গূঢ় কোনও উদ্দেশ্য ছাড়া যে সেনাবাহিনী নওয়াজকে শরিফকে ফিরিয়ে আনছে না তা বলাই বাহুল্য। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুর্দশা আরও একবার প্রমাণ করল, পাকিস্তানে নির্বাচিত অসামরিক সরকার যতই ফড়ফড় করুক । নাটাই থাকে সেনাবাহিনীর হাতে। বিভিন্ন কিসিমের মৌলবাদী জঙ্গির দৌরাত্ম্য , বালুচ বিদ্রোহ , সোয়াটে পাক তালিবানের দবদবায় নাজেহাল ইমরান খানের সরকার । পাকিস্তানের মৌলবাদী গোষ্ঠী গুলির মধ্যে তেহেরিক-ই-লাব্বাইক খতরনাক। টিএলপির হিংসাত্মক বিক্ষোভ সামাল দিতে না পেরে দিন কয়েক আগে এদের সঙ্গে সমঝোতা পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছেন ইমরান খান। গোষ্ঠীটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সরকার । এখন শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে বিড়ম্বনায় ফেলতে পরিকল্পনা করে তেহেরিক-ই-লাব্বাইককে লেলিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনীই।
Image Credits – Official Facebook page of Imran Khan and Nawaz Sharif and The Dawn.