আর ঢাক ঢাক গুড় গুড় নয় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই হয়তো চাইছেন , কংগ্রেস নিয়ে তাঁর দলের রাজনৈতিক অবস্থান সকলের কাছে খোলসা হয়ে যাক । সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে মমতা প্রকাশ্যে যেই বাচনভঙ্গি সহযোগে অনীহা প্রকাশ করেছেন,তারপরেও কোন লজ্জায় তৃণমূলের অপেক্ষায় হাতে গোলাপ নিয়ে বসে থাকবে কংগ্রেস !
বিশেষ প্রতিবেদন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি গেলেন । মোদীর সঙ্গে লম্বা বৈঠক করলেন । এড়িয়ে গেলেন সোনিয়া-রাহুলকে । দিল্লিতে মমতার হাত থেকে পতাকা নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন কীর্তি আজাদ সহ আরও কয়েকজন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন । বৃহস্পতিবারই মেঘালয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা সহ বারো বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন । কংগ্রেসের বিধায়ক ১৮ থেকে কমে হল ছয় । মেঘালয় বিধানসভায় এখন তৃণমূলই প্রধান বিরোধী দল । দেশের রাজধানীতে এসেও তৃণমূল সুপ্রিমো কেন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করলেন না ? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের রীতিমতো ঝাঁঝালো উত্তর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেছেন , “প্রত্যেকবার দিল্লিতে এলেই সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে হবে নাকি? এটা কি বাধ্যতামূলক ? সংবিধানে এমন লেখা আছে নাকি ? ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে হয় জাতীয় পর্যায়ে নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনার উপর আর কোনও ধোঁয়াশা রাখতে চান না । তিনি ঠিক কী চাইছেন এটা নিয়ে দু’মাস আগেও রাজনৈতিক মহলের স্পষ্ট কোনও ধারণা ছিল না। কিন্তু নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে আর কোনও অনুমানের অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।
কিছুদিন আগেও মনে হচ্ছিল কংগ্রেসকে তাচ্ছিল্য করে বিজেপি বিরোধী জোটে বড় অংশীদারিত্ব চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখন এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, শুধু অবজ্ঞা নয় কংগ্রেসের দ্রুত ধ্বংসও চাইছেন তিনি। প্রথমে তাঁর পারিষদদের দিয়ে কংগ্রেসকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করালেন মমতা। তারপর নিজের ভাইপোকে দিয়ে রাহুল গান্ধীকে দুয়ো দিলেন । অতঃপর আসরে নামালেন প্রশান্ত কিশোরকে । গোয়ায় গিয়ে পিকে বললেন,” চব্বিশে মোদীকে মসনদ থেকে সরানোর দিবাস্বপ্ন দেখছেন রাহুল । ব্যাপারটা রাহুলের জন্য মোটেই অত সোজা নয় । ” শুধু মুখে বলা নয় । রাহুল গান্ধীর কাজটা কঠিন করার যাবতীয় কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেসকে ভাঙার ব্যাপারে মমতার আত্মবিশ্বাস এই মুহুর্তে এতটাই তুঙ্গে যে, তিনি আর সৌজন্যেরও ধার ধারছেন না। সোনিয়া-রাহুল প্রসঙ্গ উঠলেই চোখা চোখা জবাব দিচ্ছেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/11/IMG_20211125_180722_186-1.jpg)
গোয়াই হোক আর অসম কিম্বা মেঘালয়- তৃণমূল ঘর ভাঙছে কংগ্রেসের। শেষ পর্যন্ত মমতা কংগ্রেসের কতটা ক্ষতি করতে পারবেন , তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু মমতা যে কংগ্রেসের ভাল চান না এটা বুঝতে কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের ভাল চান না। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি । আর বিজেপি কী চায় ? বিজেপি শুধু কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরতেই চায় না বিজেপির আরও একটা দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত লক্ষ্য আছে । বিজেপি চায় কংগ্রেস মুক্ত ভারত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে ভেঙে ভেঙে দুর্বল করে দিলে তাঁদের কঠিন কাজটাই যে সহজ হয়ে যায় এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় সংঘ পরিবারের পাকা মাথাদের । কাজেই বাংলার বাইরে রাজ্যে রাজ্যে ঘাসফুল বিকশিত হতে থাকলে মোদী-শাহের মুখে দু’পাটি দন্তই বিকশিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তৃণমূলের দ্বারা কংগ্রেসে এক-একটি ভাঙনের পর কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব আগের থেকে আরও একটু করে বেড়ে যাচ্ছে। মঙ্গল-বুধবার দিল্লিতে এবং বৃহস্পতিবার শিলংয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো যা ঘটালেন তারপরেও মমতার ব্যাপারে সোনিয়া-রাহুলের আশাভঙ্গ হবে না অতি বড় আশাবাদীও এমন প্রত্যাশা করবেন বলে মনে হয় না। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে মমতা প্রকাশ্যে যেই বাচনভঙ্গি সহযোগে অনীহা প্রকাশ করেছেন,তারপরেও কোন লজ্জায় তৃণমূলের অপেক্ষায় হাতে গোলাপ নিয়ে বসে থাকবে কংগ্রেস!
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/11/IMG_20211125_184527_436.jpg)
প্রধানমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অতি স্বাভাবিক একটা প্রশাসনিক বিষয় ।বুধবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিকট অতীতে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এড়িয়ে গেছেন মমতা স্রেফ রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে। আজকে যখন মোদী-মমতা একান্তে মুখোমুখি বসেছেন, বিরোধীরা ছাড়বে কেন। তার উপর শিল্প সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে চিফগেস্ট হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আমন্ত্রণ নরেন্দ্র মোদী স্বীকার করেছেন বলে বড় মুখ করে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার নিজের রাজ্যে বিরোধীরা বিশেষত বাম-কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলছে, মোদীর সঙ্গে সেটিং করে এলেন দিদি। তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপির দালাল বলে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ” দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত ভাইপো ও দলের নেতাদের সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচাতেই দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ম্যানেজ করে এলেন মমতা। ” কংগ্রেস ও বামেদের কটাক্ষের জবাব দিতে দেরি করে নি তৃণমূল। হয়তো মমতা নিজেও চান , কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের চাপান-উতর আরও জমে উঠুক । কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতি দ্রুত পয়েন্ট অব নো রিটার্নের জায়গায় পৌঁছে গেলে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস নিধন অভিযানে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারবেন তিনি।
Photo Credits – PTI ( feature ) ,Twitter and Facebook page of INC.
You can also read this content in Hindi.
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/11/IMG-20211108-WA0000-1024x708.jpg)