রাজনৈতিক নেতাদের অভিধানে চক্ষুলজ্জা বলে কোনও শব্দ নেই। গতকাল ইভিএম খারাপ ছিল। আজ ভাল। আগামীকাল যে আবার খারাপ হবে না,এমন গ্যারান্টি স্বয়ং ঈশ্বরের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়।
বিশেষ প্রতিবেদন : ২০২১ এর দোসরা মের পর ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সবথেকে বড় প্রাপ্তি মনে হয় ইভিএম নিয়ে অভিযোগ মুক্তি । ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রয়োগ ২০০১ থেকেই পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২০০৯ এর আগে পর্যন্ত ইভিএম মেশিন নিয়ে বেশ আপত্তি ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নয়ের লোকসভা নির্বাচনে বড়সড় সাফল্য লাভের পর ইভিএম নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি । এগারোর বিধানসভা নির্বাচনে ইভিএমের ভোটেই তৃণমূলের বিধ্বংসী জয়লাভ । জাতীয় পর্যায়ে ২০১৪র আগে পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের তেমন কোনও আপত্তি ছিল না। এরপর থেকেই হঠাৎ করে ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠে বিরোধীরা । এই দলে কংগ্রেস , বাম এবং বিজেপি বিরোধী অনেক আঞ্চলিক দল ছিল। এমনকি নবীনতম আম আদমি পার্টি, যারা কিনা দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে পর পর তিনবার চমকপ্রদ জয় হাসিল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারাও ইভিএম বিরোধিতার কোরাসে সামিল হয় । ২০১৬ পর্যন্ত সঙ্গত কারণেই ইভিএম নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করে নি তৃণমূল । উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে ধাক্কা খেতেই ইভিএম ফের চোখের বালি হয়ে ওঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ।
গতবছর পর্যন্ত ইভিএম তুলে ব্যালটে ফেরার দাবিতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল বিরোধীরা। ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব – এই অভিযোগে বারে বারে কমিশনের দুয়ারে ধর্না দেন বিরোধী নেতারা । শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ডেকে এনে ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেয় নির্বাচন কমিশন। বলা বাহুল্য কমিশনের সামনে ইভিএমের কোনও খুঁত খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন বিরোধী নেতারা । কিন্তু তাতেও ভবি ভোলে নি । প্রাক্তন আমলা জহর সরকার সহ একপাল বিদ্বজ্জনও ইভিএমের বিরোধিতায় নেমে পড়েন । একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিয়ে নো ব্যালট নো ভোটের দাবিতে রীতিমতো আন্দোলনে নেমে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যাই হোক ভিভি প্যাট যুক্ত ইভিএমের ভোটে তৃণমূলের জয়জয়াকারের পর ইভিএম নিয়ে আর একটি শব্দও ব্যয় করেন নি তৃণমূল সুপ্রিমো ।
আগামী ডিসেম্বরে কলকাতা ও হাওড়া পুরসভায় ভোট । এই ভোট পরিচালনা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গত বছরের মে মাসে রাজ্য জুড়ে পুরভোট হওয়ার কথা ছিল । কোভিডের কারণে সেই ভোট বাতিল হয়ে যায়। দুই হাজার বিশেও যেই হেতু ইভিএম হ্যাক করা যেতো তাই সেই বছরের পুরভোটে সাবেক কালের ব্যালট বক্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার । রাজ্য নির্বাচন কমিশন যেই হেতু রাজ্য সরকারের বশংবদ সেই হেতু পত্রপাঠ সরকারের পরামর্শ মেনে ব্যালট পেপারেই ভোট করাতে রাজি হয়ে যায় তারা । একুশের দোসরা মের পর থেকে তো ইভিএম আর হ্যাক করা যাচ্ছে না । ইভিএমের নির্বাচনেই শাসকদল ৮৭ শতাংশ ভোটে পেয়ে বিজয়ী হচ্ছেন। আইনি জট কাটিয়ে ডিসেম্বরে দুই পুরসভায় আদৌ ভোট হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না । কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে । এই ভোট ইভিএমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। রাজ্য সরকারের কেনা ইভিএমে ভোট নেবে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমের সঙ্গে ভিভি প্যাটও থাকছে না । কারণ ইভিএম গুলি পুরোনো এম-১ ও এম-২ মডেলের । এই দুই মডেলের সঙ্গে ভিভি প্যাট খাপ খায় না। বিধানসভা নির্বাচনে একশো শতাংশ ভিভি প্যাট গণনার দাবি তুলেছিল রাজ্যের শাসকদল । শেষ পর্যন্ত ইভিএম দোষমুক্ত হওয়ায় ইলেকশন কমিশন অব ইন্ডিয়ার একটা বিড়ম্বনা কমল আশা করা যায়। অবশ্য রাজনৈতিক দল গুলির অভিধানে চক্ষুলজ্জা বলে কোনও শব্দ নেই। গতকাল ইভিএম খারাপ ছিল। আজকে ভাল । আগামীকাল যে আবার খারাপ হবে না , এমন কোনও গ্যারান্টি স্বয়ং ঈশ্বরের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয় ।
Photo Credits – ECI