আওয়ামি লিগ সরকারের আমলেও এমনভাবে অসহায়ের মতো মার খেতে হতে পারে ! এই ট্রমাই কাটিয়ে উঠতে পারছে না বহু হিন্দু পরিবার । সাম্প্রতিকতম এই হামলা কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রমণকে আরও গতিশীল করে তুলবে ?
বিশেষ প্রতিবেদন : প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আক্রমণ মোটের উপর বন্ধ হলেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় আবার কবে ভয়ভীতি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তা কেউ বলতে পারছে না। সংখ্যালঘুরা আওয়ামি লিগকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করলেও আওয়ামি জামানায় সংখ্যালঘুরা আদৌ কতটা নিরাপদে থাকে , এই নিয়ে বাংলাদেশের সমাজে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তারপরেও সংখ্যালঘুদের রক্ষায় শেখ হাসিনার আন্তরিকতা নিয়ে এতদিন খুব একটা প্রশ্ন ওঠে নাই । কিন্তু মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লা দিয়ে শুরু হয়ে নোয়াখালি, চাঁদপুর , চট্টগ্রাম , কিশোরগঞ্জ , কক্সবাজার, গাজীপুর , রাজধানী ঢাকা এবং রংপুর জেলার পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় যে একতরফা সহিংসতা দলবদ্ধভাবে হিন্দুদের উপর সংগঠিত হল , তারপর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেও আর নিরাপদ বোধ করছেন না ভীত-সন্ত্রস্ত সংখ্যালঘুরা ।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/10/FB_IMG_1634649778290-1.jpg)
দুর্গাপুজোর আগে দিয়ে ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয় । রাতের অন্ধকারে গ্রামেগঞ্জের ছোট মন্দিরে প্রতিমা ভেঙে দেওয়াকে আর ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা । দুর্গাপুজোকে নির্বিঘ্নে পার করে দেওয়াটা বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছে বরাবরই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এইবারও পুজোর আগে দিয়ে হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে পুলিশ। বড় বড় মন্ডপ গুলির সামনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও চোখে পড়েছে । কিন্তু তারপরেও উত্তেজিত জনতা যখন মন্ডপ গুলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন ধারেকাছে পুলিশের ছায়াও দেখতে পায় নি অসহায় সংখ্যালঘুরা । বিশেষ করে মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লা শহর জুড়ে জনতা যখন মন্ডপে মন্ডপে তান্ডব চালাচ্ছিল পুলিশের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের । মন্ডপে প্রতিমার সামনে কোরান পাওয়াকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিক প্ররোচনার জেরে কুমিল্লায় যে ব্যাপক গোলমাল হয়েছিল , তা সামাল দিতে প্রশাসন প্রস্তুত ছিল না , তাও না হয় মানা গেল । কিন্তু পরের চার-পাঁচদিন নোয়াখালীর চৌমুহনী সহ অন্যত্র যে তান্ডবের সামনে সংখ্যালঘুরা অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করল তা সামাল দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হল কেন ?
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/10/FB_IMG_1634629151025.jpg)
কুমিল্লায় নানুয়ার দিঘির পাড়ের পুজোয় হনুমানের মূর্তির সামনে যে কোরআন রেখেছিল , বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইকবাল হোসেন নামে সেই যুবককে শনাক্ত করেছেন তদন্তকারীরা । ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন বলে একটা আওয়াজ উঠেছে । কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন ইকবালকে দিয়ে কে বা কারা এত বড় জঘন্য কাজটা করাল তা জানতে চাইছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা । ঘটনার পরিকল্পনায় এক-দু’জন ধর্মান্ধ নাকি একটি বড় সংগঠিত চক্র রয়েছে তা জানা দরকার। মন্ডপ ভাঙচুর , প্রতিমার পবিত্রতা নষ্ট থেকে মঠ-মন্দির তছনছ , সন্ন্যাসী হত্যা , দশবছরের শিশুকন্যার খুন-ধর্ষণ থেকে গোটা একটা গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া – একুশের পুজোকে ঘিরে হাসিনা জামানায় সবই দেখা হয়ে গেল হিন্দুদের। এত কিছু চোখের সামনে দেখার পর স্বাভাবিক ভাবেই মুখের হাজার আশ্বাসেও হিন্দুদের ভয় সহজে যাওয়ার নয় ।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/10/FB_IMG_1634904395250.jpg)
বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু সমাজের একটা বড় অংশ সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে পথে নেমেছে সত্য । পুলিশের ধরপাকড়ও সন্তোষজনক । কিন্তু বিদ্বেষের যে আগুন ছাইচাপা পড়ে আছে , তাকে ভয় পাচ্ছে হিন্দুরা । রাত নামলেই বহু
সংখ্যালঘু পল্লীতে নেমে আসছে আতঙ্ক । পুলিশ এখনও পাহারায় আছে । কিন্তু সরলে আবার হামলা হবে না তো ? এই আশঙ্কা পীরগঞ্জের জেলেপাড়া সহ অন্যত্র । বাংলাদেশের হিন্দু বিবাহিত নারীদের শাঁখা-সিঁদুর পরে বাইরে বেরোনোর অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয় না । সামাজিক পরিসরে অনেক সময় হিন্দু পরিচয়টাই অস্বস্তিকর । স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই যখন এই অবস্থা তখন সংখ্যালঘুদের বর্তমান অবস্থাটা সহজেই অনুমেয় । বাবরি মসজিদ ভাঙার পর বিএনপি-জামাত জামানায় একাধিক আক্রমণের পর বাংলাদেশের হিন্দুদের আস্থায় বড় রকমের চিড় ধরেছিল । দীর্ঘদিন পর আবার উপর্যুপরি হামলার শিকার হল সংখ্যালঘুরা । তাও আওয়ামি লিগের আমলে । আওয়ামি লিগ সরকারের আমলেও এমনভাবে অসহায়ের মতো মার খেতে হতে পারে – এই ট্রমাটাই কাটিয়ে উঠতে পারছে না বহু হিন্দু পরিবার । সাম্প্রতিকতম এই হামলা কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের নিষ্ক্রমণকে আরও গতিশীল করে তুলবে ? এখন এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠেছে সেই দেশের সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে ।
ছবি- বিভিন্ন সূত্র মারফৎ প্রাপ্ত ।
মণ্ডপের গুলির, ছাড়খার এগুলো সংশোধন করে নিন।
ধন্যবাদ । সংশোধন করা হবে ।