আনন্দের পুজো আতঙ্কে পরিণত বাংলাদেশে ! সরকারের আশ্বাসেও শঙ্কা কাটছে না সংখ্যালঘুদের
বাংলাদেশ ডেস্ক : মহাষ্টমীর সকালে কুমিল্লায় একের পর এক মন্ডপে হামলার ঘটনার জেরে পুজোর আনন্দ আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে । পুজোমন্ডপে হামলার ঘটনা আর একজায়গাতেই সীমাবদ্ধ নেই। গত ২৪ ঘন্টায় চাঁদপুর , কক্সবাজার , মৌলভীবাজার , চট্টগ্রাম এমনকি রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন গাজিপুরেও একাধিক মন্ডপে ভাঙচুর চালিয়েছে সংঘবদ্ধ জনতা । চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে রাধাগোবিন্দ জিউর একটি মন্দিরে হামলার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে । কক্সবাজার জেলার কাছারিমুড়া , শীলপাড়া ও মগনামা এলাকায় পুজো মন্ডপে হামলার পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরেও আক্রমণ চালানো হয় । পেকুয়া সদরের বিশ্বাস পাড়ায় কেন্দ্রীয় পুজোমন্ডপ পর্যন্ত হামলার হাত থেকে রক্ষা পায় নি। অবস্থা সামাল দিতে বাইশ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
পুজোমন্ডপে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে অবমাননা করা হয়েছে , এই অভিযোগে মহাষ্টমীর পুজো শুরু হওয়ার আগেই কুমিল্লার নানুয়াদিঘি এলাকার একটি পুজোমন্ডপে হামলা চালায় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর একটি অংশ । ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে উত্তেজনা ছড়ানো হয় । এরপর উন্মত্ত জনতা শহরের একের পর এক মন্ডপের দিকে অগ্রসর হয় । বহু তোরণ ফেলে দেওয়া হয় । কয়েকটি মন্ডপের ভেতরে ঢুকেও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা । দুর্গাপ্রতিমা মন্ডপ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জলে ফেলে দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটে । দুপুরের পর কুমিল্লা শহরে বিজিবি নামায় প্রশাসন ।
কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পুজোমন্ডপ এবং মন্দিরে হামলা , ভাঙচুর ও পুজো পন্ড করার পেছনে একটি মহলের সুপরিকল্পিত উস্কানি আছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সরকার। কুমিল্লায় ভিডিও পোস্ট করে গন্ডগোলে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ফয়েজ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মন্ডপে-মন্দিরে হামলা , ভাঙচুর , সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে মারধর করার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুজোমন্ডপে হামলার ঘটনার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। কুমিল্লার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। ঘটনায় জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস দেন আসাদুজ্জামান খান। যদিও কুমিল্লা সহ একাধিক জায়গায় মন্ডপে মন্ডপে হামলা চালিয়ে পুজো ভন্ডুল করে দেওয়ার পর সরকারের আশ্বাসের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী । রাজধানী ঢাকা সহ সর্বত্র ম্লান হয়ে গেছে পুজোর আনন্দ। বহু জায়গায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতিবাদে দেশ জুড়ে পুজো বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি তুলেছে সংখ্যালঘুদের কয়েকটি সংগঠন।
ছবি- একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত।