৩২ বছর আগে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস যেই জায়গায় ছিল এখন সেই জায়গাটা নিয়েছে বিজেপি। বিরোধীরা জোট বাঁধার আগেই ক্যাপ্টেনের ক্যাপ কার মাথায় উঠবে তাই নিয়ে জটে। যুদ্ধে নামার আগেই শত্রু শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই লাভ পদ্ম ব্রিগেডের।
পলিটিক্যাল ডেস্ক : পর পর দশ বছর দিল্লি দখলে রাখার পর তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসা কতটা কঠিন ভারতের রাজনীতির ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে । নেহেরু জামানার গল্প বাদ দিন । ইন্দিরাও তৃতীয় বারের জন্য মসনদে ফেরার সুযোগ পান নি । চব্বিশে মোদী কি অসাধ্য সাধন করতে পারবেন ? বিজেপির লোকেরা বলে , মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় । চব্বিশে মোদী আদৌ বিজয় মুমকিন করতে পারবেন কিনা , করলেও কীভাবে তা পরের কথা । কিন্তু একটা বিষয় পরিস্কার, জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর সমকক্ষ এখনও কাউকে চোখে পড়ছে না । না বিজেপির ভেতরে না বাইরে । জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এবং কৃষি আইন সহ একাধিক ইস্যুতে মোদীর জনপ্রিয়তা কমেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরেও জনপ্রিয়তার দৌঁড়ে মোদীর ধারেকাছে নেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা । সব থেকে বড় কথা নিজের পড়তি বাজার কখন , কোন দিক দিয়ে চাগিয়ে নেবেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী , তা কেউ বলতে পারে না।
মোদী যেমন জাতীয় রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী তেমনি বিজেপিও এমন একটি জায়গায় , বত্রিশ বছর আগে যা ছিল কংগ্রেসের। ১৯৮৯ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একদিকে ছিল কংগ্রেস উল্টোদিকে সমস্ত বিরোধীরা । ভোটে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওয়ান টু ওয়ান ফাইট করতে হলে এক ছাতার তলায় আসতে হত বিভিন্ন রঙের বিরোধী দল গুলিকে । ৭৭ এ ইন্দিরা এবং ৮৯ এ রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল বিরোধীরা । সাতাত্তরে এই কাজটি করেছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ ঊননব্বুইয়ে ভিপি সিং । এখন কংগ্রেসের জায়গা নিয়েছে বিজেপি । জাতীয় রাজনীতিতে একদিকে বিজেপি তো অন্যদিকে বিরোধীরা সবাই । কংগ্রেস মুক্ত ভারত বিজেপির একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য । কারণ বিজেপি জানে কংগ্রেস যত ক্ষয়িষ্ণু হবে , জাতীয় পর্যায়ে ততই বিস্তৃতি ঘটবে পদ্মের ।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/09/IMG_20210927_132136_905.jpg)
কংগ্রেসের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে আম আদমি পার্টি , তৃণমূল , সমাজবাদী পার্টি , ওয়াই এস আর কংগ্রেস ও টিএসআরের মতো আঞ্চলিক দল গুলি । আঞ্চলিক দল গুলিকে নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই সংঘ পরিবারের । চব্বিশ এখনও দূরে । বিরোধীরা বলছে মহাজোট তৈরী করে মোদীর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তারা । কিন্তু মহাজোটের অবস্থা দেখুন । মহাজোটের মহানায়ক কে হবে এই নিয়ে কাজিয়া শুরু হয়ে গেছে । শুরুটা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার হৃদয়ে কী আছে কেউ জানে না । কিন্তু বাংলায় তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল এমন হাবভাব দেখাচ্ছে যেন মোদীর সঙ্গে পাঙ্গা যদি কেউ নিতে পারেন তবে তা একমাত্র মমতা। মমতাকে জোটের মুখ বানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল । অথচ জোট এখনও মাতৃগর্ভে । মোদীর বিরুদ্ধে কোনও মহাজোট তৈরি হলে জোটের বড়দল হওয়ার কথা কংগ্রেসের । হাজার দুর্বলতার পরেও কংগ্রেস এখনও জাতীয় দল , তৃণমূল নেহাতই আঞ্চলিক পার্টি । সেই হিসেবে জোটের ভেতরে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার রাহুল কিম্বা প্রিয়াঙ্কা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ করে একই দাবি তুললে কংগ্রেস তা মানবে কেন ?
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2021/09/LEAD_10_76621_300x172-m.jpg)
তৃণমূল এই রাজ্যে , সেই রাজ্যে কংগ্রেসের ঘর ভেঙে বড় হতে চাইছে। এতে কংগ্রেস আর তৃণমূলের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত যেই জায়গায় পৌঁছাবে তাতে মহাজোট আঁতুড়ঘরেই মারা পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । এইসব দেখে দিল্লির দীনদয়াল ভবনে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কা মহল । যুদ্ধের আগেই শত্রু শিবির ছত্রভঙ্গ হতে দেখলে কাদের না ভাল লাগে । মাথা ঠিক করতে গিয়েই জোটে জট লেগে যেতে পারে । বিজেপি চায়ও তাই । তৃণমূল খুব হম্বিতম্বি শুরু করেছে । কিন্তু তা বিজেপির জন্য ভয় নয় বিনোদনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে । মমতা , রাহুল , প্রিয়াঙ্কা এবং তালিকায় থাকা বাকিদের জনপ্রিয়তার যোগফল এখনও মোদীকে ছাপিয়ে যেতে পারে নি । বিজেপির জন্য এটা একটা বড় স্বস্তির জায়গা ।
Picture Credit – Official FB page of BJP.