আফগানিস্তানে ক্রমেই কোনঠাসা সরকারি বাহিনী, তালিবানের হাতে কাবুলের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা - nagariknewz.com

আফগানিস্তানে ক্রমেই কোনঠাসা সরকারি বাহিনী, তালিবানের হাতে কাবুলের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা


কূটনীতিক ও সামরিক – দুই দিক থেকেই আফগানিস্তানে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের মনে আর কোনও সংশয় নেই । আফগানিস্তানে জিতছে বর্বর তালিবান। তালি বাজাচ্ছে কে ? চিন আর পাকিস্তান !

আফগানিস্তান যে ফের একবার তালিবানের হাতেই যাচ্ছে , এ নিয়ে আর কোনও সংশয় নেই আন্তর্জাতিক মহলের । পেন্টাগনের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও এক‌ই পূর্বাভাস । আগষ্টের মধ্যেই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলবে বাইডেন প্রশাসন । আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান , যুদ্ধে যেই গতিতে জয়লাভ করে চলেছে তালিবান তাতে কাবুল দখল করতে তাদের বড় জোর আর তিনমাস লাগবে । বিদায়বেলায় আফগান সরকারের হয়ে মার্কিন এফ সিক্সটিন বিমান তালিবান ঘাঁটি লক্ষ্য করে মাঝেমধ্যে বোমা ফেলছে‌ বটে কিন্তু তা নিয়মরক্ষা ছাড়া আর কিছু নয় । ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন । সেনা সরিয়ে নিলে আফগানিস্তান যে তালিবানের দখলে যেতে পারে , এই অনুমান পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ছিল । ওয়াশিংটন প্রশাসনের কাছে এখন অলাভজনক আফগানিস্তানের বোঝা ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলাটাই মুখ্য আফগানিস্তান কার দখলে গেল না গেল তা নিয়ে তাদের আর কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না ।

হীরাট শহরের বাইরে তালিবান প্রতিরোধে রাস্তায় প্রাক্তন মুজাহিদিনরা ।

বৃহস্পতিবার সকালের আলো ফোটার আগেই আফগানিস্তানের কৌশলগতভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর গজনীর পতন ঘটেছে তালিবানদের হাতে । রাজধানী কাবুল থেকে গজনীর দূরত্ব মাত্র ১৫০ কিলোমিটার । গত এক সপ্তাহে এ নিয়ে আফগানিস্তানের দশটি প্রাদেশিক রাজধানী কব্জা করে নিল তালিবান । কান্দাহারকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এখন তালিবানের দবদবা । কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কান্দাহার-কাবুল হাইওয়ের উপরেও নিয়ন্ত্রণ হারানোর পথে আফগান সরকারের সেনাবাহিনী । উত্তর আফগানিস্তানের সবথেকে বড় শহর মাজার এ শরিফ বরাবর‌ই তালিবান বিরোধী গোষ্ঠীর ঘাঁটি । চারপাশ দিয়ে ঘিরে মাজার এ শরিফকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাই এখন লক্ষ্য তালিবান যোদ্ধাদের । এই কাজে তারা ইতিমধ্যে‌ই সফল বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে । আফগান সেনাবাহিনীর দশা ছন্নছাড়া । গ্রামাঞ্চলে তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই । শহরগুলিতে অবস্থান নিয়েছে সরকারি ফৌজ । এবং রাস্তা গুলো তালিবানদের দখলে চলে আসায় রাজধানী কাবুল থেকে সরকারি সেনারা বিচ্ছিন্ন । স্থলপথে তাদের কাছে রসদ পৌঁছে দেওয়া বা সেখানে নতুন করে বাহিনী মোতায়েনের কোনও সুযোগ নেই ।

একটি শহর দখল করার পর তালিবান মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা ।

দক্ষিণে কান্দাহার , লস্করগড় থেকে পশ্চিমে হীরাট – সবখানে তুমুল যুদ্ধ চলছে । বুধবার তাদের যোদ্ধারা কান্দাহার কারাগার দখল করে সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দিয়েছে বলে তালিবান কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে । ১৯৯৬ সালে এই কান্দাহার থেকেই তালিবানদের বিজয় শুরু হয়েছিল । কান্দাহারে জেল দখলের জেরে চলমান যুদ্ধে তালিবানদের মনোবল তুঙ্গে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান । তালিবানদের বিজয়ের সাথে সাথে বর্বরতার যে খবর গুলি সংবাদমাধ্যমের কানে এসে পৌছাচ্ছে তা ভয়াবহ । তালিবানদের হাতে‌ পতনের আগেই শহর ছেড়ে পালাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা । পালাতে গিয়ে তালিবানদের হাতে পড়লে নিস্তার নেই । বিশেষ করে সরকারি আধিকারিক , পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের রেহাই দিচ্ছে না । ধরে এনে রাস্তার ওপরেই গুলি করে মারছে । যুবক থেকে বৃদ্ধ – ছাড় নেই কার‌ও । বাড়ির পুরুষ সদস্যদের জোর জবরদস্তি বাহিনীতে ঢোকানো হচ্ছে । মেয়ে হলে জোর করে নিকাহ করে নিচ্ছে তালিবানের যোদ্ধারা । ১৪ বছরের কিশোরী থেকে পৌঢ়া – তালিবানের নজরে পড়লে আর রক্ষে থাকছে না । যৌনদাসী হতে অস্বীকার করলে কোতল করতে সময় লাগছে না । এইসব‌ই তালিবানদের পুরোনো কৌশল । আফগানিস্তান পুনরায় দখলে আসার পথে আবার কৌশল গুলি ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে মাত্র ।

চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান।

গত একুশ বছর আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থেকেও কাবুলে একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী সাংবিধানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ আমেরিকা ।‌ আমেরিকাকে বলা হয় বিশ্বের সবথেকে বড় মারাত্মক সামরিক শক্তি । তারপরেও আফগান মিলিটারিকে একটি শক্তিশালী পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ আমেরিকা । কূটনীতিক ও সামরিক – দুই দিক থেকেই আফগানিস্তানে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের মনে আর কোনও সংশয় নেই । আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়োল্লাস যত তীব্রতর হচ্ছে খুশির পারদ তত‌ই চড়ছে ইসলামাবাদে । পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে তালিবানের অগ্রগতির কথা প্রচার করা হচ্ছে । আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে ভারত , চিন এবং রাশিয়াও । এরা প্রত্যেকেই আফগানিস্তানের প্রতিবেশী । চিন এবং পাকিস্তান চাইছে আফগানিস্তান তালিবানের হাতে যাক । যাহা তালিবান তাহাই পাকিস্তান । তালিবান এখন চাইছে চিনের মদত । ইতিমধ্যেই চিন সফর সেরে এসেছে তালিবানের একটি প্রতিনিধিদল । কট্টর সুন্নি ওয়াহাবি তালিবানের উইঘুরে মুসলমানদের উপর কমিউনিস্ট চিনের অত্যাচার নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই ।‌ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই নাস্তিক চিনকে পাশে পেতে মরীয়া তালিবানেরা । তালিবানদের সৌজন্যে পাকিস্তানের সহযোগিতায় আফগানিস্তান ভূখণ্ড কার্যত করতলগত হলে তার ভূরাজনৈতিক ফয়দা যে অসীম তা বুঝতে চিনের বিলম্ব হয় নি । শুক্রবার দোহায় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়া , চিন , পাকিস্তান ও ভারতের কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠক হ‌ওয়ার কথা । আফগানিস্তান নিয়ে চিন ও পাকিস্তান কী তাস খেলতে চাইছে তা ভারতের কাছে জলের মতো পরিস্কার ।

Photo Credit – Reuters and AFP .


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *