– উ ত্ত ম দে ব –
শ্বাসকষ্ট হলে খুব কষ্ট । শ্বাস খুব অমূল্য জিনিস । সংসারে যে বস্তু যত বেশি মূল্যবান তার কদর ততই কম মানুষের কাছে । যখন মানুষ তন্দুরস্ত থাকে তখন শ্বাস এলো না গেল তার খেয়াল রাখে না । কিন্তু যখন ফুসফুস বিদ্রোহ করে বসে। শ্বাসনালী সঙ্কুচিত হয়ে আসে । একটু দমের অভাবে চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় । তখন আকুপাকু করতে করতে নিঃশ্বাসের দাম বুঝি আমরা । নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নাই এটা সবাই আমরা জানি । কিন্তু বুঝেও বুঝি না । মহার্ঘ্য দ্রব্য ধরে রাখা খুব কঠিন । শ্বাস-প্রশ্বাসকে দেহের সঙ্গে ধরে রাখা সহজ ব্যাপার নয় । যদিও সময় থাকতে বিষয়টা বুঝে না সবজান্তা মানুষ ।
ছোটবেলায় প্রতিবেশী এক জ্যেঠুর হাঁপের জ্বালা স্বচক্ষে দেখা। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন হাঁপানি বা অ্যাজমা কী সাংঘাতিক রোগ। হাঁপানি রোগী গ্রীষ্ম-বর্ষা হেসেখেলে পার করে দিলেও ফাঁপরে পড়ে শীত এলে । তখনও নেবুলাইজার বা ইনহেলার জাতীয় কোনও চটজলদি রিলিভার বাজারে আসে নি। পৌষ-মাঘের বাঘ পালানো শীতের রাত গুলো জ্যেঠু জেগে পার করতেন হুউউম হুউউম শব্দে হাঁপাতে হাঁপাতে । সিওপিডি , অ্যাজমা , ক্রনিক ব্রংকাইটিস প্রভৃতি রোগে আক্রান্তদের শ্বাস নেওয়াটাই মাথা ব্যথার কারণ । কারও ফুসফুসের বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা যায় কমে । শ্বাসনালীর প্রবেশদ্বার সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় কারও আবার ফুসফুসে পর্যাপ্ত বায়ু ঢোকে না । বড় বড় শহর গুলোতে ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণের কারণে মানুষের মধ্যে সিওপিডি জাতীয় উপসর্গ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে । সিগারেট ফুঁকে ফুঁকেও অনেকে স্বীয় ফুসফুস দ্বয়ে সিওপিডিকে নিমন্ত্রণ দিয়ে ডেকে আনে ।
সেরে ওঠার পরেও কোভিড রোগীদের ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা । |
করোনার ভাইরাস নাক মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে শ্বাসনালী দিয়ে হড়কে শেষে ফুসফুসে হামলা চালায় । করোনা যখন প্রথম এল, তখন ধূর যা এও আবার একটা ব্যামো নাকি বলে তাচ্ছিল্য করেছিলাম আমরা । এখন ঘরে ঘরে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার । প্রাণপণে শ্বাস নিতে চাচ্ছে কোভিড রোগীরা । পারছে না । বাইরে থেকে অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে ।দেশে যত করোনা রোগী তত অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাপ্লাই নাই । উৎপাদনই নাই তো জোগান কোথা থেকে দেবে । সিলিন্ডারের দেদার কালোবাজারি চলছে । দুই হাজার বিশের আগে পর্যন্ত ঘরে একটা ক্লিনিকাল থার্মোমিটার থাকলেই চলত এখন অক্সিমিটার মাস্ট । শ্বাস মানেই তো অক্সিজেন ! অক্সিজেনকে তাই বলা হয় প্রাণবায়ু । আমরা মানুষ কখনও কি পৃথিবীকে প্রকৃতি প্রদত্ত একটা বিরাট অক্সিজেন সিলিন্ডার হিসেবে সত্যিই ভেবেছি ? ভাবি নি । ভাবার ভান করে করে দিন পার করে দিয়েছি সবাই । ভাবলে সিলিন্ডারটার এত খারাপ অবস্থা করতাম না আমরা ।
পৃথিবী নামক অক্সিজেন সিলিন্ডারটির যত্ন করি না আমরা ! |
ফুসফুস সুস্থ থাকার পরেও অ্যাংজাইটি বা ভয়-আতঙ্ক-উৎকন্ঠা থেকেও শ্বাসকষ্ট হয় অনেকের । এটাকে প্যানিক অ্যাটাকও বলেন চিকিৎসকেরা । নানা কারণে মানুষের প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে । এই করোনাকালে সতর্ক অবশ্যই থাকতে হবে তবে অযথা প্যানিক করে শ্বাসকষ্ট ডেকে না আনাই ভাল । শেষে আরও এক ধরণের শ্বাসকষ্ট নিয়ে না বললে কাহানি অধুরা থাকবে । ইহার নাম রাজনৈতিক শ্বাসকষ্ট বা পলিটিকাল সাফোকেশন । হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী-এমপি-এমএলএ’রা দৈবের বশে জেলে ঢুকলে আর রক্ষা নাই । জেল গেট পেরোতে না পেরোতেই তাঁরা বুকে চাপ এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন । নগর কলকাতায় এই ধরণের শ্বাসকষ্টের একমাত্র চিকিৎসাস্থল এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ড । আরও এক ধরণের শ্বাসকষ্ট পীড়া দেয় নেতাদের । পুরোনো দলের ভেতরে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে দম আটকে আসে তাঁদের । একটুখানি বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকেন নেতারা । এর একমাত্র ওষুধ পুরোনো দল ছেড়ে ভেতরে প্রচুর বিশুদ্ধ বাতাস বইছে এমন কোনও দলে যোগদান। পশ্চিমবঙ্গে দোসরা মের আগে পর্যন্ত পলিটিকাল সিওপিডির রোগী বেশি দেখা গেছে তৃণমূল কংগ্রেসে । তাঁদের আরোগ্য লাভের একমাত্র ক্লিনিক ছিল হেস্টিংসের বিজেপি দফতর । দোসরা মের পর থেকেই শ্বাসের রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে বিজেপির ঘরে। কালীঘাটের একটি মাত্র মেডিসিন শপ ছাড়া আর কোথাও এঁদের ওষুধ মিলছে না বলে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে ।
Picture Coutesy – Web MD, Science News , The Conversation.