শিলিগুড়ি , ১০ এপ্রিল,২০২১ : আগের তিন দফায় ভোট মোটের ওপর নির্বিঘ্নে উতরে গেলেও শনিবার চতুর্থ দফায় শনির নজর লাগল বাংলার নির্বাচনে । কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভা আসনে নির্বাচনী হিংসার বলি পাঁচটি প্রাণ । সকালে শীতলকুচির পাঠানটুলি গ্রামের শালবাড়ি এলাকার ২৮৫ নম্বর বুথে জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বছর আঠারোর যুবক আনন্দ বর্মণ । এই ঘটনায় বিজেপির অভিযোগের তির তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে । পরের ঘটনা আরও ভয়াবহ একই বিধানসভা কেন্দ্রের জোড়াপাটকি গ্রামের ১২৬ নম্বর বুথে সিআইএসএফ জওয়ানদের গুলিতে মারা যায় চার যুবক । নিহত চারজনের নাম হামিদুল হক , মনিরুল হক , হামিদুল হক ও আমজাদ হোসেন । ১২৬ নম্বর বুথে ভোট গ্রহণ স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন ।
মমতার প্ররোচনাতেই কোচবিহারে রক্তপাত : অভিযোগ মোদীর। |
জওয়ানদের ঘিরে ধরে গ্রামবাসীরা অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে জওয়ানেরা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে এই ঘটনা ঘটে বলে নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট দিয়েছেন রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে । যদিও নিহতদের নিজেদের সমর্থক বলে দাবি করে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । কেন্দ্রীয় বাহিনী বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়ে নিরীহদের খুন করেছে এই অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীতলকুচিতে হিংসাত্মক ঘটনার ঘটনার কিছুক্ষণ বাদেই শিলিগুড়িতে নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । শীতলকুচিতে পাঁচ মৃত্যুর জন্য সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন মোদী । মোদী বলেন, ‘ বিজেপির পক্ষে বিপুল জনসমর্থন দেখে দিদি ও তার গুন্ডারা ঘাবড়ে গিয়েছে । ‘ তিনি আরও বলেন , ‘ কোচবিহারে যে ঘটনা ঘটল তা খুবই দুঃখজনক । মানুষের মৃত্যুতে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি । মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল । ‘
শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি : এক আহতকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে । |
কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন জনসভায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এমনকি ঝাঁটা , হাতা এবং খুন্তি হাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ঘিরে ফেলতেও গ্রামের মেয়েদের বলেন তিনি । মমতা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ লিপ্ত হতে দলের কর্মী-সমর্থকদের প্ররোচিত করছেন – এই অভিযোগে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হন বিরোধীরা । কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মমতার মন্তব্যকে ভালো চোখে দেখে নি কমিশন । এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাবও চায় নির্বাচন কমিশন।স্বাভাবিক ভাবেই শীতলকুচির ঘটনার পর মমতার দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন বিরোধীরা । একই সুর শোনা গেল নরেন্দ্র মোদীর মুখেও । শীতলকুচির ঘটনায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে তীব্র ভর্ৎসনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন , ‘ একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দশবছর সরকার চালানোর পর জনসভায় দাঁড়িয়ে নিজের ছাপ্পাভোট গ্যাংকে শেখাচ্ছেন , কেমন করে নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘেরাও করে পেটাতে হয় আর কেমন করে বুথে হামলা চালাতে হয় । ‘ নিজের গদি চলে যাচ্ছে দেখেই মমতা এতটা নিচে নেমেছেন বলে কটাক্ষ করেন মোদী । মোদী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন , ‘ কিন্তু আমি দিদিকে , টিএমসির গুন্ডাদের সাফ সাফ বলে দিতে চাই যে, তাদের মস্তানি বাংলায় আর চলতে দেওয়া যাবে না । দিদি এই হিংসাত্মক প্ররোচনা , সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের আক্রমণ করার এই উস্কানি , নির্বাচন প্রক্রিয়া পন্ড করার এই ষড়যন্ত্র করে আপনি আপনার দশ বছরের কুকর্মকে জনগণের নজর থেকে আড়াল করতে পারবেন না । ‘ কোচবিহারের শীতলকুচিতে হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে কড়া পদক্ষেপ করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনও করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
শিলিগুড়িতে মোদীর সভা : জমায়েতের একাংশ । |
Photo Courtesy-ANI twitter & BJP official FB page.