নন্দীগ্রামে মমতার রাজনৈতিক পতন হবে - ব্রিগেড থেকে ইশারায় বোঝালেন মোদী - nagariknewz.com

নন্দীগ্রামে মমতার রাজনৈতিক পতন হবে – ব্রিগেড থেকে ইশারায় বোঝালেন মোদী


তৃণমূলের অপশাসনের পাঁকেই ফুটছে পদ্ম – মোদী 

সরকার  নয় বাংলায় পরিস্থিতির পরিবর্তন আনব – মোদী

বাংলার মানুষ কোমর বেঁধে বিজেপির পাশে – মোদী

নাগরিক নিউস ,৭ মার্চ,২০২১ : রবিবার উপচে পড়া ব্রিগেড থেকে বাংলায় আসল পরিবর্তনের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।‌ ব্রিগেডে ভিড়ের বহর দেখে আপ্লুত মোদী । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ কিছু লোকের তো মনে হবে আজকেই ২রা মে এসে গেছে । আজকে ব্রিগেডের মাঠে জনতার হুঙ্কার শোনার পর  বাংলায় পরিবর্তন নিয়ে ‌আর কোনও সন্দেহ থাকল না । ‘ ভাষণের শুরুতেই নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এত বিশাল মাপের সভা দেখি নি । হেলিকপ্টার থেকেই দেখছিলাম মাঠে আর জায়গা নেই । রাস্তা দিয়ে লোকের স্রোত চলছে । মনে হয় নি ওরা সভাস্থলে গিয়ে পৌঁছাতে পারবে । ‘ বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে বিশাল জনসমুদায় ব্রিগেডের মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁদের প্রণাম জানান‌ প্রধানমন্ত্রী । 

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জয় নিয়ে  তাঁর মনে‌ যে আর কোনও সংশয় নেই ভাষণের ছত্রে ছত্রে তা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী । তবে নিছক সরকার পরিবর্তন নয় বাংলার পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন চান নরেন্দ্র মোদী। মোদীর ভাষায় , ‘ বাংলা চায় উন্নতি । বাংলা চায় শান্তি । বাংলা চায় সোনার বাংলা । বাংলা চায় প্রগতিশীলতা । ‘ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমি বাংলার মানুষকে বিকাশ , বিনিয়োগ বৃদ্ধি , উদ্যোগ বৃদ্ধি , পুনর্নির্মাণ এবং সংস্কৃতি ও পরম্পরা রক্ষা করার আশ্বাস দিতে চাই । ‘ বাংলায় বিজেপির সরকার তৈরি হলে সরকার ২৪ ঘন্টাই মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন নরেন্দ্র মোদী । প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘ বাংলয় বিজেপির সরকার হলে আমরা প্রতি মুহুর্তে আপনাদের জন্য‌ই বাঁচব, আপনাদের সেবা করব। প্রতি মুহুর্তে কাজের মধ্যে দিয়েই আপনাদের মন জিতে নেবো আমরা । ‘ ব্রিগেড থেকে বাংলায় উচ্চশিক্ষা  নিয়ে‌ও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ বিজেপি রাজ্যে  ক্ষমতায় এলে জাতীয় শিক্ষা নীতি বাংলায় প্রণয়ণ করা হবে। বাংলা ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়ানো হবে। প্রান্তিক পড়ুয়ারা ইংরেজি না জানলেও ইঞ্জিনিয়ারিং,ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাবে । ‘ 

ব্রিগেডের সভায় জনতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন মোদী।

ব্রিগেডের সভা থেকে বাংলার অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন , ‘ বাংলার এই মাটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে । বাংলার মাটি ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। ভারতকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার জন্য বাংলার মহাপুরুষেরা আত্মত্যাগ করেছেন । ‘ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ বাংলা সেই সুপুত্রের জন্ম দিয়েছে যিনি দেশে এক বিধান , এক নিশান , এক প্রধানের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন ।‌’ 

বাংলার গৌরবকে জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য কংগ্রেস , বাম এবং তৃণমূলকে একযোগে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে আক্রমণ করেন মোদী । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ এই ব্রিগেডের মাঠে অনেক বড় বড় দেশভক্ত সভা করেছেন। আবার  বাংলার উন্নয়নকে স্তব্ধ করতে এই  ব্রিগেডেই সভা হয়েছে । যারা চব্বিশ ঘণ্টা হরতাল , অবরোধ দ্বারা বাংলার উন্নয়নকে রুদ্ধ করেছে তারাও এই ব্রিগেডকেই বেছে নিয়েছে । ‘ বাংলার মানুষ পরিবর্তনের আকাঙ্খায় তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনলেও তৃণমূল মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেন ‘ পরিবর্তনের জন্য বাংলার মানুষ মমতা দিদির ওপর বিশ্বাস করেছিল । কিন্তু দিদি ও তার ক্যাডাররা মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন । মানুষের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছেন । দিদি ও সাঙ্গপাঙ্গরা বাংলাকে অপমানিত করেছেন । ‘ 

ব্রিগেডের সভায় ভাষণ দিচ্ছেন মোদী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ বাংলায় এবারের নির্বাচনে একদিকে তৃণমূল আর বাম-কংগ্রেস জোট । অন্যদিকে এদের জুলুমের বিরুদ্ধে বাংলার জনতা কোমর বেঁধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘ ভাজপাকে আশীর্বাদ দিতে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসেছেন । সবার হৃদয়ে এক‌ই প্রত্যাশা আমাদের বাংলা বিকাশের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে । ‘ বাংলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, কলাকুশলী সকলেই বিজেপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখিয়ে মোদী বলেন, ‘ আজ বাংলার ছেলে মিঠুন চক্রবর্তীও রয়েছেন আমাদের সঙ্গে। ওঁর সঙ্ঘর্ষ এবং উত্থানভরা জীবনগাঁথা সকলের‌ই জানা। আজ পরিবর্তনের জন্য তিনিও সামিল হয়েছেন । ‘ ভারতমাতার আশীর্বাদে সোনার বাংলার এই সঙ্কল্প খুব শীঘ্রই সিদ্ধ হবে ‘ – প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মোদী ।

ব্রিগেডের সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । মোদী অভিযোগ করেন, ১০ বছর আগে দিদি হিসেবে  মমতাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন বাংলার মানুষ। কিন্তু মমতা শুধু এক জন ভাইপোর পিসি হয়ে গেলেন । কটাক্ষের সুরে  তিনি বলেন, ‘১০ বছর পর মানুষ জবাব চাইছেন। দিদি হিসেবে আপনাকে বেছে নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু আপনি নিজেকে শুধু ভাইপোর পিসি হিসেবেই সীমাবদ্ধ করে ফেললেন । ‘

তৃণমূলের শাসন দুর্নীতি , কাটমানি আর সিন্ডিকেটবাজিতে ভরে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নরেন্দ্র মোদী।রাজ্য সরকারের কমিশনবাজির ঠ্যালায় দমদম বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার উন্নয়নের কাজ পর্যন্ত থমকে আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মমতাকে খোঁচা দিয়ে মোদী বলেন , ‘কখনও আমাকে রাবণ, কখনও দৈত্য, কখনও গুন্ডা বলছেন দিদি। আমার ওপর  এত গুস্সা কেন দিদি? আপনার দল এবং আপনার সরকারের ছড়ানো পাঁকেই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। দিদি আপনি গণতন্ত্রের নামে বাংলায় লুঠতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, জাত-ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি করেছেন, তাই বাংলায় আজ পদ্ম ফুটছে। ‘ 

ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী হ‌ওয়া নিয়েও ভরা সভায় কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি প্রধানমন্ত্রী । মোদী বলেন, ‘কিছু দিন আগে দিদি স্কুটি সামলাচ্ছিলেন । সবাই ভয় পাচ্ছিলেন, দিদি পড়ে গিয়ে আঘাত না পান। ভাগ্যিস দিদি পড়ে যাননি। নইলে যে রাজ্যে স্কুটি তৈরি হয়েছে, সেই রাজ্যকেই শত্রু বানিয়ে বসতেন।  ভালোই হয়েছে আপনি পড়ে যাননি। কিন্তু ভবানীপুরের দিকে যেতে যেতে নন্দীগ্রামের দিকে ঘুরে গিয়েছে দিদি আপনার স্কুটি। আমি চাই না কেউ আঘাত পান। কিন্তু স্কুটি যখন নন্দীগ্রামেই গিয়ে পড়েছে, তখন আমরা আর কী করব । ‘ নন্দীগ্রামে মমতার রাজনৈতিক পতন আসন্ন – এটা বোঝাতেই মোদী স্কুটি থেকে পড়ার কথা বললেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। 

ব্রিগেড ময়দানে উপচে পড়া ভিড় ।

রবিবার ব্রিগেডের সভা থেকে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়েও কটাক্ষ করেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেন, ‘ তিন দশক ধরে বামপন্থীরা বলে এসেছে কংগ্রেসের কালো হাত ভেঙে দাও। গুড়িয়ে দাও ।  কালো‌ হাত এখন ফর্সা হয়ে গেল কীভাবে ? যে হাত বামপন্থীরা গুড়িয়ে দিতে চাইতেন আজ কীভাবে সেই হাত ধরতে চাইছেন ? ‘ ব্রিগেডে বিরাট ভিড় দেখে মোদী যেমন খুশি তেমনি ভোটের মুখে সসম্মানে ব্রিগেডের মেগা এক্সাম উতরে যাওয়ায় উৎফুল্ল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব‌ও । ব্রিগেডের সাফল্য দীর্ঘ ভোটযুদ্ধে গেরুয়া ব্রিগেডের সৈনিকদের জোশ  অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।

          ব্রিগেডের মঞ্চে প্রবেশ করছেন মোদী –



 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *