খড়্গপুর,২০ মার্চ,২০২১ : আগের নির্বাচন গুলিতে টিএমসি যা করত এবার তা হবে না । শনিবার খড়্গপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খড়্গপুরের বিএনআর ময়দানে আয়োজিত বিজেপির বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী বলে অভিযুক্ত করলেন নরেন্দ্র মোদী । নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ বাবা সাহেব আম্বেদকর রচিত সংবিধান দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ভোটদানের অমূল্য অধিকার দিয়েছে । কিন্তু বাংলায় মমতা দিদি মানুষের ভোটদানের অধিকার লুঠ করেছেন । ছিনিয়ে নিয়েছেন । ‘ নিজের অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে ২০১৮র পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মোদী । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ ২০১৮র পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিদি যেভাবে আপনাদের ভোটদানের অধিকার কেড়ে নিয়েছে গোটা দুনিয়া তা দেখেছে । ‘ প্রধানমন্ত্রী এরপরেই বলেন , ‘ আমি বাংলার জনগণকে আশ্বস্ত করছি , দিদিকে এবার গণতন্ত্রকে হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না । ‘ পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও সতর্ক করে দেন নরেন্দ্র মোদী । তিনি বলেন, ‘ পুলিশ ও প্রশাসনকেও মনে রাখতে হবে সংবিধান ও লোকতন্ত্রের মর্যাদার চেয়ে আর কিছু বড় হতে পারে না । ‘ এরপরেই বাংলা ভাষায় মোদী জনতার উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, ‘ আগের নির্বাচন গুলিতে টিএমসি যা করত । এবার তা হবে না। আপনারা আশ্বস্ত থাকুন । সবাই একসঙ্গে রুখে দাঁড়ান । নির্ভয়ে ভোট দিন। পশ্চিমবঙ্গের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর । ‘
সভায় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক উপহার দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ । |
২০১৮র পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্মৃতি এখনও গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে দুঃস্বপ্ন । বিধানসভা ভোটের ময়দানে প্রতিপক্ষ তৃণমূলকে মোক্ষম আঘাত হানতেই মোদী পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । পঞ্চায়েত ভোটে লাগামছাড়া সন্ত্রাসের ঘটনার পরেই গ্রাম বাংলায় তৃণমূলের ভিত আলগা হতে শুরু করে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা । পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে আজও জবাব দিতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব । তৃণমূলের শাসন জারি থাকলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হতেই থাকবে , এটা বোঝাতেই খড়্গপুরের সভায় নরেন্দ্র মোদী পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।
খড়্গপুরে মোদীর সভায় বিপুল জনসমাগম হয় । |
বাংলায় প্রথম দফার ভোটের বাকি আর মাত্র সাতদিন । ভোট প্রচারে দফায় দফায় বাংলা সফরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী । আর প্রত্যেক দফাতেই যেন আগের দফার চেয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথার ঝাঁঝ বাড়িয়ে চলেছেন মোদী । শনিবার খড়্গপুরের জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নির্মমতার পাঠশালা বলে কটাক্ষ করেন তিনি। মোদী বলেন , ‘ দিদির পাঠশালার সিলেবাস হচ্ছে তোলাবাজি , কাটমানি , সিন্ডিকেট । দিদির পাঠশালায় অরাজকতা আর উৎপীড়নের ট্রেনিং দেওয়া হয়। ‘
নরেন্দ্র মোদী বলেন , ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দিদির কাছে দশ বছরের হিসেব চাইছে । আর হিসেব চাইলেই হিসেব দেওয়ার বদলে দিদি মানুষের ওপর অত্যাচার করছেন ।’ মোদীর ভাষায় , ‘ আমফানের হিসেব চাও তো দিদির গুন্ডারা চলে আসে । রেশনের চাল চুরির হিসেব চাও তো দিদি জেলে ভরে দেন । কয়লা ঘোটালার জবাব চাও তো দিদি পুলিশ দিয়ে ডান্ডা মারেন । চাকরি নিয়ে জবাব চাও তো দিদির লোকেরা ঘর জ্বালিয়ে দেয় । ‘
স্বাধীনতার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের অধঃপতন চলছে বলে সভায় অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘ আমি বঙ্গবাসীকে বলতে চাই আপনারা ৭০ বছর ধরে অনেককেই অনেকবার সুযোগ দিয়েছেন । আমাদের পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ দিয়ে দেখুন । ৭০ বছরের বরবাদি পাঁচ বছরেই মিটিয়ে দেবো আমরা । ‘ মোদী বলেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সরকারে এলে কীভাবে আসল পরিবর্তন আনতে হয় তা দেখিয়ে দেবে ।
বিজেপির অস্তিত্বের সঙ্গে বাংলা জড়িয়ে আছে বলে একমাত্র বিজেপিই বাংলাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে সক্ষম – শনিবার খড়্গপুরের সভা থেকে এমন দাবিও করেন নরেন্দ্র মোদী । বিজেপিকে বাংলার ঘরের রাজনৈতিক দল বলেও দাবি করেন তিনি। মোদী বলেন, ‘ বাংলার প্রতি বিজেপি বিশেষভাবে ঋণী । বিজেপি যেই জনসংঘ থেকে উদ্ভুত সেই জনসংঘের জন্মদাতার নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । জন সংঘের জনক এই বাংলার সুসন্তান । যথার্থ অর্থেই তাই বিজেপিই হচ্ছে বাংলার একমাত্র নিজস্ব পার্টি । ‘ বিজেপির ডিএনএ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় , শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আচার , বিচার ও সংস্কার বহন করছে বলে দাবি করেন নরেন্দ্র মোদী ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহিরাগত তত্ত্বকে ভোঁতা করে দিতেই ‘ বাংলার ঘরের ছেলের পার্টি বিজেপি ‘ – এই রাজনৈতিক ন্যারেটিভ জনগণের সামনে নরেন্দ্র মোদী তুলে ধরছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।
খড়্গপুরের সভা থেকেও ডবল ইঞ্জিন সরকারের আওয়াজ তোলেন প্রধানমন্ত্রী । নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ দেশের যে যে রাজ্যে বিজেপির সরকার ক্ষমতায় সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে ডবল ইঞ্জিন সরকার জনতা জনার্দনের সেবা করছে । ‘ মোদী বলেন , ‘ গাড়ি গাড্ডায় পড়ে গেলে গাড়ি থেকে নেমে সবাই মিলে পেছন থেকে ঠেলতে হয় । ‘ তৃণমূলের শাসনে পশ্চিমবঙ্গ নামক গাড়িটি গাড্ডায় পড়ে গেছে বলে কটাক্ষ করেন মোদী । কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মিলে একযোগে বাংলাকে উন্নয়নের সড়ক দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে , এটা বোঝাতেই মোদী গর্তে পড়া গাড়ির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টেনেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
খড়্গপুরের সভা থেকে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন মোদী । |
খড়্গপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার শুরুতেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের লম্বা প্রশস্তি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । দিলীপ ঘোষের মতো দক্ষ কান্ডারীর হাতে দল আছে দেখেই তিনি এবার বাংলায় বিজেপি সরকারের স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান মোদী । দিলীপ ঘোষের প্রশংসা করে মোদী বলেন , ‘ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলকে জেতানোর জন্য রাজ্য সভাপতি ঘুম পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন । তাঁর ওপর একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে । কিন্তু তিনি ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসেন নি । ‘ প্রথমদফা ভোটের আগে প্রচারের মঞ্চ থেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে নির্গত বিজেপি রাজ্য সভাপতি সম্পর্কে এহেন উচ্চ প্রশংসা যথেষ্টই ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
ছবি – বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত