নবান্ন দখলে হলদিয়া থেকেই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ মোদী , ফাউল করায় তৃণমূলকে ' রামকার্ড ' দেখাবে মানুষ, বললেন প্রধানমন্ত্রী - nagariknewz.com

নবান্ন দখলে হলদিয়া থেকেই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ মোদী , ফাউল করায় তৃণমূলকে ‘ রামকার্ড ‘ দেখাবে মানুষ, বললেন প্রধানমন্ত্রী


নাগরিক নিউস : শনিবার থেকেই কার্যত পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । এক গুচ্ছ সরকারি অনুষ্ঠানের আগেই এদিন দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে আয়োজিত বিজেপির জনসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে একহাত নিলেন নরেন্দ্র মোদী । ব্রিটিশ ভারতে বাংলার গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কথা স্মরণ করেই মোদীর আক্ষেপ , স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ও বাম জামানায় দুর্নীতি আর অত্যাচারের কারণে  বাংলার অধঃপতন হয়েছে ।  এগারোয় ক্ষমতায় আসা  তৃণমূলের সরকারকেও  বামেদের  পুনর্জীবন  বলেই মনে করেন‌ তিনি । নরেন্দ্র মোদী বলেন, সে সময় পরিবর্তনের আশায় মানুষ মমতাকে ভোট দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্মমতা ছাড়া আর কিছু পায় নি জনগণ । ফুটবল খেলার উদাহরণ টেনে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে ফাউলের সরকার বলে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী । নরেন্দ্র মোদীর ভাষায় , ‘ তৃণমূল একের পর এক ফাউল করেছে । অপশাসন , দুর্নীতি , মানুষের টাকা লুঠের পাশাপাশি বিরোধীদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ নামিয়ে ফাউল করেছে তৃণমূল । ‘ এইবার বাংলার মানুষ তৃণমূল সরকারকে রামকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেবে বলেও দাবি করেছেন মোদী । 

হলদিয়ার সমাবেশে জনতাকে অভিবাদন জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

হলদিয়ারার হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডের জনসভায় লোক উপচে পড়েছিল । সমাবেশে মুকুল রায়,দিলীপ ঘোষের পাশাপাশি  সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়‌ও ভাষণ দেন ।  তৃণমূল সরকারের দুই প্রাক্তন মন্ত্রীর‌ই অভিযোগ , কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পদে পদে অসহযোগিতা করে রাজ্যের উন্নয়নকে ব্যাহত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন  বাংলায় বক্তৃতার সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ মেদিনীপুরের পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি । শহিদ ক্ষুদিরাম বসু , মাতঙ্গিনী হাজরার রক্তে রঞ্জিত এই পুণ্যভূমি । এই মাটির বীর সন্তান বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় লিখে বাঙালির হাতে তুলে দিয়েছেন । সতীশচন্দ্র নিজে   হাতে এখানে গড়েছেন হলদিয়া বন্দর । ‘ মেদিনীপুরের মাটির গুণে তিনি মুগ্ধ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী ।

হলদিনদীর তীর থেকেই ভোটযুদ্ধ শুরু করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী

পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার কতটা দরাজ , জনসভায় দাঁড়িয়ে তার খতিয়ান তুলে ধরেন নরেন্দ্র মোদী । প্রধানমন্ত্রী বলেন, কলকাতার সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রো রেলের কাজ চলছে । বাজেটে আর‌ও টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় সড়কের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী । কলকাতা-শিলিগুড়ি সড়ক সংস্কার করা হবে।  বাংলার জন্য রেলের বরাদ্দ‌ও পঁচিশ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি । চা বাগানের শ্রমিকদের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার এক ‌হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে বলে মঞ্চ থেকে জানান প্রধানমন্ত্রী । 

সভায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, বাংলার মানুষ এখন উন্নয়ন চায় । কিন্তু এখানকার রাজনীতি উন্নয়নের পথে অন্তরায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসনের প্রধানকে  কটাক্ষ করে বলেন, উন্নয়নের কথা উঠলেই দিদি রেগে যান ‌। ভারত মাতা কি জয় শুনলে রেগে যান ।  তবে দেশবিরোধী মন্তব্য মমতার গা স‌ওয়া বলে টিপ্পনী কাটেন নরেন্দ্র মোদী । কেন্দ্রের পাঠানো আমফানের ত্রাণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির জেরে আদালতকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বলে আক্ষেপ  করেন মোদী । কেন্দ্রের পাঠানো রেশন‌ও জনগণের কাছে রাজ্যের সরকার ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারে নি বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

কৃষকদের জন্য তৃণমূলের দরদ মেকী বলেও অভিযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদী ।  পিএম সম্মান নিধি প্রকল্পের লাভ তুলতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা । এর জন্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী।  এই প্রকল্পের জন্য  পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাত্র ছয় হাজার কৃষকের নাম পাঠিয়েছে । তারপরেও রাজ্য সরকার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য না পাঠানোয়  এই  ছয় হাজার কৃষক‌ও কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন মোদী । বাংলার চার কোটি মানুষের জনধন অ্যাকাউন্টে করোনাকালে টাকা ঢুকেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী । নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত  রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

তৃণমূলের মধ্যে যারা মানুষের ভালো চান তাঁরা রাম রাম বলে বিজেপিতে চলে এসেছেন বলে হলদিয়ার সভা থেকে মন্তব্য করেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাকে তোলাবাজদের হাত থেকে মুক্ত করব‌ই । পর্দার আড়ালে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতা চলছে বলে সভায় অভিযোগ করেন নরেন্দ্র মোদী। এই তিন দলকে গোপন বন্ধু বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। মোদী বলেন, ‘ এইবার বাংলায়‌ পরিবর্তন আসবেই । তবে গোপন বন্ধুদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে মানুষকে । পর্দার আড়ালে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশ চলছে । দিল্লিতে এরা একসঙ্গে বসে রণকৌশল ঠিক করে । কেরলে বাম-কংগ্রেস পাঁচ বছর পাঁচ বছর করে ভাগাভাগি করে লুটপাট চালায় । এখানে তৃণমূল‌ও এই ভাগাভাগিতে যুক্ত হতে চাইছে। তাই বাম-কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না । ‘  

বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে তৃণমূল যাতে অ্যাডভান্টেজ না পায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই বাম-কংগ্রেস নিয়ে মোদীর এই সতর্কবার্তা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । হলদিয়া থেকে যেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ওপেনিং করলেন নরেন্দ্র মোদী , তাতে গোটা নির্বাচনী ইনিংসে মোদীকে কেমন স্টেপআউট মুডে পাওয়া যাবে তার একটা আঁচ পাওয়া গেল মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা । 

ভিডিও-


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *