জোটের ব্রিগেড মাতালেন ' ভাইজান ', আব্বাসের ভাষণ শুনে আবেগে আকুল বাম সমর্থকেরা , বামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পীরজাদা কংগ্রেসেকে দিলেন ধমকি - nagariknewz.com

জোটের ব্রিগেড মাতালেন ‘ ভাইজান ‘, আব্বাসের ভাষণ শুনে আবেগে আকুল বাম সমর্থকেরা , বামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পীরজাদা কংগ্রেসেকে দিলেন ধমকি


এন এন ডি সি পলিটিকাল ডেস্ক : অধীর-বিমান-সেলিম-মান্নান-সূর্যকান্ত-ইয়েচুরি কেউই নন রবিবার জোটের ব্রিগেড কাঁপালেন ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকি । ব্রিগেডের ভরা মাঠে সভার মধ্যমণি হয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা ও বিজেপিকে বাংলা থেকে উৎখাত করার হুঙ্কার দিলেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি । আর তাতে স্পন্দিত হয়ে জ্বলে উঠলেন লক্ষ লক্ষ বাম সমর্থক । এদিন বামেদের প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ভাইজান । ত্যাগ স্বীকার করে বামেরা নিজেদের আসন ছেড়ে দেওয়াতেই জোটটা শেষ পর্যন্ত হতে চলেছে বলে মনে করেন আব্বাস সিদ্দিকি । আব্বাস বলেন, ‘ বামপন্থীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ । তেনাদের ঘরে আমরা যে লিস্ট দিয়েছিলাম । মানুষের মনোভাব বুঝতে পেরে । মানুষের স্বার্থে সৎ ইচ্ছা দেখিয়ে তার মধ্যে থেকেই বেশির ভাগ জায়গায় আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে । বিমানদা ত্যাগ স্বীকার করে দলকে বুঝিয়ে আমাদের ঘরে তিরিশটি জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন । ‘ 

বামেরা ত্যাগ স্বীকার করায় নিজের ভাষণে বিমান বসু , মহম্মদ সেলিমকে বারেবারে কৃতজ্ঞতা জানান ভাইজান । আর তা শুনেই আপ্লুত হয়ে ওঠে মাঠ ভরা সিপিএম কর্মী সমর্থকেরা । মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনিতে ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকিকে অভিনন্দন জানান তারা । পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি তাঁর সমর্থক ও মুরিদদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘ যেখানে যেখানে বাম শরিকেরা প্রার্থী দেবে তাদের পাশে থাকতে হবে । মাতৃভূমিকে রক্ত দিয়ে হলেও স্বাধীন আমরা করব । এই বিজেপি সরকার আর তার বি টিম মমতাকে বাংলা থেকে উৎখাত করে ছাড়ব । ‘ জোটের কাছে দলের জন্য ৭০টি আসন চেয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি । তার মধ্যে তিরিশটি আসন বামপন্থীদের কাছ থেকে পাওয়া সারা । টানাপোড়েন চলছে কংগ্রেসের সঙ্গে । এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ব্রিগেডে জোটের সভায় হাজির পীরজাদা । বিমান বসু আর‌ মহম্মদ সেলিমের অনুরোধেই যে আসন সমঝোতা নিয়ে মনে কিঞ্চিৎ অসন্তোষ থাকার পরেও তাঁর সভায় আসা তা গোপন করেন নি ভাইজান । 

ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে সিপিএমকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন ‘ভাইজান ‘

আব্বাস সিদ্দিকি বলেন, ‘ আমার বড় স্বপ্ন ছিল ব্রিগেডের ময়দানে সভা করার ।‌ ‘ ব্রিগেডে নিজের দলের সভার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেও সেলিমদার ( মহঃ সেলিম ) কথায় তিনি পিছিয়ে আসেন বলে জানান আব্বাস । আইএস‌এফ সুপ্রিমো বলেন, ‘ সেলিমদা প্রায় সময়‌ই বলতেন , ‘ আজকে আমরা একটি জায়গায় এলে আরও ভাল হবে ।‌ গত শুক্রবার ব্রিগেডের জমায়েতে আসার জন্য আহ্বান করেছিলাম । আর‌ও এক সপ্তাহ আগে সমঝোতাটা হয়ে গেলে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি এর ডবল লোক ব্রিগেডে এনে হাজির করতাম । ‘

বাম-কংগ্রেসের নেতাদের ছাপিয়ে ব্রিগেড কাঁপালেন  ‘ ভাইজান ‘

ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে সিপিএমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উপস্থিতির তোয়াক্কা না করেই কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দিতে ছাড়েন নি ভাইজান । এদিন আব্বাস সিদ্দিকি যখন ব্রিগেডে আসেন  তখন মঞ্চে বক্তৃতা করছিলেন অধীর চৌধুরী । আব্বাস মঞ্চে প্রবেশ করতেই  ভাইজানকে নিয়ে বাম নেতাদের মাতামাতিতে তাল কাটে অধীরবাবুর । ভাষণ অসম্পূর্ণ রেখেই পোডিয়াম ছাড়তে যান ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগেস সভাপতি । তাঁকে অনেক চেষ্টায় শান্ত করেন বিমান বসু সহ অন্যান্যরা । অধীর চৌধুরীর  পরেই বলার ডাক আসে আব্বাস সিদ্দিকির ।    ভাষণে বাম প্রার্থীদের পাশে থাকতে অনুগামীদের কাছে আবেদন জানালেও কংগ্রেস সম্পর্কে নীরব ছিলেন আব্বাস সিদ্দিকি । মাইক ছাড়ার আগে নিজেই এই রহস্যের কিনারা করেন আব্বাস । পীরজাদা বলেন , ‘ হয়তো আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে । বামেদের বেলায় সমর্থনের কথা বললাম । কংগ্রেসের বেলায় বললাম না কেন । ‘ এরপরের লাইনেই ভাইজানের হুঙ্কার, ‘ একটা কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই ভাগীদারি করতে এসেছি । কার‌ও তোষণ করতে আমি আসি নি । অনেক হয়েছে । আর নয় । নিজেদের হক বুঝে নিতে হবে । তাই ভাগীদারি করতে এসেছি । ‘ নাম না করে কংগ্রেস নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে ভাইজানের বার্তা , ‘ যদি কেউ মনে করে থাকে বন্ধুত্বের হাত মেলানো দরকার তবে তার সঙ্গেও ভবিষ্যতে আব্বাস সিদ্দিকি হাত মেলাতে প্রস্তুত । কথা দিলাম । ‘ অর্থাৎ কথা ক্লিয়ার ।‌ কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়া ইস্তক হাত চিহ্নের প্রার্থীদের হয়ে দোয়া-দুরুদ করবেন না তিনি । 

অধীর চৌধুরীর সামনেই কংগ্রেসকে ধমকি দিলেন ‘ ভাইজান ‘

রবিবার ব্রিগেডের সভায় পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি বলেন , ‘ আজকে এই সভা দেখে বাংলার বুকে সবথেকে বেশি আফশোষ যদি কেউ করে থাকেন তবে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ ‌নন । ওনার ঘুম হারাম হয়ে গেছে । ‘ রাজনৈতিক মহল অবশ্য বলছে ব্রিগেডে জোটের সভার‌ পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কতটা রাজনৈতিক ক্ষতি হবে তা নির্ধারণ করা এখন‌ই সম্ভব না হলেও একটা বিষয় পরিস্কার , বাংলার রাজনীতিতে মেরুকরণ আরও গভীর হবে । বামেদের সৌজন্যে রবিবার ব্রিগেডের মাঠ থেকে যে মাইলেজ নিয়ে ভাইজান ফিরে গেলেন তাতে বামেদের ভোট বাক্স কতটা ভরবে তা নিয়ে‌ শেষ পর্যন্ত সংশয় থাকলেও রাজ্যের সংখ্যাগুরুদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে নিতে ‘ ভাইজান ‘ কার্ড খেলতে বিজেপি যে বিলম্ব করবে না তার ইঙ্গিত কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে । 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *