কালনার সভায় দাঁড়িয়ে‌ নাম না করে শুভেন্দু-রাজীবকে দুষ্টু গরু কটাক্ষ মমতার , বিজেপির রথকে ফাইভস্টার হোটেল বলে কটাক্ষ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো - nagariknewz.com

কালনার সভায় দাঁড়িয়ে‌ নাম না করে শুভেন্দু-রাজীবকে দুষ্টু গরু কটাক্ষ মমতার , বিজেপির রথকে ফাইভস্টার হোটেল বলে কটাক্ষ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো


নাগরিক পলিটিক্যাল ডেস্ক : তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যাওয়া নেতাদের দুষ্টু গরুর সঙ্গে তুলনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের কালনায় দলের জনসভায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘ দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল । কয়েকটি দুষ্টু গরু ঘেউ ঘেউ করতে করতে , ঘেউ ঘেউ না হাম্বা হাম্বা করতে করতে  ইধার উধার করে বেড়াচ্ছে । নিজেদের দুর্নীতি চাপা দেবার জন্য ।’ অর্থাৎ মমতার ইঙ্গিত খুব পরিস্কার । তৃণমূল সুপ্রিমোর মতে, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতেই বিজেপিতে গিয়েছেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ পাপ বিদায় হয়েছে । ‘ নাম না করে শুভেন্দু-রাজীবকেই মুখ্যমন্ত্রী পাপ বলে কটাক্ষ করছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি যারা তৃণমূলে থেকে তৃণমূলের খারাপ করে তাদের তৃণমূলে থাকার দরকার নেই । ‘ 

তবে শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একঝাঁক তৃণমূল নেতা যে দলের দুঃসময়ে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তা উপমাচ্ছলে হলেও এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ‘ মা ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করবে , খাওয়াবে পরাবে । আর মা যখন অসুস্থ হয়ে পড়বে বা মায়ের যখন খাদ্যের  প্রয়োজন হবে তখন মাকে ছেড়ে যেই সন্তান চলে যায় সেই সন্তান কুসন্তান । সেই সন্তান কখনও সুসন্তান হতে পারে না। ‘ এইবারের নির্বাচনে তৃণমূল যে কঠিন লড়াইয়ের সামনে  এদিন তা এইভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা । 

কালনার সভায় ভাষণ  দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মঙ্গলবার কালনার জনসভা থেকে মমতা  যথারীতি একদিকে একহাত নেন বিজেপিকে অন্যদিকে নিজের সরকারের সাফল্যের বিস্তারিত খতিয়ান তুলে ধরেন । মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘ বিজেপি কোনও ধর্ম মানে না । মুখে বলে হিন্দু ধর্ম । কিন্তু হিন্দু ধর্মের মধ্যে কত ধর্ম আছে জানে না । ‘ বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ বিবেকানন্দকে বলে দিচ্ছে বিবেকানন্দ ঠাকুর । বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে । রবীন্দ্রনাথের টাইটেল বিবেকানন্দকে লাগিয়ে দিচ্ছে । এখানে এসে চৈতন্যদেবের নামেও ভুলভাল বলে গেছে । এরা দুর্গাপূজো , কালীপূজো ,‌সরস্বতী পূজো করে না । পুজো করতেই জানে না। ‘ তৃণমূল সুপ্রিমো এইসব বলে বাঙালি হিন্দুত্বকে কৌশলে উস্কে দিয়ে বিজেপিকে জবাব দিতে চাইছেন বলে অনেকে মনে করছেন । নেতাজিকে নিয়ে বাঙালি আবেগ উস্কে দিতে নেতাজি অন্তর্ধান নিয়েও কালনার মঞ্চ থেকে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তৃণমূল সুপ্রিমো অভিযোগ করেন, ‘ নেতাজিকে নিয়ে কিছু করা তো দূরের কথা, আজ পর্যন্ত মানুষ জানতেই পারল না নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুদিন কবে ? ‘ 

আগামীতে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস‌ই সরকারে থাকবে বলে সভায় জোর গলায় দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনতার উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘ তৃণমূল কংগ্রেস‌ই থাকবে । আপনাদের ধান আমরা প্রত্যেকবার কিনব । বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছি । বিনা পয়সায় দেবো । আমাদের সরকার থাকবে । স্বাস্থ্যসাথী থাকবে । দুয়ারে সরকার থাকবে । ‘ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কৃষকদের থেকে ধান কেনে না বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী । প্রত্যেক বছর বাংলার কৃষকদের কাছ থেকে রাজ্য সরকার ৩৪ থেকে ৪০মেট্রিক টন ধান কেনে বলে দাবি করেন তিনি।  বাংলা  থেকে কেন্দ্রীয় সরকার  ৩৩ হাজার টন ধান‌ও সংগ্রহ করে না বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

কালনায় তৃণমূলের সভার একাংশ

নির্বাচনে জিততে বিজেপি বিপুল টাকা ঢালছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ বিজেপি একটা পার্টি, যার অনেক টাকা আছে । টাকা নিয়ে চলে আসছে । টাকা দিলে টাকা খেয়ে নেবেন । ভাল করে মাংস ভাত খেয়ে নেবেন । আর ভোটের বাক্সে উল্টে দেবেন । ‘ ত্রিপুরার লোক বিজেপিকে ভোট দিয়ে এখন কাঁদছে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। রাজ্য জুড়ে রথ বের করেছে বিজেপি । এদিন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিরাগত বলে দেগে দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপির রথকেও বিদ্রূপ করতে ছাড়েন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিজেপির রথকে ফাইভস্টার হোটেল বলে কটাক্ষ করেন মমতা । 

কালনার দলীয় সভা থেকে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে প্রায় কোনও শব্দ‌ই খরচ করেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বক্তৃতার  শেষের দিকে  একবার শুধু বলেন ‘ মনে রাখবেন যা ছিল বাম তাই বিজেপির শাম । বাম আর শাম , নেই কোনও দাম ।’ বিজেপি এবং তৃণমূল ত্যাগী বিজেপি নেতাদেরকেই যে ভোটে তিনি আসল প্রতিপক্ষ বলে ধরে নিয়েছেন মমতার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । এদিন ভাষণের একেবারে শেষেও অধিকারী পরিবারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি তৃণমূল সুপ্রিমো । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ যারা শুধু নিজের পরিবারকে দ্যাখে আর কাউকে দ্যাখে না , আমি তাদের জন্য ন‌ই । ‘

ভিডিও-


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *