দলের জেলা কমিটিতে স্থান না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জলপাইগুড়ির বর্ষীয়ান তৃণমূল নেত্রী || জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রীর পদ যাওয়ায় কল্যাণীকেই দুষলেন সাগরিকা সেন - nagariknewz.com

দলের জেলা কমিটিতে স্থান না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জলপাইগুড়ির বর্ষীয়ান তৃণমূল নেত্রী || জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রীর পদ যাওয়ায় কল্যাণীকেই দুষলেন সাগরিকা সেন


প্রদ্যুৎ দাস , জলপাইগুড়ি, ১৩ জানুয়ারি : দলের জেলা কমিটির মিটিংয়ে বলার সুযোগ না পেয়ে দফতর থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে জেলা সভাপতিকে কার্যত ধুইয়ে দিলেন জলপাইগুড়ির বর্ষীয়ান তৃণমূল নেত্রী । তিনি  রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদিকা  সাগরিকা সেন । জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের আদিদের মধ্যে অন্যতম । 

বুধবার বিকেলে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের দফতরে দলের জেলা কমিটির বৈঠক বসেছিল । জেলা কমিটির সদস্য না হ‌ওয়ার কারণে বৈঠকে সাগরিকা দেবীকে থাকার‌ই সুযোগ দেন নি সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী । সেই অভিমানে দফতর থেকে বেরিয়ে ধরা গলায় এবং চাঁচাছোলা ভাষায় জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে দিলেন রাজ্য মহিলা তৃণমূলের সম্পাদিকা সাগরিকা সেন। তিনি ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী । সম্প্রতি এই পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে রাজ্য কমিটিতে পাঠানো হয়েছে ।  ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে দলের মহিলা সংগঠনের জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে সরিয়ে রাজ্য কমিটিতে পাঠানোর পেছনেও জেলা সভাপতির‌ই হাত দেখতে পাচ্ছেন সাগরিকা দেবী । 

দলের জেলা দফতরের বাইরে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাগরিকা সেন

জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রীর পদ যাওয়ার পর তৃণমূলের জেলা কমিটিতে তাঁকে স্থান দিতে দলের জেলা সভাপতিকে অনুরোধ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করায় ক্ষোভ চরমে উঠেছে জলপাইগুড়ি জেলার এই বর্ষীয়ান তৃণমূল নেত্রীর । এদিন বিকেলে দলের জেলা দফতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেই জমে থাকা  ক্ষোভ উগরে দিলেন সাগরিকা সেন । স্থানত্যাগ করার আগে বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি কিষাণদাকে বাড়িতে গিয়ে পর্যন্ত বলে এসেছি , দ্যাখেন আপনি যখন মহিলার থেকে বাদ দিছেন , তখন জেলা কমিটিতে অন্তত একটা জায়গা দিন । আমি কাজ করব । ‘ কিন্তু তাঁকে দলের জেলা কমিটিতে থেকে কাজের সুযোগ না দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাগরিকা সেন বলেন, ‘ আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক । আমাকে উনি ( কৃষ্ণকুমার কল্যাণী ) দলে রাখলেও কাজ করব না রাখলেও কাজ করব ‘ এরপরেই তৃণমূল নেত্রীর সংযোজন ,‌ ‘ জলপাইগুড়িতে দলের একেবারে যাচ্ছেতাই করে দিচ্ছে আমাদের কিষাণদা । এই ভাবে তো দলটাকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে । আমি বেরিয়ে আসলাম ।’ তাঁকে জেলা কমিটির একটি বৈঠকেও ডাকা হয় না বলে অভিযোগ করলেন রাজ্য মহিলা তৃণমূলের সম্পাদিকা । সাগরিকা দেবীর কথায়, ‘ আমি রাজ্যে থেকে কী করব ? আমাকে একটা মিটিংয়ে ডাকে না । আরে রাজ্যে গিয়ে কি আমি ভূত‌ হয়ে গেছি ? ‘ 

সাগরিকা সেনের অভিযোগ খারিজ করে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি

যদিও সাগরিকা সেনের অভিযোগকে আমল‌ই দিলেন না জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী । সাংবাদিকরা সাগরিকা দেবীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘ কাজ করার সুযোগ  শুধু জেলা কমিটিতে রাখলেই হয় না । উনি তো স্টেটে আছেন । উনি জলপাইগুড়িতে আছেন । আমরা তাঁকে ইউটিলাইজ করব । ব্লক সভাপতিরা তো বলেছেন ওনাকে প্রত্যেক মিটিংয়ে ডাকবেন । ‘ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব‌ই সাগরিকা সেনকে মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী থেকে সরিয়ে রাজ্য কমিটিতে পাঠিয়েছে বলে দাবি করেন কৃষ্ণবাবু । এই ব্যাপারে আড়াল থেকে তাঁর কোনও ইন্ধন নেই এটা বোঝাতেই জেলা তৃণমূল সভাপতি এমনটি বললেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কৃষ্ণকুমার কল্যাণী সাগরিকা সেনের অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন,‘ ওপরওয়ালারাই  ওনাকে স্টেট কমিটিতে রেখেছে । কী উদ্দেশ্যে উনি জেলা কমিটিতে আসতে চাইছেন তাঁর মত । এটা তাঁর পার্সোনাল মত হতে পারে । কিন্তু দল যা ঠিক করবে সেই সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিতে হবে যদি আপনি মনে করেন আপনি অ্যাকচুয়াল দল করছেন । আপনার ইচ্ছায় কিন্তু দল পরিচালিত হবে না।’ 

জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের বিবাদ মেটাতে প্রায় এক পক্ষকাল সময় জেলায় কাটিয়েছেন রাজ্য  তৃণমূলের  কোর কমিটির সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। কিন্তু তারপরেও দলের ভেতরে অসন্তোষ যে পুরোপুরি মেটে নি বুধবারের ঘটনা তার‌ই প্রমাণ হিসেবে দেখছেন  রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।

ভিডিওতে দেখুন-



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *