নাগরিক পলিটিক্যাল ডেস্ক : বেশ কিছুদিন ধরেই বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মতিগতি নিয়ে মিডিয়ায় জল্পনার অন্ত ছিল না। নাগরিকত্ব আইন কার্যকরে কেন্দ্রের বিলম্বে বিরক্ত হয়ে শান্তনু ঠাকুর তৃণমূলে পর্যন্ত যোগ দিতে পারেন বলে বাজারে খবর চাউর হয়ে যায় । বুধবার মিডিয়ার এই হিসেব নিকেশে জল ঢেলে দিল বিজেপি । এদিন বিকেলে কলকাতায় দলের হেস্টিংস দফতরে শান্তনু ঠাকুরকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় ও রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত ।
শান্তনু ঠাকুরকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুকুল রায় ও স্বপন দাশগুপ্ত |
সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর তৃণমূলে যোগদানের খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শান্তনু ঠাকুর । বনগাঁর সাংসদ একই সঙ্গে সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের সঙ্ঘাধিপতিও । মতুয়া সম্প্রদায়ের এই নেতা সংবাদ মাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে তাঁকে নিয়ে ধূমায়িত যাবতীয় রহস্যের কিনারা করে দিতে বলেন, ‘ আমাদের ( মতুয়া মহাসংঘের ) আদর্শগত জায়গাটা হচ্ছে সিএএ’র ইমপ্লিমেন্টেশন । সেখানে আমার সরকারকে আমি বারবার রিকোয়েস্ট করছি । তার মানে এই নয় যে, যারা সিএএ’র বিরোধিতা করেছে তাদের দলে গিয়ে যোগদান করতে হবে । তাদের দলে গিয়ে যোগদানের কোনও প্রশ্নই আসে না । এইসব প্রশ্ন অবান্তর । ‘ বনগাঁর সাংসদ আরও বলেন, ‘ আমার মনে হয় সিএএ’র তাড়াতাড়ি ইমপ্লিমেন্টেশন হবে । ‘ আগামী ১৯ অথবা ২০ জানুয়ারি মতুয়া সম্প্রদায়ের পীঠস্থান ঠাকুর নগরে উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মানুষের সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর । সেখানেই অমিত শাহ নাগরিকত্ব আইন কবে থেকে কার্যকর হবে সেই ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে জানাবেন বলে আশা করছেন শান্তনু ঠাকুর ।
সাংবাদিক সম্মেলনে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর |
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মতুয়া , নমঃশূদ্র জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য তপশিলী জাতির উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেন মুকুল রায় । শরণার্থী মতুয়া জনগোষ্ঠীকে পূর্বতন বাম ও বর্তমান তৃণমূল সরকারে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে স্রেফ ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেন মুকুলবাবু । কংগ্রেস , বাম এবং তৃণমূল সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বাংলাদেশ থেকে আসা বহু সংখ্যক অবৈধ মুসলমান অনুপ্রবেশকারীকে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসের পাকাপাকি জায়গা করে দিয়েছে এবং এই জঘণ্য রাজনীতি করতে গিয়ে নমঃশূদ্র জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদা গুলো যথাযথ ভাবে নিশ্চিত না করে তাদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে , তাদের প্রতারিত করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি । কেন্দ্রীয় সরকার যখন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আনছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন আইনের বিরোধিতা করে মতুয়াদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে অভিযোগ করতেও ছাড়েন নি মুকুল রায় । মুকুল রায় বলেন , ‘ সব থেকে দুর্ভাগ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএর বিরোধিতা করার জন্য মতুয়াদের অরাজনৈতিক মঞ্চ মতুয়া মহাসংঘকে পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন ‘ কোভিড পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব আইন কার্যকরে বিলম্ব হলেও আইন শীঘ্রই বলবৎ হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন মুকুলবাবু ।
নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগে বিলম্বের প্রশ্নে শান্তনু ঠাকুরের মনে অসন্তোষ দেখা দিয়ে থাকলেও ভোটের মুখে বনগাঁর সাংসদের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলতে বিজেপি নেতৃত্ব সফল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল । দক্ষিণবঙ্গের একাধিক আসনে মতুয়া সম্প্রদায়ই নির্ণায়ক শক্তি । উনিশের লোকসভা নির্বাচন থেকেই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূল থেকে বিজেপিতে সরে আসে । বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয়ে মতুয়া ভোট যে বড় সহায়ক হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
ভিডিওতে দেখুন –