প্রদ্যুৎ দাস , জলপাইগুড়ি, ১৫ ডিসেম্বর : একুশের বিধানসভা নির্বাচন যে কঠিন পরীক্ষা তা স্বীকার করে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আর এই পরীক্ষা পাশ করতে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির কর্মীসভা থেকে দলের নতুন পুরোনো সবাইকে মিলেমিশে ঝাঁপিয়ে পড়তে বললেন তৃণমূল নেত্রী । এদিন নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী সহ বিক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট তৃণমূল নেতাদের হুঁশিয়ারি দিতেও ছাড়েন নি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” ১০ বছর পার্টির হয়ে খেয়ে , ১০ বছর গভর্নমেন্টে থেকে গভর্নমেন্টের সবটুকু খেয়ে ইলেকশনের সময় এর সাথে ওর সাথে বোঝাপড়া করলে আমি কিন্তু টলারেট করি না ” । তৃণমূল সুপ্রিমো কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ” ৩৬৫ দিন যারা মানুষের সঙ্গে ছিলেন তাদেরই পরীক্ষা দিতে হবে ।আপনারা ভাল কাজ করলে মানুষই আপনাদের মাথায় তুলে রাখবে ” ।
![]() |
জলপাইগুড়ির এবিপিসি ময়দানে তৃণমূলের কর্মীসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
তবে দলের কর্মীদের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে তিনি যে চিন্তিত তা গোপন রাখেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ” কারও যদি কোনও ভুলত্রুটি হয়ে থাকে নিজেদের সংশোধন করে নেবেন । মানুষের কাছে ক্ষমা চাইবেন। মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলে কোনও অপরাধ হয় না। মানুষই আমাদের সবথেকে বড় গার্জিয়ান “ । দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা – ” পুরোনো নতুন মিলেমিশে কাজ করুন। ‘এ’ বড় কি ‘বি’ বড় দেখার দরকার নেই । একুশে এমন পরীক্ষা দেবেন যাতে বিজেপি আর কোনও দিন পরীক্ষায় বসতে না পারে ” ।
![]() |
জলপাইগুড়ির কর্মীসভায় ভাষণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
পশ্চিমবঙ্গে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির মিমকে নিয়ে তিনি যে চিন্তিত তা মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গলবারের ভাষণ থেকেই পরিস্কার । মিমকে রাজ্যে বিজেপিই ডেকে এনেছে বলে জলপাইগুড়ির কর্মীসভা থেকে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ” সংখ্যালঘুদের ভোট ভাগ করার জন্য আবার হায়দ্রাবাদের একটা পার্টিকে ডেকে এনেছে । বিজেপি হিন্দুদের ভোট নেবে । ও( হায়দরাবাদের পার্টি ) মুসলিমদের ভোট নেবে । আর আমি কি কাঁচাকলা খাবো ? ” নাম না করেই মিমের সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘ সেই পার্টিটা আবার এখানকার কয়েকজনকে জোগাড় করেছে । এরা বিজেপির টাকা খায় “।
এদিনও বিজেপির বিরুদ্ধে বহিরাগত অভিযোগ তুলতে দ্বিধা করেন নি তৃণমূল সুপ্রিমো । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপি বাংলায় বহিরাগত গুন্ডাদের ঢুকিয়েছে । এরা রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকবে । তৃণমূল নেত্রী হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ” বিজেপি বলে বেড়াচ্ছে ডিসেম্বর থেকে মারবে । মেরে দেখুক না । শোনো আমাকে আঘাত করলে এমন প্রত্যাঘাত করব সামলাতে পারবে না। তোমার কোটি কোটি গুন্ডা এনেও সেই প্রত্যাঘাত সামলাতে পারবে না “ ।
![]() |
জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল কর্মীরা সভায় এসেছিলেন |
ডায়মন্ডহারবারে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় মমতার পাল্টা অভিযোগ , ” একটা ভিআইপি কনভয় যখন যায় তার পেছনে ৫০টা গাড়ি যাবে কেন ? গাড়ির পেছনে ৫০ টা গুন্ডা থাকবে কেন ? যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল তারা থাকবে কেন তাতে “ ? এদের দেখলে লোকে রেগে যায় বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী । অর্থাৎ জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় হামলাকারী নয় বিজেপির ইন্ধনকেই বড় করে দেখছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
জলপাইগুড়ি কর্মীসভা থেকে বিজেপিকে স্বভাবসিদ্ধ বাচনভঙ্গিতে বিজেপিকে তুলোধুনো করার পাশাপাশি উন্নয়ন নিয়েও লম্বা ফিরিস্তি দেন মুখ্যমন্ত্রী । তবে লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ থেকে তৃণমূলের একটিও আসন না পাওয়ার দুঃখ যে তিনি এখনও ভুলতে পারেন নি এদিনের সভায় তা গোপন রাখেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো আক্ষেপ করে বলেন, ‘ আমরা তো এখান থেকে একটি সিটও পাই নি লোকসভায় । পেয়েছি একটাও ? কী অপরাধ ছিল আমাদের ? কী অপরাধ করে ছিলাম আমরা “ ? এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ” আমরা যা করে গেলাম । আমরা যা করে যাচ্ছি । আর আমরা যা করব । আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি তা সারা পৃথিবীতে কেউ করে দেখাতে পারবে না ” ।
মঙ্গলবারের সভা থেকে রাজ্য সরকারের দায়ের করা পুলিশ আধিকারিক হত্যা সহ কয়েক ডজন মামলায় অভিযুক্ত মোর্চা নেতা বিমল গুরুংকেও প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” বিমল গুরুংকে নিয়ে ছ’বছর ধরে বলল গোর্খাল্যান্ড দিয়ে দেবো । ওরা বুঝতে পেরেছে বিজেপির মিথ্যাটা । ওদের ধন্যবাদ দেবো । দার্জিলিংয়ের পার্মানেন্ট রাজনৈতিক সলিউশন করলে আমরাই করব । ওরা পারবে না। ওদের দ্বারা সম্ভব নয় “। বিজেপি এখন দার্জিলিং ও তরাই- ডুয়ার্সের মধ্যে গন্ডগোল লাগাতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন জলপাইগুড়ি শহরের এবিপিসি ময়দানে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল কর্মীদের সভায় ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সভা শেষ করেই হেলিকপ্টারে কোচবিহারের উদ্দেশ্যে উড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী । সভায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই ।