নাগরিক নিউস,৫ মার্চ,২০২১ : শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার ২৯১ টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস । কালীঘাটের বাড়িতে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ( এসসি ) কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করল তৃণমূল । বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীর বদলে ময়নাগুড়িতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের ব্লক সভাপতি মনোজ রায়কে । জলপাইগুড়ি সদর ( এসসি ) আসন নিয়ে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল টিকিট দিয়েছে শহরের চিকিৎসক ও একটি নার্সিংহোমের অন্যতম মালিক ডঃ প্রদীপকুমার বর্মাকে।
জলপাইগুড়ি সদরে তৃণমূলের কোন নেতার ভাগ্যে দলের মনোনয়ন জোটে তা নিয়ে কৌতুহল ছিল রাজনৈতিক মহলের । ডঃ পিকে বর্মার পাশাপাশি বারোপেটিয়া-নতুনবস জিপির উপপ্রধান , সদর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এবং তৃণমূল এসসি-এসটি সেলের জেলা সভাপতি কৃষ্ণ দাস ও ভাওয়াইয়া শিল্পী দুর্গা রায়ের নাম নিয়ে চর্চা চলছিল । শেষপর্যন্ত দলের শিলমোহর পড়ল ডঃ বর্মার নামের ওপরেই ।
রাজগঞ্জ ( এসসি ) , ধুপগুড়ি ( এসসি ) , মাল ( এসটি ) এবং ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ( জেনারেল ) আসনের প্রার্থী তালিকা য় কোনও রদবদল ঘটে নি । রাজগঞ্জে খগেশ্বর রায় ও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে গৌতম দেবের মনোনয়ন নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না । ধুপগুড়িতে মিতালি রায়কে নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল শিবিরে বিস্তর অসন্তোষ থাকলেও শেষমেশ মিতালির ওপরেই আস্থা রেখেছে দল । মালবাজারে বিধায়ক বুলুচিক বরাইককেই আরও একবার সুযোগ দিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব । নাগরাকাটার ( এসটি) বিধায়ক শু্ক্রা মুন্ডা শুভেন্দু অধিকারীর সমানেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন । এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করল প্রাক্তন বিধায়ক যোসেফ মুন্ডাকে । যোসেফ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন । ২০১৬তে কংগ্রেসের যোসেফ মুন্ডাকে হারিয়েই নির্বাচিত হয়েছিলেন শুক্রা মুন্ডা ।
নাগরাকাটা জলপাইগুড়ি জেলায় হলেও বিধানসভাটি আলিপুরদুয়ার লোকসভার অন্তর্গত । মেখলিগঞ্জ কোচবিহার জেলায় হলেও জলপাইগুড়ি লোকসভার অন্তর্গত । মেখলিগঞ্জেও এবার প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল । বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানের বদলে দলের মনোনয়ন পেলেন পরেশ অধিকারী । পরেশ অধিকারী ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে ঢুকেছেন বছর তিনেক আগে । ২০১৬তে পরেশ অধিকারীকে হারিয়েই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন অর্ঘ্য রায় প্রধান।
কালীঘাটের বাড়িতে দলের প্রা্থী তালিকা ঘোষণা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । |
২০১৬র জলপাইগুড়ি জেলার সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছয়টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল । ব্যতিক্রম ছিল জলপাইগুড়ি সদর । এখানে জোটের সুখবিলাস বর্মার কাছে হেরেছিলেন তৃণমূলের ধর্তিমোহন রায় । ধর্তিমোহন বাবু এখন বিজেপিতে । বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তিনিও একজন । ২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূলের পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয় । ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে মন্ত্রী গৌতম দেবের কেন্দ্রে তৃণমূল বিজেপির কাছে পিছিয়ে ৮৬ হাজার ভোটে । সদর বিধানসভায় পিছিয়ে ৩৩ হাজার ভোটে । ময়নাগুড়িতে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান কুড়ি হাজারের বেশি । মালে একুশ হাজার এবং ধুপগুড়ি বিধানসভায় ২৩ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল । একমাত্র রাজগঞ্জ বিধানসভা আসনে বিজেপির থেকে সাড়ে চার হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে তৃণমূল । বিধানসভা নির্বাচনে হাওয়া ঘুরবে বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি ।
ময়নাগুড়িতে মনোনয়ন বঞ্চিত অনন্তদেব অধিকারী কী পদক্ষেপ করেন এখন এই দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল । বেশ কয়েকবার মিডিয়ায় পিকের সমালোচনা করে দলে ভর্ৎসিত হয়েছেন তিনি । জলপাইগুড়ি সদর আসনের দিকে নজর ছিল কৃষ্ণ দাসেরও । কৃষ্ণবাবু রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার হলেও দলের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কতটা মধুর তা সকলের জানা । জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূলের প্রথম বিধায়কের নাম খগেশ্বর রায় । দশের উপনির্বাচনের পর এগারো এবং ষোলো – পরপর তিনবার জিতে হ্যাট্রিক করেছেন খগেশ্বরবাবু । কৃষ্ণ দাস রাজগঞ্জ কেন্দ্রে মনোনয়নের দাবিদার হলেও তিনবারের বিজয়ীকে বঞ্চিত করে নতুন কাউকে রাজগঞ্জে টিকিট দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব ছিল না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে । রাজগঞ্জে টিকিট পাওয়া সম্ভব নয় দেখেই জলপাইগুড়ি সদরে জোর দিয়েছিলেন কৃষ্ণ দাস । কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক প্রদীপকুমার বর্মাকেই বেছে নিল দল । পিকে বর্মা রাজনীতির বাইরের জগতের লোক । লোকসভায় বিপর্যয়ের পরে তৃণমূলের ইলেকশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নেয় প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক । ডঃ পিকে বর্মা আইপ্যাকের চয়েস বলেই জানা গেছে । তাঁকে দলে টেনে সদর বিধানসভা কেন্দ্রে কো অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দেয় তৃণমূল । তখন থেকেই কানাঘুষো চলছিল যে জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারেন প্রদীপকুমার বর্মা । শেষপর্যন্ত সদরে পিকে বর্মাকেই টিকিট দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের টিকিট লাভে বঞ্চিত কৃষ্ণ দাস কী প্রতিক্রিয়া দেন এখন এটাই দেখার ।
১)ডঃ পিকে বর্মা ২)গৌতম দেব ৩)জোসেফ মুন্ডা ৪)মিতালি রায় ৫)খগেশ্বর রায় ৬)বুলুচিক বরাইক ৭)মনোজ রায় । |
১) জলপাইগুড়ি সদর ( এসসি ) – ডঃ প্রদীপকুমার বর্মা
২) ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ( সাধারণ ) – গৌতম দেব
৩) রাজগঞ্জ ( এসসি ) – খগেশ্বর রায়
৪) ময়নাগুড়ি ( এসসি ) – মনোজ রায়
৫) ধুপগুড়ি ( এসসি ) – মিতালি রায়
৬) মাল ( এসটি ) – বুলুচিক বরাইক
৭) নাগরাকাটা ( এসটি ) – জোসেফ মুন্ডা
৮) মেখলিগঞ্জ ( এসসি ) – পরেশ অধিকারী