পর্দার মিনিস্টার 'ফাটাকেষ্ট' কি পাকাপাকি ভাবেই বাস্তবের রাজনীতিতে? - nagariknewz.com

পর্দার মিনিস্টার ‘ফাটাকেষ্ট’ কি পাকাপাকি ভাবেই বাস্তবের রাজনীতিতে?


পাঁচ দিনের রাজনৈতিক সফরে রাঢ়বঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তী। সফরসূচিই বলে দিচ্ছে পলিটিক্স নিয়ে কতটা সিরিয়াস পর্দার মিনিস্টারফাটাকেষ্ট’। বিশেষ প্রতিবেদন-

বিধানসভা নির্বাচনেই রাজ্যে বিজেপির হয়ে ময়দানে নেমেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। অনেকেই ভেবে ছিলেন, বাংলার ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের পর আর রাজনীতির ছায়া মাড়াবেন না মিঠুন। কিন্তু তাদের ভুল প্রমাণ করে মহাগুরু বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপিতেই আছেন এবং রাজনীতিটাকে বিনোদন নয় একটু সিরিয়াস ভাবেই নিচ্ছেন। ছাত্রজীবনে নকশাল করা মিঠুন বাম জামানায় সিপিএমের সান্নিধ্যে ছিলেন। সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর খাতিরের কথা সকলের জানা। তৃণমূলের আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিঠুনকে রাজ্যসভায় পাঠান। তবে সে সব এখন অতীত। নাগপুরে গিয়ে সংঘ প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পর থেকেই সিনেমার ফাটাকেষ্ট গেরুয়া শিবিরে।

মিঠুন রাজনীতিতে লেগে থাকতে চান

৭২ বছরের মিঠুনের মাথায় রাজনীতি নিয়ে কী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে, তা মিঠুন‌ই ভাল জানেন। তবে বাংলায় দলকে শক্তিশালী করতে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব যে এই জনপ্রিয় অভিনেতাকে কাজে লাগাতে চান, তা স্পষ্ট। একুশে মিঠুন চক্রবর্তীর মারকাটারি ডায়ালগ বাংলায় বিজেপির ভোট বৈতরণী পারে একটুও সাহায্য করে নি। বিধানসভা ভোটের সময় মোদির মঞ্চে মিঠুনকে দেখে তৃণমূল শিবির স্বাভাবিক ভাবেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিল। ভোটের পর তৃণমূল নেতারা মহাগুরুকে বিদ্রুপ করতে ছাড়েন নি। সে’সব গায়ে মেখে মিঠুন যে রাজনীতির মাঠ থেকে বরাবরের মতো সটকে পড়েন নি, এটাই বড় কথা।

সৌরভকে দিয়ে হয় নি শাহের

রাজ্য বিজেপির কান্ডারী অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সুকান্ত-শুভেন্দু রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন। তারপরেও যে অমিত শাহ-জেপি নাড্ডা বাংলায় দলের একজন জনপ্রিয় মুখ খুঁজছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে টানার অনেক চেষ্টা করেছিলেন শাহ। কিন্তু সাতপাঁচ বিবেচনা করে দাদা রাজনীতির পিচে ব্যাট করার রিস্ক নেন নি। শাহকে নিরাশ করার ফল হাতেনাতে পেতে অবশ্য দেরি হয় নি সৌরভের। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। বিধানসভা নির্বাচনের পর বাংলায় যত গুলি উপনির্বাচন ও স্থানীয় ভোট হয়েছে, তাতে বিজেপির ফল দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে হতাশ করার জন্য যথেষ্ট। এই মুহূর্তে নিয়োগ কেলেংকারি সহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে রাজ্যের শাসকদল বেশ বিপাকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যেও মমতার জনপ্রিয়তা আর আগের মতো নেই বলে রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ। বামেরা হৃত শক্তি খানিকটা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে কিনা, তা বলার সময় এখনও আসে নি। তবে বামেদের সভা-সমাবেশে ভিড় হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। সংখ্যালঘু ভোট বামের ঘরে ফিরে গেলে বিজেপির লাভ। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় দলকে উজ্জীবিত করতে মোদী-শাহ-নাড্ডা যে নতুন করে ঘুঁটি সাজাবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সফরসূচিই বলে দিচ্ছে মিঠুন সিরিয়াস

পঞ্চায়েত ভোটের পর্ব মিটলেই লোকসভা নির্বাচন। বাংলায় দলের জমিতে সার জোগাতেই মহাগুরুকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বুধবার থেকে রাঢ়বঙ্গে পাঁচ দিনের রাজনৈতিক সফরে পর্দার মন্ত্রী ফাটাকেষ্ট। মিঠুনের মাপের সুপারস্টারের জন্য টানা পাঁচ দিনের কর্মসূচি যেমন-তেমন ব্যাপার নয়। অভিনয় জগতের মহাগুরুর বয়স হয়েছে। শরীরটাও ভাল নয়। কাজেই রাজনীতি নিয়ে কতটা সিরিয়াস হলে মিঠুন পাঁচ দিন ধরে চার-পাঁচটা জেলা ঘুরে ঘুরে বিজেপির সংগঠন মেরামত করার দায়িত্ব কাঁধে নেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

পুরুলিয়ার লধুড়কায় বিজেপির সম্মেলনে সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তী।

বুধবার মিঠুন চক্রবর্তীর সভা ছিল পুরুলিয়ার লধুড়কায়। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। নামে বিজেপির পুরুলিয়া সাংগঠনিক জেলার পঞ্চায়েত কার্যকতাদের সম্মেলন হলেও কার্যত তা ছিল মিঠুনের জনসভা। মাঠে মিঠুন আসবেন কিন্তু লোক আসবে না, তাও কি হয়! রাঢ়বঙ্গের আদিবাসী বেল্ট এখন বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। যদিও বিধানসভা ভোটে আশানুরূপ ফল হয় নি। পঞ্চায়েত ভোটে উত্তরবঙ্গের পর রাঢ়বঙ্গেই বেশি নজর রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। পঞ্চায়েত কার্যকর্তাদের সম্মেলন দিয়ে গ্রামীণ ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিজেপি। বাংলায় বুথ স্তরে দলের সংগঠনের হাল-হকিকত যে বিশেষ সুবিধের নয়, তা অমিত শাহের চেয়ে ভাল আর কেউ জানেন না। এখন মিঠুনের চোখ দিয়েও সংগঠন জরিপ করতে চান শাহ। তাই বুধবার পুরুলিয়ার সভায় হাল্কা চালে কোনও সিনেমার ডায়ালগ ঝাড়েন নি পর্দার ফাটাকেষ্ট। বরং জনগণের অভাব-অভিযোগের কথা শুনেছেন। তৃণমূল সরকার ঢপের চপ বেচে বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েন নি।

মিঠুন বাংলায় বিজেপির সংগঠনে কতটা অক্সিজেন জোগাতে পারবেন তা সময়েই বোঝা যাবে। মিঠুন নিজে সংগঠনের কী বোঝেন, এটাও একটা বড় প্রশ্ন। তবে মিঠুন যে বিষয়টা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন, এটা স্পষ্ট। আর একটা কথা, মিঠুন চক্রবর্তী গ্রামে-গঞ্জে সভা করতে গেলে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রচারে যে বাড়তি জোশ আসবে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রাজ্য বিজেপির নেতারাও তেমনটাই মনে করছেন।

Photo Credit- WB BJP Official FB page.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *