বিলেতবাসী হলেই যে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতি ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সাহেব হয়ে যাওয়া মোটেই জরুরী নয়- নিজের আচরণ দিয়ে সেই উদাহরণই রেখে চলেছেন ঋষি সুনক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জন্ম-শিক্ষা-কর্ম সবই বিলেতে। ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন থাকলে হয়ে যেতে পারেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও। পরিচ্ছদে আপাদমস্তক পশ্চিমী মনে হলেও অন্তরে যে তিনি একজন ভারতীয় এবং হিন্দু তার প্রমাণ বারেবারে দিয়েই চলেছেন ঋষি সুনক। নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার পালনে কোনও হীনমন্যতা নেই ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষির। সদ্য ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপিংয়ে দেখা যাচ্ছে গোমাতার পুজো করছেন সস্ত্রীক ঋষি সুনক। উল্লেখ্য ঋষি সুনকের স্ত্রী অক্ষতারও একটি আলাদা পরিচয় আছে। অক্ষতা ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ কৃষ্ণমূর্তির মেয়ে।
ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল দলের অন্যতম নেতা ঋষি সুনক দলের ভেতরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে জোর লড়াই দিয়ে যাচ্ছেন। ঋষির স্বপ্ন সফল হলে তিনিই হবে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম অভিবাসী রাষ্ট্রপ্রধান। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে একটি গরুর সামনে দাঁড়িয়ে প্রদীপ হাতে আরতি করছেন সুনক দম্পতি, ঠিক যেমনটি করে থাকেন ধর্মপ্রাণ কোনও হিন্দু দম্পতি। লন্ডনের একটি গোশালায় গিয়েছিলেন ঋষি ও তাঁর স্ত্রী অক্ষতা।সেখানেই গোমাতার পূজন সারেন তাঁরা। ঘন্টা ও উলুধ্বনির মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ গোমাতার পুজো করেন দু’জন। ট্যুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গোপূজনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই মুহুর্তে ভাইরাল।
ঋষি সুনকের বয়স মাত্র বিয়াল্লিশ। ১৯৮০ সালের ১২ মে ইংল্যান্ডের বন্দর নগরী সাউদাম্পটনে ঋষির জন্ম। বাবা যশবীর সুনক। মায়ের নাম উষা। যশবীর ও উষা- দু’জনের বাবা-মা’ই ছিলেন অবিভক্ত পাঞ্জাবের বাসিন্দা। জীবিকান্বেষণে তাঁরা পূর্ব আফ্রিকায় পাড়ি জমান। যশবীরের জন্ম কেনিয়ায়। উষা জন্মগ্রহণ করেন তানজানিয়ায়। ষাটের দশকে যশবীর ও উমা- উভয়ের বাবা-মা’ই পূর্ব আফ্রিকা ত্যাগ করে ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন।
ব্রিটেনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ক্যাবিনেটে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন ঋষি সুনক। বোঝাই যাচ্ছে এত অল্প বয়সে রাজনীতিতে কতটা সাফল্য অর্জন করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি। সুনক দম্পতির সম্পদের পরিমাণও চোখে পড়ার মতো। ঋষি সুনক ও অক্ষতার মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড! ইংল্যান্ডের ধনী দম্পতিদের তালিকায় এক নম্বর জায়গাটাই সুনক দম্পতির দখলে। এহেন ঋষি সুনককে সস্ত্রীক গোমাতার পুজো করতে দেখে খুব সঙ্গত কারণেই বেজায় উচ্ছ্বসিত ভারতের জনগণ। বিজেপি সমর্থক এবং হিন্দুত্বের অনুগামীদের চোখে বিষয়টি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে হয়েছে।
আসলে ভারতীয় সংস্কৃতি ও সনাতন ধর্মের প্রতি ঋষি সুনকের নিষ্ঠা নতুন কিছু নয়। প্রথমবার হাউস অব কমন্সের সদস্য হওয়ার পর শ্রীমদ্ভগবদগীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। জন্মাষ্টমীর দিন তাঁকে দেখা গেছে লন্ডনের ভক্তিবেদান্ত মন্দিরে। বিলেতবাসী হলেই যে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতি ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সাহেব হয়ে যাওয়া মোটেই জরুরী নয়- নিজের আচরণ দিয়ে সেই উদাহরণই রেখে চলেছেন ঋষি সুনক।
ভিডিওতে দেখুন ঋষি সুনকের গোপুজো-
Photo and video credit-Twitter