জলপাইগুড়ি : শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ এমনকি এসএসসি-র অশিক্ষক কর্মী নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টে মামলার পর মামলা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার পরেই সামনে আসছে একের পর এক ঘোটালা। হাইকোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই হাইস্কুল শিক্ষিকার চাকরি গেছে মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যার। টেট দুর্নীতির মামলাতেও ২৬৯জন প্রাথমিক শিক্ষককে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বেআইনিভাবে নম্বর বাড়িয়ে এদের চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছিল রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছে হাইকোর্ট।
১৪-র টেট নিয়ে প্রথম থেকেই অনিয়মের অভিযোগ
২০১৪ সালে রাজ্যে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল পনেরোর অক্টোবরে। ফল বেরিয়েছিল ষোলোর সেপ্টেম্বরে। এই নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় মেধা তালিকা নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগের পাহাড়। হাইকোর্টের নির্দেশে যে ২৬৯ জনের চাকরি গেল তারা প্রত্যেকেই নিয়োগ পেয়েছিল এই দ্বিতীয় মেধা তালিকা থেকে। তদন্ত যতই এগোবে দুর্নীতির ঝাঁপি ততই আরও উন্মুক্ত হবে বলে সকলের আশঙ্কা। এবং বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের সংখ্যাটা ২৬৯-এই আটকে না থেকে আরও অনেক বাড়বে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
১৪-র টেট নিয়ে আগাপাশতলা অনুসন্ধানের নির্দেশ
এদিকে নিয়োগ দুর্নীতির শেষ দেখতে ২০১৪-র টেট নিয়ে আগাপাশতলা ছানবিন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪ সাল থেকে জেলায় জেলায় যত শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের যাবতীয় নথি ফের পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলে রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালতের ঠ্যালা খেতেই নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষা দফতর। রাজ্যের প্রতিটি ডিপিএসসি-কে ১৪ থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রত্যেক শিক্ষকের নথি কলকাতায় পাঠাতে বলেছেন স্কুল শিক্ষা দফতরের সচিব। এই নির্দেশিকা জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদেও এসে পৌঁছেছে বলে শনিবার স্বীকার করে নিয়েছেন সংসদের সভাপতি লৈখ্যমোহন রায়।
নিয়োগপ্রাপ্তদের নথি খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম দশা
শিক্ষা দফতরের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পর চোখে সর্ষেফুল দেখছেন ডিপিএসসি-র আধিকারিকেরা। ২০১৪-য় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। পরীক্ষা হয়েছিল তারও এক বছর পরে। সাত বছর আগে হয়ে যাওয়া পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্তদের নথিপত্র খুঁজতে গিয়ে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের কর্মীদের। নিয়োগ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের আবেদনপত্র, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক ও ডিএলএডের মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের কপির পাশাপাশি তারা কোন স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছিল, পরীক্ষার হলে তাদের উপস্থিতির প্রমাণ এবং পরীক্ষার খাতা সংগ্রহ করে পাঠাতে বলা হয়েছে। চেয়ে পাঠানো নথির তালিকা দেখে মাথায় হাত পড়াই স্বাভাবিক।
অনেকের নথিই মিলছে না
কলকাতা থেকে সচিবের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই দফতরের আলমারিগুলি তন্নতন্ন করে ঘাঁটা শুরু করে দিয়েছেন ডিপিএসসির কর্মীরা। ধুলো ঝেড়ে সাত বছর আগের ফাইল নামাচ্ছেন। অনেকের নথিই যে পাওয়া যাচ্ছে না তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন জলপাইগুড়ি ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান লৈখ্যমোহন রায়। কিন্তু মাথার উপর হাইকোর্টের খাঁড়া ঝুলছে। পাওয়া যাচ্ছে না বললেই যে পার পাওয়া যাবে না তা বিলক্ষণ জানেন লৈখ্যমোহনবাবু। যে’ভাবেই হোক সমস্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের যাবতীয় নথি জোগাড় করতে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ডিপিএসসি চেয়ারম্যান। শেষ পর্যন্ত সবার কাগজপত্রই পাওয়া যাবে বলে এখনও আশা রাখছেন তিনি।
ভিডিও-
Phকoto and video- Reporter.