কাগজওয়ালারা মুষিক অথবা মার্জারকে হাওয়া দিতে দিতে যে বাঘ বানায় মানুষ তাকে বলে ‘কাগুজে বাঘ’!
বাঘেদের জগতে রাজা হচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল বাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল প্রজাতির বাঘেদের মধ্যে আবার সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গলই সেরা। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের রাজকীয় চালচলন, সৌন্দর্য, ক্ষিপ্রতা এবং পরাক্রম মানুষেরও ঈর্ষার বস্তু। মানুষ বাঘকে ভয় করে আবার ভালও বাসে। বাঘ মানুষকে কী চোখে দেখে জানা না গেলেও বাঘের রূপে-গুণে এবং বিক্রমে মানুষ মুগ্ধ। এই জন্য মনুষ্য সমাজে বীরত্ব-বিক্রমের বিশেষণ হিসেবে বাঘকে নিয়ে চিরকালই টানাটানি। সাহসী বীরকে গুণমুগ্ধরা ব্যাঘ্রের সঙ্গে তুলনা করতে ভালবাসে। দোপেয়ে বীরেরা নিজেরাও স্বীয় পিতৃদত্ত নামের আগে ব্যাঘ্র বসলে সবিশেষ সন্তুষ্ট হন।
রয়্যাল বেঙ্গল বাঘ বাঙালির নিজের জিনিস। ঘরের জিনিস। বাঘের তুল্য সৌন্দর্য এবং শৌর্য থেকে গড় বাঙালি বঞ্চিত হলেও বাঙালি সর্বদাই স্বজাতি এবং স্বগোত্রের মধ্যে বাঘ-বাঘিনী খুঁজে বেড়ায়। আশুতোষ মুখার্জির দাপটে খুশি হয়ে বাঙালি তাঁকে ‘বাংলার বাঘ’ বলত। বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় গ্রামে স্বহস্তে বাঘ মারার পর থেকেই ‘বাঘাযতীন’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনার বিরুদ্ধে বীরত্ব দেখানোয় টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকীকে লোকে নাম দিয়েছিল ‘বাঘা সিদ্দিকী’।
তবে কিনা সময় সময় ভুল করে বাঙালি বিড়ালকেও বাঘ বানিয়ে ফেলে। বাঙালির অতিরিক্ত ব্যাঘ্র প্রীতিই এর কারণ বলে মনে হয়। কাগজওয়ালারা মানে সংবাদ মাধ্যমও বাঘ বানানোতে ওস্তাদ। কাগজওয়ালারা মুষিক অথবা মার্জারকে হাওয়া দিতে দিতে যে বাঘ বানায় মানুষ তাকে বলে ‘কাগুজে বাঘ’। কাগুজে বাঘ আগেও ছিল। এখনও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। কাগুজে বাঘ সাংবাদিক সম্মেলনে হালুম-হুলুমে ওস্তাদ। দল সরকারে থাকলে কাগুজে বাঘের পা অহঙ্কারে মাটিতে পড়ে না। সরকার প্রধানের হাত মাথায় থাকলে কাগুজে বাঘ পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিতেও ভয় পায় না। নিরস্ত্র বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে কাগুজে বাঘের জুড়ি নেই। ৩৬৫ দিনই মিডিয়ার দৌলতে এই বাঘের হাঁকডাক মানুষকে শুনতে হয়। চ্যানেলে চ্যানেলে এই বাঘের হালুম-হুলুম শুনতে শুনতে পাবলিকেরও এক সময় ধারণা হয়ে যায়- এ বুঝি সত্যিই আস্ত একটা বাঘ।
কিন্তু ঘরে সিবিআই-এর চিঠি আসলেই বাঘের গলা দিয়ে যখন বিড়ালের আওয়াজ বেরোতে শুরু করে তখন লোকে বুঝতে পারে- আরে এ তো বাঘ না, বিলাই! খ্যাঁক শেয়ালের মতোই ভীতু এবং ধূর্ত একটি দোপেয়েকে ক্রমাগত গ্যাস দিয়ে দিয়ে ব্যাঘ্রে পরিণত করেছে মিডিয়া। বাঙালি শের ভালবাসে শেয়াল নয়।
লিখেছেন উত্তম দেব
Feature image is representational.