১০৮ পুরসভার ভোটে যে’কটি আসনে বিরোধীদের দয়া দেখানো হয়েছে, সে’কটিও তাদের না দিলে পশ্চিমবঙ্গের মহান গণতন্ত্রের কী এমন গৌরবহানি হত ?লিখলেন উত্তম দেব-
১০৮টি পুরসভার মধ্যে তৃণমূল একাই ১০২! একটি সিপিএম- নদীয়ার তাহেরপুর পুরসভা। একটি অন্যান্য- দার্জিলিং পুরসভা। আর চারটি ত্রিশঙ্কু- সবকটিই তৃণমূলের করতলগত হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অর্থাৎ ১০৮-এ তৃণমূলের গ্রাস থেকে রক্ষা পেল মাত্র দুটি। তাহেরপুর বামেদের দখলেই ছিল। এই বাজারেও দুর্গ অটুট রেখে নিঃসন্দেহে সবাইকে চমকে দিয়েছে বাম শিবির। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির খাতা শূন্য। একই অবস্থা কংগ্রেসের। এই প্রথম বহরমপুর পুরসভা হাতছাড়া হাতের।
১০৭টি পুরসভার ২ হাজার ২৭৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল একাই ১ হাজার ৯৭৬! বিজেপি ৬৩, বামেরা ৫৬, কংগ্রেস ৫৯ এবং নির্দল ও অন্যান্য ১১৯। বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৩.৫৭ শতাংশ। বিজেপির ১৩.৪২ শতাংশ। কংগ্রেসের ৫.০৬ শতাংশ। এবং নির্দল ও অন্যান্যদের ৫.৫১ শতাংশ। সবাই মিলেঝুলে ৩৭.৫৬ শতাংশ। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৬২.৪৪ শতাংশ।
১০৮টি পুরসভার মধ্যে ৩৬টি বিরোধী শূন্য। অর্থাৎ তিরিশ শতাংশের বেশি পুরসভায় শাসকদল একশোতে একশো! এগারোয় ক্ষমতায় আসার পর দেখা যাচ্ছে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের রেকর্ড তৃণমূলই ভাঙছে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে প্রিয় শব্দবন্ধ গুলি হল – ২৯৪-এ ২৯৪, ৪২-এ ৪২। বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত, বিরোধী শূন্য পুরসভাও তাঁর কাঙ্ক্ষিত এবং এই আকাঙ্ক্ষাটা দলের ছোট-বড়-মেজ-সেজ সকলের মধ্যে চাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এ’বার কলকাতা পুরসভা দিয়ে শুরু। তারপর চার কর্পোরেশনের নির্বাচন। অতঃপর ১০৮ পুরসভার ভোট। পরপর ফল যা এসেছে তাকে এক কথায় বিরোধী শূন্যই বলা ভাল। কারণ এর চেয়েও নিখুঁত বিজয় কিম জং ইল ব্যতীত আর কারও পক্ষেই করে দেখানো সম্ভব নয়। মানুষ ভাত খেতে বসলে যে কয়টি ভাত পাতের বাইরে পড়ে তার চেয়েও কম আসন বিরোধীদের বরাদ্দে জুটছে পুরভোটে।
ভোটের দিনই কপালে কী আছে বুঝতে পেরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দুঃখ করে বলেছিলেন- পশ্চিমবঙ্গে পুরসভা ও পঞ্চায়েতে ইলেকশন তুলে দিয়ে সিলেকশন করে দেওয়া হোক। ঝড়-সাইক্লোন-টাইফুন কিম্বা সুনামি, কোনও বিশেষণই তৃণমূলের বিজয়কে প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়। পশ্চিমবঙ্গ পুরসভা-পঞ্চায়েত নির্বাচন মানেই বিরোধীদের অভিযোগ-ছাপ্পা, বুথ দখল, ভোট লুঠ আর সন্ত্রাস। তৃণমূলের দাবি- ভোট হয়েছে উৎসবের মেজাজে। হার নিশ্চিত জেনে মিথ্যে বলছে বিরোধীরা। আর নির্বাচন কমিশনের বাঁধা বয়ান- বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ। এইবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে এই আশা ক্ষীণ।
শাসক এবং কমিশন সর্বদাই ঠিক। ভোটের দিন টিভিতে যা যা ঘটতে দেখেছি তা প্রপঞ্চ মাত্র। চেনাজানা অনেকেই বুথে গিয়েও ভোট না দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সেইসব ঘটনাও মায়া। শুধু একটাই প্রশ্ন- কলকাতা, চার কর্পোরেশন এবং ১০৮ পুরসভার ভোটে যেকটি আসন বিরোধীদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে সে’কটিও দয়া করে তাদের না দিলে পশ্চিমবঙ্গের মহান গণতন্ত্রের কী এমন গৌরবহানি হত?
নিজস্ব ফটো।