সুর ও সঙ্গীতের জগতে পরপর ইন্দ্রপতন! ৬ ফেব্রুয়ারি গেলেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। ১৫ ফেব্রুয়ারি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সন্ধ্যা বিদায়ের রাত পোহাতেই আবার দুঃসংবাদ। দিনের আলো ফোটার আগেই মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন হিন্দি সিনেমার প্রখ্যাত প্লেব্যাক গায়ক ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ি। মাত্র বারো দিনের ব্যবধানে সুরের তিন সাধক-সাধিকার বিদায়।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়ি শহরে বাপ্পি লাহিড়ির জন্ম। অপরেশ ও বাঁশরী লাহিড়ির একমাত্র পুত্র বাপ্পির পিতৃদত্ত নাম অলোকেশ। বাড়িতে সঙ্গীতের চর্চা ছিল। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন বড় মাপের সঙ্গীতজ্ঞ। মা বাঁশরী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইতেন। কাজেই গানবাজনার পরিবেশেই অলোকেশের বড় হয়ে ওঠা। ছোটবেলায় তবলায় তালিম অলোকেশের। মাত্র উনিশ বছর বয়সে চোখে স্বপ্ন নিয়ে উত্তরবঙ্গের মফস্বল শহর থেকে মুম্বাইয়ে পাড়ি। সত্তর ও আশির দশক জুড়ে বলিউডের হিন্দি সিনেমার নেপথ্যে ” বাপ্পি” নাম নিয়ে রাজ করেছেন জলপাইগুড়ির অলোকেশ।
বলিউডি সিনেমার হিন্দি সঙ্গীতে ওয়েস্টার্ন ইন্সট্রুমেন্ট ও সুরের ব্যবহার আর ডি বর্মনের হাত ধরে। তাকে আরও প্রসারিত করেন বাপ্পি। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি আমেরিকার ‘ডিস্কো মিউজিকের’ ভারতীয়করণ করেন বাপ্পি লাহিড়ি। যা সেই সময় দেশের তরুণ প্রজন্মকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছিল। বক্স অফিসে হিট এমন অসংখ্য হিন্দি সিনেমার মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন বাপ্পি। বাপ্পি লাহিড়ির গাওয়া ও সুর দেওয়া গান যুবকদের মুখে মুখে ফিরত। টলিউডের অনেক সুপারহিট বাংলা মুভিতেও গান গেয়েছেন, সুর দিয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ি।
ভরাট গলার মতো চেহারায়ও ছিলেন ভারি। খেতে ভালবাসতেন খুব। খাওয়াতেও। দুর্বলতা ছিল সোনার প্রতি। সর্বাঙ্গ মুড়িয়ে রাখতেন সোনার অলঙ্কারে। গত বছর এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন মুম্বাইয়ের ব্রিচক্যান্ডি হসপিটালে। কোভিড থেকে সেরে উঠলেও শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার শেষ রাতে ” অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ( ওএমএস)- তে আক্রান্ত হয়ে ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন ডিস্কো কিং, ‘ আই অ্যাম অ্যা ডিস্কো ড্যান্সার’- এর গায়ক।