গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে বেজিংয়ের হাঁড়ি ভরা হাটে ভাঙল অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া।
বিশেষ প্রতিবেদন : ভারতীয় সেনা জওয়ানদের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে গালওয়ান নদীতে ডুবে জান গিয়েছিল ৩৮ জন চিনা সৈন্যের। গালওয়ানে ভারত-চিন সংঘর্ষের ১ বছর ৭ মাসেরও বেশি সময় পরে চিনা সেনাবাহিনীর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির কথা ফাঁস করে দিল অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র ‘ক্ল্যাক্সন‘। ২০২০-এর ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঘাঁটি গাড়ে চিনা আর্মি পিএলএ’র দেড়শত সদস্য। ভারতীয় সেনা সরে যেতে বললে গা জোয়ারি শুরু করে পিএলএ। ভারতের জমিতে নির্মাণকাজ পর্যন্ত আরম্ভ করে দেয় চিনা সেনাবাহিনী। ঘটনাস্থলে গিয়ে ভারতীয় সেনা জওয়ানেরা নির্মাণে বাধা দিলে তাদের উপর লাঠি, লোহার পাইপ এবং মাথায় পেরেক লাগানো লম্বা বাটাম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে চিনা সৈন্যরা। ভারতের বাহাদুর জওয়ানেরা পাল্টা রুখে দাঁড়ালে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৪ হাজার ফুট উঁচু হিমালয়ের দুর্গম উপত্যকায় দুই পক্ষে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
সংঘর্ষে কর্ণেল বি সন্তোষ বাবু সহ ২০ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান শহিদ হন। কিন্তু চিনের তরফে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই জানায় নি বেজিং। ঘটনার পরপরই ভারতীয় সেনা কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তাদের প্রত্যাঘাতে কমপক্ষে জনা পঞ্চাশেক চিনা সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে।কিছু দিন পরে এক অফিসার সহ চার সৈন্যের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে পিএলএ। গালওয়ান সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য চিনের কমিউনিস্ট সরকার চেপে গেলেও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং সমর বিশেষজ্ঞদের প্রথম থেকেই অনুমান চিনের তরফে হতাহতের সংখ্যা ঘোষিত সংখ্যার অনেক বেশি। ভারত সরকার সংঘর্ষে মৃত সৈনিকদের বীরের সম্মান দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করে। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় সেই খবর প্রচারিত হয়। পক্ষান্তরে গালওয়ানে মৃত পিএলএ সৈনিকদের কথা চিনের নাগরিকদেরই অগোচরে থেকে যায়। ফলে সৈনিকদের মৃত্যুর কথা সরকার গোপন করায় চিনের ভেতরেও একটা চাপা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল সে’সময়।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র ক্ল্যাক্সনে বৃহস্পতিবার যে বিরাট প্রতিবেদনটি বেরিয়েছে তার শিরোনাম- “Major drowning” of Chinese soldiers in India skirmish: new claims. বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়- ” ভারতে খন্ডযুদ্ধে চিনের সৈনিকদের বড় সংখ্যায় ডুবে মরা : নতুন দাবি “। ক্ল্যাক্সনের প্রতিবেদনটি বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দাবি করছে, ২০২০-এর ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষ চলাকালে ভারতীয় সেনাদের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে বেদিশা হয়ে পড়ে পিএলএ’র সৈন্যরা। সামনেই ছিল খরস্রোতা গালওয়ান নদী। অন্ধকারে নদী ঠিকমতো ঠাহরও করতে পারে নি চিনা সেনারা। জলে ঝাঁপ দিতেই স্রোতে তলিয়ে যায় অনেকে। অস্ট্রিলিয়ান সংবাদপত্র বলছে সেই সংখ্যাটা আটত্রিশ।
প্রতিবেনটিতে প্রকাশিত তথ্য সত্য হলে গালওয়ান সংঘর্ষে চিনের তরফে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেয়াল্লিশ, যা ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের দাবির কাছাকাছি। গালওয়ান সংঘর্ষে চিনের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত সংখ্যা জানতে তারা দীর্ঘ অনুসন্ধান, চিনের ভেতরে নজরদারি ও গবেষণা চালিয়েছে বলে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রটির দাবি। সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষে সংখ্যা সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়ার পরেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ‘ক্ল্যাক্সন’।
Photo Credit- www.theklaxon.com/xinhua and Globel Times. Feature Image- Representational.