আমডাঙা: অভিজ্ঞ লোকেরা বলে থাকেন, অনেক আগেই গন্ধ টের পেয়ে যায় পুলিশ। লোকসভা নির্বাচনের ফল যাই হোক তাতে পরদিনই নবান্নে পালাবদলের সম্ভাবনা নেই। তবে চব্বিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ফল খারাপ হলে মমতার সরকার খুব তাড়াতাড়ি টালমাটাল হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পুলিশ কি বাংলার রাজনৈতিক ভবিষ্যত আগাম টের পেয়ে গেল? নইলে আমডাঙার মতো জায়গায় তৃণমূলের স্থানীয় দাপুটে নেতাকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে তার হাত ভেঙে দেয় পুলিশ! উত্তর চব্বিশ পরগনার আমডাঙা ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সেই আমডাঙার ব্লক আইএনটিটিইউসি সভাপতি মোস্তাক আহমেদ মন্ডল। শনিবার রাতে পুলিশের প্রচন্ড মারে আহত মোস্তাক।
পুলিশের মারে মোস্তাকের গতরে যতটা না ব্যথা লেগেছে তার চেয়েও বেশি ব্যথা লেগেছে মনে। রবিবার দুপুরেও ‘ট্রমা’ কাটিয়ে উঠতে পারেন নি তৃণমূলের এই দাপুটে শ্রমিক নেতা। একে সংখ্যালঘু তায় শাসকদলের নেতা। ঘটনায় প্রচন্ড শকড মোস্তাক আহমেদ মন্ডলের একটাই প্রশ্ন- তাকে এইভাবে রাস্তায় ফেলে পেটাতে পারল স্থানীয় থানার পুলিশ? বিভিন্ন সূত্র মারফত যা জানা যাচ্ছে, শনিবার রাতে অনুগামীদের নিয়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন মোস্তাক। তখনই রাস্তায় মোস্তাকের এক অনুগামীকে ধরে ধোলাই দিচ্ছিল পুলিশ। রাস্তায় গোলমালের আওয়াজ পেয়ে চায়ের দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে চার্জ করেন মোস্তাক আহমেদ মন্ডল। পুলিশ মোস্তাককে রেয়াত না করে তাঁকেও রাস্তায় ফেলে ঠ্যাঙাতে শুরু করে বলে অভিযোগ।
পুলিশের মারের চোটে মোস্তাকের বামহাত
ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা শাসকদলের কর্মীরা হতভম্ব হয়ে যান। তাদের চোখের সামনেই আহত মোস্তাককে তুলে আমডাঙা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাজ্য পুলিশের হাতে তাদের নেতাকে মার খেতে হবে, এমন মানসিক প্রস্তুতি তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের ছিল না। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে টায়ার জ্বালিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তারা। আমডাঙা থানার সামনেও বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক, জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী, আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান সহ অন্যান্যরা।
লোকসভা নির্বাচনের মরশুম। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ভার নির্বাচন কমিশনের হাতে। প্রশাসনকে কমিশনের নির্দেশ মতো চলতে হচ্ছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ আরও কড়া পদক্ষেপ করতে পারে, বিক্ষোভকারীদের এই কথা বুঝিয়ে বলার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ইতিমধ্যে আহত মোস্তাককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায় আমডাঙা থানার পুলিশ। হাসাপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে হাতে প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায় অবরোধস্থলে এসে হাতজোড় করে বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফিরে যেতে বলেন তিনি। পুলিশ তাঁকে অনেক লাঠি মেরেছে বলে সাংবাদিকদের জানান মোস্তাক। এমনকি হাত-পায়ে ধরলেও থামে নি। পুলিশের তরফে যাঁরা মেরেছেন তাঁদের সবাইকেই তিনি ভাল চেনেন বলেও জানিয়েছেন মোস্তাক। চেনাশোনা পুলিশের হাতে এইভাবে মার খাওয়ার দুঃখ কিছুতেই ভুলতে পারছেন না আমডাঙার এই টিএমসি নেতা। আমডাঙা থানার আইসির ভূমিকা মোস্তাক আহমেদ মন্ডলের কাছে রহস্যজনক ঠেকছে।
আমডাঙার মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশের মারে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের দাপুটে নেতার হাত ভাঙার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই মোস্তাক পুলিশের হাতে প্রহৃত বলে কানাঘুষো চলছে। ব্যারাকপুরের পার্থ ভৌমিকের অবস্থা যথেষ্টই নড়বড়ে। তৃণমূলের বহু নেতা এমনকি আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান পর্যন্ত তলে তলে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলে বাজারে গুঞ্জন। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ আর আগের মতো শাসকদলের নেতাদের খাতির করছে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে অনেকেই বলছেন, শুধু ব্যারাকপুরের ফলের আভাস পেয়েই পুলিশ মোস্তাক আহমেদ মন্ডলের প্রতি কঠোর হয় নি; গোটা রাজ্য থেকে আসা গোপন খবরও তাদের প্রভাবিত করে থাকতে পারে।