কলকাতা: ২৪ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ঘাসফুল ছেড়েছিলেন সোমবার দুপুরে। বুধবার সন্ধ্যা নামার আগেই পদ্মফুল হয়ে গেলেন তাপস রায়। বঙ্গ সফরে এসে মোদী যেদিন কলকাতা থেকে বারাসত ঝড় তুলে দিলেন, সে’দিনই বিজেপির হয়ে গেলেন তাপস। রাজ্য বিজেপির সল্টলেকের দফতরে তাপস রায়ের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের ইন-চার্জ মঙ্গল পান্ডে ও প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহা।
তাপস রায়ের বিজেপিতে যোগদান লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের জন্য নিঃসন্দেহে একটা বড় ঝটকা। তাপস দল ছাড়তে চলেছেন, টের পেয়ে তাঁকে আটকাতে মরীয়া চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু দলের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেও দীর্ঘ অবহেলার শিকার তাপসের মন ঘোরানো যায় নি। সোমবার তৃণমূল ছাড়ার ঘোষণার পরপরই বিধানসভার স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন বরানগরের বিধায়ক। তিনি ছিলেন বিধানসভায় তৃণমূল পরিষদীয় দলের উপমুখ্যসচেতক। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তৃণমূলের অনেকের থেকে ঝানু হলেও দলে কখনও বড় পদ বা মন্ত্রিত্ব পান নি তাপস রায়। তৃণমূলের ভেতরে অভিষেকে লবির লোক বলেই পরিচিতি ছিল তাঁর।
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দলে ব্রাত্য হয়ে পড়ায় মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত ছিলোই তাপস রায়ের। শোনা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতা আসনে তৃণমূলের তরফে মনোনয়নের দাবিদার ছিলেন তাপস। কিন্তু সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে তাঁকেই টিকিট দেওয়ার হতে পারে, এমন কোনও আশ্বাস কালীঘাট থেকে না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উত্তর কলকাতার এই প্রবীণ রাজনীতিক। গত ১২ জানুয়ারি পুরসভার নিয়োগ মামলায় তাপস রায়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বাড়িতে ইডির তল্লাশির জন্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই সোমবার অভিযোগের আঙুল তোলেন তাপস। দলের লোকেরাই ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাপস রায়।
তাপস যে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এই গুঞ্জন বেশ কয়েক দিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল। সোমবার তাপস তৃণমূল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে বরানগরের বিধায়কের পরবর্তী গন্তব্য বিজেপি। তৃণমূলের বিধায়ক হিসেবে তাঁর পদত্যাগপত্র এখনও স্বীকার করেন নি স্পিকার, যদিও সেই অপেক্ষায় না থেকে নতুন দলে যোগদানের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন তাপস রায়। এদিন বিজেপিতে যোগদান শেষে তাপস সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আজ থেকে বিজেপি পরিবারের এবং মোদী পরিবারের একজন সদস্য হলাম। যতদিন রাজনীতিতে আছি, ততদিন এই পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার উপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত হবে, তা সুচারুভাবে পালন করব।” তাপস রায় আরও বলেন, “বাংলার বুকে যে অরাজক পরিস্থিতি চলছে, তা ঘোচানোর চেষ্টা করব। দলের প্রতি আমি ১০০ শতাংশ সৎ থাকব।’’
তাপস রায় তৃণমূলের সেই বিরল নেতাদের একজন, পুর নিয়োগ দুর্নীতির আগে পর্যন্ত যাঁর বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে নি। পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তাঁর বাড়িতে ইডির অভিযানকে দলের তরফে চক্রান্ত বলেই মনে করছেন তাপস। সোমবার তাপস বলেছিলেন, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত তৃণমূলে তাঁর মতো মানুষের পক্ষে আর থাকা সম্ভব নয়। বুধবার বিজেপিতে যোগদানের পরেও একই অভিযোগ করলেন তিনি। তাপস রায় বলেন, “বাংলার বুকে অরাজক পরিস্থিতি চলছে। একটি সরকার চলছে, যে সরকার শেখ শাহজাহানদের সরকার। উত্তম সর্দারদের সরকার। জয় হাজরাদের সরকার। শিবু হাজরাদের সরকার। যে সরকার সংবিধান, আইনকানুনের কথা বলে কিন্তু হাইকোর্টের রায় মানে না, নির্দেশ মানে না। সুপ্রিম কোর্টের রায় মানে না, নির্দেশ মানে না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগামী দিনে এই অমানবিক জলদস্যুদের হটিয়ে শান্তির বাংলা গড়তে হবে।”
উত্তর কলকাতা কেন্দ্র থেকে তাপস রায় বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন। জল্পনা সত্যি হয় কিনা, দেখার জন্য আরও দু-একদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে রাজনৈতিক মহলকে।
Feature image- NNDC.