সায়েন্স ডেস্ক: চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’এর পা ফেলার এক সপ্তাহ হল। গত বুধবার (২৩ অগাস্ট, ২০২৩) ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪ মিনিটে চাঁদকে স্পর্শ করেছিল বিক্রম। তখন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভোর হচ্ছিল। ভোরের আলোয় বিক্রমের দরজা খুলে র্যাম্প বেয়ে চাঁদের বুকে গুটি গুটি ছয় পায়ে নেমে এসেছিল রোভারের প্রজ্ঞানও। চাঁদের মাটিতে আঁচড় কেটে কেটে এখন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর অনুসন্ধানে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রজ্ঞান। প্রজ্ঞান যা জানছে তা ‘ল্যান্ডার মডিউল’ মারফত ইসরোর গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠিয়েও দিচ্ছে। চাঁদ থেকে আসা যাবতীয় আপডেট ‘ভেরিফায়েড’ এক্স হ্যান্ডেলের মাধ্যমে দেশবাসীর সঙ্গে নিয়মিত শেয়ারও করে চলেছে ইসরো।
মঙ্গলবার ইসরো জানাল, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সালফারের সন্ধান পেয়েছে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। ভারতের ল্যান্ডারের অবতরণের আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছিল পৃথিবীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চাঁদের ‘ফার সাইড’ বা দূর প্রান্ত নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। পৃথিবীর সমস্ত মহাকাশ গবেষকদের হয়ে সেই কৌতূহল নিবারণের কাজটি এখন করে চলেছে ভারতের ‘প্রজ্ঞান’। সালফারের পাশাপাশি চাঁদে অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালিশিয়াম, লোহা, ক্রোমিয়াম, টাইটানিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং সিলিকন এবং অক্সিজেনের মতো যৌগের অস্তিত্ব মিলেছে বলে ইসরোর টুইটে জানানো হয়েছে। হাইড্রোজেনের খোঁজ চালাচ্ছে রোভার প্রজ্ঞান।
২৬ কেজি ওজনের রোবটিক যান প্রজ্ঞানে রয়েছে লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেক্ট্রোস্কোপ (এলআইবিএস) যন্ত্র। যা চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে বিভিন্ন খনিজের নমুনা সংগ্রহ করে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ মেরুতে চাঁদের উপরিভাগ থেকে মাটির নীচে ১০ সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে চার্ট পৃথিবীতে পাঠিয়েছে প্রজ্ঞান। রোভারটির গতি ঘন্টায় মাত্র ১ সেন্টিমিটার। কিন্তু গতি যাই হোক, থেমে নেই ভারতের প্রজ্ঞান। ধীরে, অতি ধীরেই সাত দিন ধরে চাঁদের মাটিতে ঘুরছে সে। চাঁদের অচেনা মাটি গভীর খানাখন্দে ভরা। চলতে চলতে সামনে গাড্ডা পড়লে কীভাবে পাশ কাটিয়ে নিজেকে বিপন্মুক্ত রাখতে হয়, সেই কৌশলও প্রজ্ঞানের জানা আছে।
ইসরোর টুইটার থেকেই আমরা জানতে পেরেছি, প্রজ্ঞানের চলার পথে চার মিটার চওড়া একটি গর্ত পড়েছিল। মাত্র তিন মিটার দূরে ছিল গর্তটি। গর্তে পড়ে গেলে যানটির বড়সড় ক্ষতি হতে পারত। কিন্তু বিপদ ঘটার আগেই রোভার পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। রোভার ‘প্রজ্ঞান’ ও ল্যান্ডার ‘বিক্রম’এর শক্তির উৎস সূর্যালোক। পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন চাঁদে দিনের আলো থাকে। পরের ১৪ দিন গভীর অন্ধকারে ডুবে যায় চাঁদ। সেই হিসেবে চাঁদের বুকে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের আয়ু আর মাত্র সাত দিন। এত স্বল্প আয়ুতেও চাঁদের বুকে মানব সভ্যতার হয়ে অনেক বড় পদক্ষেপ করে চলেছে দুটিতে।
Feature image credit- ISRO.