কলকাতা: সোমবার হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে জোড়া ধাক্কা খেল সরকার ও রাজ্যের শাসকদল। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করতে চায় সিবিআই। এই মামলায় অভিষেককে পার্টি করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। একই দিনে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের উপরে কোনও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করলেন বিচারপতি সিনহা। দুটি মামলাতেই সিবিআই-কে ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার ও তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রাথমিক ও এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে কলকাতা পুরসভা সহ রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগ নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতির হদিস পায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় কলকাতা পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত নথিও উদ্ধার করেন ইডির আধিকারিকেরা। জেরায় অয়ন শীল জানায়, পুরসভা সহ অন্যান্য বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গেও সে জড়িত। এই পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভার নিয়োগ নিয়ে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে আবেদন জানায় ইডি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে দিলে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। এক সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলা হাইকোর্টে ফেরত পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। মামলা জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে সরিয়ে জাস্টিস অমৃতা সিনহার বেঞ্চে পাঠান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
বেঞ্চ বদলের পর সোমবার ছিল মামলাটির প্রথম শুনানি। শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দাবি করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। বিচারপতিকে তিনি বলেন, “সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করুক আদালত। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সিবিআই তদন্ত নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, “সাধারণত যে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, তিনিই একমাত্র নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।” জবাবে বিচারপতি সিনহা অমৃতা সিনহা বলেন, “আমি যতদূর জানি, মামলাটি এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতিই পাঠিয়েছেন।”
শুনানিতে মূল মামলাকারীদের আইনজীবীর পাশাপাশি ইডি ও সিবিআইয়ের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার অর্থ হল, নতুন করে আবার এই মামলাটি শুরু করা। মামলায় এফআইআর দায়েরের কাজ শেষ। সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করা হোক।”
সবপক্ষের কথা শুনে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়ে দেন, সিবিআই তদন্ত যেমন চলছে চলুক, কোনও স্থগিতাদেশ নয়। শুক্রবার (১২ মে) এই মামলায় চূড়ান্ত রায় দেবেন বিচারপতি। অর্থাৎ পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত চলবে কি চলবে না, সেই নিয়ে একক বেঞ্চের চূড়ান্ত নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে শুক্রবার পর্যন্ত।
Feature Image is Representational.