ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটাতে মোটেই আগ্রহী নয় চিন। শুধু নিষ্পত্তিই নয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্থিতাবস্থা বজায় রাখা নিয়েও আন্তরিক নয় শি জিনপিং-এর সরকার। চিনের চোখ রাঙানি, সীমান্তে গাজোয়ারি ও উস্কানির মুখেও নম্র প্রতিবাদ জানিয়েই এত কাল ক্ষান্ত থাকত ভারত। আসলে বাষট্টির যুদ্ধে লাল ফৌজের হাতে পরাজয়ের পর থেকেই বেজিংয়ের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি দেখা দিলেই গুটিয়ে যেত দিল্লি। তবে মোদী জামানায় ভারতের চিন নীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। বেজিংয়ের আপত্তি উড়িয়ে সোমবার অরুণাচল প্রদেশ সফরে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন গ্রাম কিবিথুতে গিয়ে ‘ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম’-এর উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত গ্রামে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “ভারতের থেকে সূচ্যগ্র মেদিনীও আর ছিনিয়ে নিতে পারবে কেউ!” শাহ বলেছেন, “আগে যে কেউ ভারতের মাটিতে অনুপ্রবেশ ও জমি দখল করতে পারত। কিন্তু দিন বদলেছে। এখন আর আগ্রাসনকারীদের রেয়াত করা হবে না।” একদম উচিত কথা। ভারত সব সময় চিনের সঙ্গে সৌহার্দ্য চেয়েছে। কিন্তু চিন যদি সৌহার্দ্যে বিশ্বাস না করে তবে ভারতের কী করার আছে? দুর্বৃত্তের সামনে হাতজোড় করে বিনয়ের বাণী আওড়ায় কেবল দুর্বল-কাপুরুষেরাই। আকসাই আমরা কবেই চিনের কাছে বিলিয়ে দিয়েছি। এখন লাদাখ থেকে অরুণাচল- গোটা সীমান্ত জুড়ে চিনের নতুন নতুন বায়না। অরুণাচল প্রদেশ যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ- এই কথাটাই স্বীকার করে না বেজিং। পুরো অরুণাচল নিজেদের বলে মনে করে চিন। এরপরেও চিনের সঙ্গে নরম সুরে কথা আর চলে?
দিন কয়েক আগেই অরুণাচলের ১১টি স্থানের নাম বদল করেছে বেজিং। মাঝে মধ্যেই এই কাজটা চিন করে। দেখাতে চায়- অরুণাচল তাদের অংশ। অরুণাচল প্রদেশে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান সফরে গেলে বেজিং তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হুঙ্কার দেয়। অরুণাচল প্রদেশে ভারত সরকার রাস্তা বানালে, সেতু গড়লে, বিমানবন্দর নির্মাণ করলে চিনের কমিউনিস্ট সরকার রুষ্ট হয়। আমাদের দেশের ভূখন্ডে আমাদের দেশের মন্ত্রীরা যাবেন আর তার জন্য গাত্রদাহ হবে চিনের!
ইউপিএ জামানাতেও অরুণাচল প্রদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করা হয় নি, চিনের ভয়ে। অথচ এই অরুণাচলকেই সবথেকে যত্নে রাখা ভারত সরকারের দায়িত্ব। হিমালয়ের কোলে দুর্গম রাজ্য। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। গ্রামবাসীরা খুব কষ্টে থাকেন। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অনেক জায়গায় সীমান্ত অরক্ষিত। স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নেই। চিনের সেনাবাহিনী মাঝমধ্যেই অনুপ্রবেশ করে বলে অভিযোগ। এমনকি ভারতীয় নাগরিকদের অপহরণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। তবে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাউথ ব্লকের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। গালওয়ানে পিএলএ-কে ছেড়ে কথা বলে নি ভারতীয় ফৌজ। চিনের আপত্তি উড়িয়ে অরুণাচল প্রদেশের উন্নয়নেও একের পর প্রকল্প নিয়ে চলেছে ভারত সরকার।
চিন সীমান্ত সংলগ্ন অরুণাচলের গ্রামগুলির উন্নয়নে ‘ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম’ নিয়েছে সরকার। এটা খুব সদর্থক পদক্ষেপ। অরুণাচলের সীমান্তবর্তী কোনও দুর্গম গ্রামের একটি মানুষেরও যেন এমন মনে না হয়, দেশের সরকার তাদের বিদেশি হায়নার মুখে অসহায় ফেলে দিয়ে দূরে বসে থাকে। সামরিক এবং অসামরিক- পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে অরুণাচলের যা যা ঘাটতি এখনও আছে, তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে। চিনকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার- এই ভারত বাষট্টির ভারত নয়।
Feature Image Credit- Official FB page of Amit Shah.