ইউনূস কত বড় খচ্চর, এখন টের পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ

ইউনূস কত বড় খচ্চর, এখন টের পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ


অনুশোচনা তো দূরের কথা বরং শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য ইউনূসের কাছে দারুণ উপভোগ্য ছিল। লিখলেন ওয়াশিকুর রহমান শুভ্র-

ভারত সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য এবং ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র সেই দায়িত্ব যথারীতি পালন করেছেন। কেন ভারত ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে মুজিবের বাড়ি ধ্বংসের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাবে? জানাবে এই কারণে যে, ১৯৭১-এর যে যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক জয় পেয়েছিল ভারত, সেই যুদ্ধে শেখ মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামি লিগ ছিল ভারতের মিত্র ও সহযোগী। একটা কথা বুঝতে হবে, ১৯৬০ সাল থেকেই শেখ মুজিব ভারতের ‘পলিটিক্যাল অ্যালি’। পাকিস্তান ভারতের শত্রু রাষ্ট্র। পাকিস্তান ভাঙা ভারতের জন্য জরুরি ছিল, ভারত তা ভেঙেছে। বেশ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব থেকে বের করে এনে পৃথক রাষ্ট্র গড়ার যে ভারতীয় প্রকল্প, তাতে শেখ মুজিবুর রহমান, তাজ‌উদ্দিন, সিরাজুল আলম খানের মতো পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা ছিলেন ভারতের সহযোগী।

মুজিবকন্যা শেখ হাসিনাও ভারতের ‘পলিটিক্যাল অ্যালি’। পলিটিক্যাল অ্যালি বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়ানো এমনকি তাঁর হৃত রাজনৈতিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে দেওয়া যে কোনও বৃহৎ শক্তির একটা রাজনৈতিক দায় এবং এটা একটা বৃহৎ শক্তির জন্য ‘ইগো’ বা অহম‌ও বটে। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের সৃষ্টি যেমন ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির নজরকাড়া সাফল্য তেমনি পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট শেখ মুজিবের জীবন রক্ষা করতে না পারাটা ভারতের গোয়েন্দা ও বৈদেশিক নীতির শোচনীয় ব্যর্থতা।

২০০৯-এ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার দুই মাসের মধ্যেই বিডিআর বিদ্রোহ ঘটেছিল। এবং সে’বার হাসিনা খুন হয়েই গিয়েছিলেন। সাউথ ব্লক বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছিল, হাসিনার কিছু হলে ঢাকায় বোমা পড়বে। হুমকিতে কাজ হয় এবং সে যাত্রা হাসিনার জীবন ও ক্ষমতা রক্ষা পায়। তখন মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের বহু ব্যাপারে প্রণব মুখোপাধ্যায়‌ই ছিলেন শেষ কথা। প্রণব তখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার বলতে গেলে আত্মীয়তার সম্পর্ক। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে থ্রেট করার আসল মাথা ছিলেন কীর্ণাহারের এই বেঁটে বাঙালি বামুনটিই। দেখবেন, বাংলাদেশের বহু আওয়ামি বিরোধী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম শুনলেই ক্ষেপে যায়।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীর হাত থেকে শেখ হাসিনার জীবন ও ক্ষমতা রক্ষা করতে পারাটা সাউথ ব্লকের জন্য ছিল একটা কূটনৈতিক ও সামরিক সাফল্য। দুঃখের হলেও সত্যি, ২০২৪-এর ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার জীবন রক্ষা করতে পারলেও ক্ষমতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে মিত্র ভারত। এদিকে বাংলাদেশে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। তাঁর সেই সদিচ্ছা ও যোগ্যতা আছে কিনা, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে। নিজের ব্যর্থতার দায় ইউনূস প্রশাসন ভারতের দিকে ঠেলছে। কতগুলো বদমাইশ চ্যাংড়া আর বিদেশে বসে থাকা কয়েকজন ইউটিউবার ২০ কোটি লোকের দেশটাকে চালাচ্ছে। আর ৮৪ বছরের ইউনূস সপার্ষদ এদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে ক্ষমতা উপভোগ করতে চাইছেন। পরিস্থিতি যে’দিকে গড়াচ্ছে তাতে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

পুড়ছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। পুড়ছে বাংলাদেশের ইতিহাস। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে এই বাড়ি রক্ষায় বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেয় নি ইউনূস প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার সবথেকে সহজ রাস্তা হল নির্বাচন। হাসিনার আমলে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য‌ই বিএনপি সহ বিরোধীরা আন্দোলন করেছিল। অথচ সেই নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না ইউনূস সরকার। এই সরকারটা একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার। যার প্রধান দায়িত্ব‌ই হল, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচন না ডেকে সংস্কারের বাহানায় মুহাম্মদ ইউনূস অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় বসে থাকুন, বাংলাদেশের বহু ধান্ধাবাজ এখন এমনটাই চাইছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে দিন কে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মুহাম্মদ ইউনূস এই ছাত্রনেতাদের নিজের ‘এমপ্লয়ার’ বা নিয়োগকর্তা বলে মনে করেন।

৪৮ ঘন্টা আগে ঘোষণা দিয়ে ছাত্র নেতারা ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ধ্বংস করেছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তৃতা তো অজুহাত মাত্র। হাসিনা ভাষণ শুরু করার আগেই মুজিবের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু হয়ে যায়। এই ন্যক্কারজনক কাজ থামানোর সদিচ্ছা বা সাহস, মুহাম্মদ ইউনূসের কোনোটাই ছিল না। ইউনূস নিজেই সমন্বয়কদের বলে থাকতে পারেন, তোমরা গিয়ে মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে আসো, পরে আমি পরিস্থিতি সামলে নিবো।

ডাকাতদের না ধরে গৃহস্থদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছেন মিটমিটে শয়তান মুহাম্মদ ইউনূস!

৫-৬ ফেব্রুয়ারি রাতে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের বাসায় হামলা-নির্যাতন-ভাঙচুর, লুটতরাজ চলছে অবাধে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরেও নতুন করে হামলা ও লুন্ঠন শুরু হয়েছে। চাঁদা দাবি করে হিন্দুদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার আবেদন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েই খালাস। শুক্রবার রাতে গাজিপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের এক পলাতক মন্ত্রীর বাসায় হামলা চালায় ছাত্ররা। বাড়িঘর ভাঙচুর করার সময় এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছাত্র নামধারী এই দুর্বৃত্তদের ধরে পিটুনি দেয়। হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের মতো ছাত্রনেতাদের দাবড়ানি খেয়ে ইউনূস প্রশাসন আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে আক্রান্তদের শায়েস্তা করতে আর্মিকে নির্দেশ দিয়েছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন ডাকাতদের না ধরে গৃহস্থকে উচিত শিক্ষা দিচ্ছে। এটাই ইউনূসের তারুণ্যের বাংলাদেশ! এটাই ইউনূসের বাংলাদেশ ২.০! মুহাম্মদ ইউনূস তলে তলে কত বড় খচ্চর, এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।

Feature graphic is representational and designed by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *