বিধানসভায় 'অপরাজিতা বিল' এনে মমতার দাবি, 'ইতিহাস গড়ে ফেললাম'!

বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল’ এনে মমতার দাবি, ‘ইতিহাস গড়ে ফেললাম’!


কলকাতা: আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি ধুলোয় লুটোচ্ছে। ঘটনার ২৬ দিন পরেও‌ মানুষের ক্ষোভ প্রশমনে ব্যর্থ সরকার। বিরোধীরা চেপে ধরেছে। চিকিৎসকরা পথে। সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী-বিদ্বজ্জন ও বিনোদন জগতের কলাকুশলী- সবাই প্রতিবাদে সোচ্চার। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ সংশোধনী বিল ২০২৪’ (Aparajita Woman and Child West Bengal Criminal Laws Amendment Bill 2024) পেশ করল তৃণমূল সরকার। আরজি কর কান্ডের দু’দিন পরেই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে রাজ্যে পৃথক কড়া আইন আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা।

সদ্য চালু ভারতীয় ন্যায় সহিংসতায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মোকাবিলায় যথেষ্ট কড়া আইন থাকার পরেও কেন বাংলার জন্য পৃথক আইন- এই প্রশ্ন বিরোধীদের। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমনকি ‘বিএনএস’ লাগু করতেও টালবাহানা করে চলেছে রাজ্য। আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। হাইকোর্ট তো বটেই এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও পুলিশের ভুমিকা ভর্ৎসিত। এই পরিস্থিতিতে মানুষের নজর ঘোরাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে তড়িঘড়ি নতুন আইন আনতে চাইছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

১৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার আরজি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। মহিলা ইন্টার্নিকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সন্দীপ অনেক সত্য ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। আরজি করে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তদন্তে নেমে সন্দীপ ঘোষের তিন শাগরেদ বিপ্লব সিং, সুমন হাজরা ও আফসার আলিকেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আরজি কর কান্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করছে বিরোধীরা। এই অবস্থায় মঙ্গলবার বিধানসভায় অপরাজিতা বিল উত্থাপন করে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিলে পূর্ণ সমর্থন জানালেও আদৌ বিলটি আইনে পরিণত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রের ন্যায় সংহিতা চালু না করে পৃথক বিল আনার যৌক্তিকতা নিয়েও‌ প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, “ভারতীয় ন্যায় সংহিতাতেও ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অথচ রাজ্য তা কার্যকর করে নি।” ধর্ষণের ঘটনার শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু অধিকারী।

জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কার‌ও জ্ঞান শুনব না। বিরোধী দল ও রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই লোকসভা নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি ন্যায় সংহিতা চালু করেছে কেন্দ্র। তাতে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধ রোধে বিস্তর ফাঁকফোকর রয়েছে। এইসব ফাঁক বন্ধ করতেই তাঁর সরকার নতুন বিল এনেছে।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্য চাইলে পৃথক ফৌজদারি আইন আনতে পারে। দেশের সংবিধান সেই ক্ষমতা রাজ্যকে দিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রেও আলাদা আইন আনছে। মহারাষ্ট্রে তো বিজেপির‌ই সরকার। তারপরেও মহারাষ্ট্র পৃথক আইন আনছে।” বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাসের পর তা দ্রুত রাজ্যপালের কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল বিলটিতে স‌ই দিলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি সম্মতি জানানো মাত্রই বিলটি আইনে পরিণত হবে। যাবতীয় প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে চাইছেন মমতা। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস যাতে দ্রুত অপরাজিতা বিলে স্বাক্ষর করেন, তার জন্য বিজেপির বিধায়কদের সক্রিয় হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

অপরাজিতা বিল এনে তিনি ইতিহাস গড়েছেন বলে এ’দিন বিধানসভায় দাবি করলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই বিল একটা ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী পারেন নি। আমরা পারলাম। করে দেখালাম। প্রধানমন্ত্রী দেশের লজ্জা! উনি মেয়েদের রক্ষা করতে পারেন নি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।” আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশের তরফে কোন‌ও গাফিলতি ছিল না বলে বিধানসভায় দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, “আমাদের পুলিশ তদন্ত করছিল। যতদিন তদন্ত পুলিশের হাতে ছিল, আমি কোনও দায়িত্ব পালন করি নি, বলতে পারবেন না। ১২ তারিখ নির্যাতিতার বাড়িতে যাই। যা যা তদন্তে উঠে এসেছিল, সেই সব তাঁর মা-বাবার কাছে পাঠানো হয়। আমি ওঁদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছি। রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তার আগেই সেই তদন্তের ভার সিবিআইকে দিয়ে দিল। আমরা এখন সিবিআইয়ের কাছে বিচার চাই।”

আরজি করের ঘটনাকে হাতিয়ার করে বাংলার বদনাম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, “বাংলাকে আজ যাঁরা বদনাম করছেন, তাঁরা বাংলার সম্মান নিয়ে ভাবুন। বাংলা মাকে বদনাম করলে আপনার গায়েও লাগবে, আমার গায়েও লাগবে। আপনারা আমাকে যে’ভাবে অসম্মান করেছেন, আমরা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে করি নি। আপনারা আমাকে যা যা বলছেন, তা যদি আমার দলের লোকেরা প্রধানমন্ত্রী আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, তা হলে কেমন লাগবে?”

Feature graphic is representational and created by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *