বরাত জোরে বেঁচেছেন ট্রাম্প, 'গান ভায়োলেন্স' আমেরিকায় মহামারির আকারে ছড়াচ্ছে

বরাত জোরে বেঁচেছেন ট্রাম্প, ‘গান ভায়োলেন্স’ আমেরিকায় মহামারির আকারে ছড়াচ্ছে


ভিডিও: ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে যে মুহূর্তে গুলি চালানো হল। এক্স হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত ফুটেজ

ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে যে গুলি চালিয়েছিল, ২০ বছরের সেই টমাস ম্যাথিউ ক্রুকসকেও ঘটনাস্থলেই খতম করেছে নিরাপত্তাকর্মীরা। ক্রুকস‌ও রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক ছিল বলে জানা গেছে। বন্দুকবাজের হামলায় মৃত্যু আমেরিকার সমাজে নতুন কোন‌ও উপদ্রব নয় বরং এই সমস্যা সেই দেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। ২০২৩-এ আমেরিকায় ‘গান ভায়োলেন্স’ বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ৮৮৮ জন মানুষের। মোট ৬৫৪টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে জন পরিসরে। গত বছর আমেরিকায় প্রতিদিন গড়ে ১১৭টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বন্দুকের গুলিতে। সবথেকে মর্মান্তিক, গুলিতে নিহতদের ১,৭০০ জন শিশু-কিশোর। ১,৩৮১ জনের বয়স ১২ থেকে ১৭-র মধ্যে। বাকিদের মধ্যে ১১ বছরের বালক থেকে একেবারে শিশু পর্যন্ত আছে।

সবথেকে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৩-এর ২৫ অক্টোবর রাতে মেইনে প্রদেশের লিউইস্টন শহরের একটি ‘বোলিং অ্যালি’ ও পানশালায়। এক বন্দুকবাজ সেখানে ঢুকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্নাইপার রাইফেল থেকে গুলিবৃষ্টি শুরু করলে ঘটনাস্থলেই ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় জখমের সংখ্যা ১৩। ঘটনার দু’দিন পরে স্থানীয় একটি রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের ভেতরে আততায়ীর দেহ খুঁজে পায় পুলিশ। গণহত্যা শেষ করে আত্মহত্যা করেছিল সে। সেই বছরের ২১ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি পার্কে চিনা নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানস্থলে হামলার ঘটনাও কম ভয়াবহ নয়। এক বন্দুকবাজ ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে বহু মানুষ লুটিয়ে পড়ে। এতে ১১ জন নিহত হয়েছিলেন। আহতের সংখ্যা ৯। পরে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি ভ্যানের ভেতর থেকে ঘাতকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যালীলা শেষ করে এখানেও আত্মঘাতী হয়েছিল ঘাতক।

২০২৩-এর ৬ মে রাতে টেক্সাস প্রদেশের অ্যালেন শহরের ডালাস এলাকার একটি ভরা মলে এক বন্দুকধারীর অতর্কিত হামলায় ৮ জন মারা যান। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ৭ ব্যক্তি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হামলাকারীর মৃত্যু হয়। পারিবারিক ঝামেলাতেও বন্দুকের নির্বিচার ব্যবহারে আমেরিকানরা পিছপা নয়। এক‌ই বছরের ৪ জানুয়ারি উটাহের এনোক শহরে এক ব্যক্তি নিজের স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান এবং শাশুড়ি সহ পরিবারের মোট সাতজনকে খুন করে গুলি চালিয়ে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দুই সপ্তাহ আগেই হত্যাকারীর স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা করেছিলেন।

২০২৩-এর ২৭ মার্চ টেনেসি প্রদেশের ন্যাশভিলের একটি স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে এক ট্রান্সজেন্ডার। নিহতদের তিনজন পড়ুয়া। হামলাকারী স্কুলটির প্রাক্তনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে গুলি করে মারেন দুই পুলিশ অফিসার। গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের বড় বড় ঘটনাগুলিই কেবল হেডলাইন হয়। কিন্তু বছর জুড়ে আমেরিকায় বন্দুকের গুলিতে খুন হতে থাকে মানুষ। ২০২৩-য়ে আমেরিকায় যত মানুষ গুলিতে নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৭৯৮ জন‌‌ই বন্দুকবাজের হামলার শিকার। ২৪,০৯০ জন আমেরিকান আত্মহত্যা করেছেন নিজেদের বন্দুকের বুলেটে। ১,৪৩৮ জনকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। ৫০ জন পুলিশ আধিকারিক কর্তব্য পালনকালে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এআর-১৫ অ্যাসাল্ট রাইফেল: যে বন্দুক দিয়ে ট্রাম্পকে গুলি করেছিল টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। সংগৃহীত ছবি

বন্দুক আমেরিকানদের শখের জিনিস। অধিকাংশ রাজ্যেই বয়স আঠার বছর হয়ে গেলে আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে ও রাখতে বাধা নেই। আসলে মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। আইন রাখতে গিয়ে এখন নাগরিকদের প্রাণ রাখাই দায় হয়ে উঠেছে মার্কিন প্রশাসনের কাছে। এদিকে ২০১৬ থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমেরিকার ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’-এর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৬ থেকে বছরে গড়ে দেশটিতে ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ বুলেট। ২০২০-২১-২২, পরপর তিন বছর গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩ হাজার পার করে গেছে। ২০২৩-এ সংখ্যাটা ৪৩ হাজার থেকে ১১২ কম। আলো ঝলমলে আমেরিকান সমাজের গভীরে যে কঠিন অসুখ, এইসব পরিসংখ্যান তা জানান দিচ্ছে।

Feature Image Source: X handle.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *