ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে সহিংসতা চরমে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার মধ্যরাতে সারা দেশে কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি সেনা মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিকে সহায়তা করবে বলে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন। সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারির পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও কারফিউ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী।
ইন্টারনেট ও টেলি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের ভেতর থেকে সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছে না। গোটা দেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে থেকে ইন্টারনেট, মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন- যোগাযোগের সব মাধ্যম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। এরপর থেকেই বহির্জগতের সঙ্গে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট ও টেলি যোগাযোগ স্তব্ধ করে দিয়েও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় শেখ হাসিনার সরকার। শুক্রবার দিনভর বাংলাদেশ জুড়ে সহিংসতা চরমে ওঠে। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে এ’দিন কমপক্ষে ৫৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কোনও কোনও সংবাদ মাধ্যমের দাবি, মৃতের সংখ্যা ৬৬। কোটা সংস্কার আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠার পর থেকে নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে।
এই কয়দিনের সংঘর্ষের জেরে রাজধানী ঢাকার সড়কগুলি লন্ডভন্ড। বহু সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে পথে পথে পোড়া গাড়ির সারি দেখতে পেয়েছেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। শনিবার বিকেলে নরসিংদীতে জেলখানার প্রধান ফটক ভেঙে ফেলে ভেতরে ঢুকে ৮২৬ জন বন্দীকে মুক্ত করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। হাজার হাজার মানুষ কারাগারে হামলা চালালে কারারক্ষীরা পালিয়ে বাঁচেন। নরসিংদীর জেল সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, “ভেতরের অবস্থা ভয়াবহ ছিল। তারা যা পাচ্ছিল তাই ভাঙচুর করছিল। আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছিলাম। পরে কয়েদিরাই আমাদের সাহায্য করে পালাতে। আমরা কোনওভাবে পোশাক বদলে সিভিল ড্রেসে বের হয়ে আসি। আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাদের মেরেই ফেলতো।”
ছাত্র আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠতেই চিন সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রদের শান্ত করতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েও আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন তিনি। ছাত্রদের আন্দোলনকে কোনও কোনও কোনও মহল রাজনৈতিক স্বার্থে হিংসা ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে গেছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের অভিযোগ। আওয়ামি নেতৃত্বের ইঙ্গিত বিরোধী বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের দিকে।
আগামী ২১ জুলাই থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছয়দিনের বিদেশ সফরে বেরোনোর কথা ছিল। স্পেন সফর শেষ করে ২৪ জুলাই ব্রাজিলে যাওয়ার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল শেখ হাসিনার। কিন্তু দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে স্পেন ও ব্রাজিল সফর বাতিল করেছেন তিনি। ছাত্র বিক্ষোভে ব্যাপক প্রাণহানি হওয়ায় ঘরেবাইরে চাপে শেখ হাসিনা। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মুখ খুলেছে জাতিসংঘও। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান ভলকার টার্ক বাংলাদেশে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “ছাত্রদের উপর হামলার বিস্ময়কর এবং তা মেনে নেওয়া যায় না।”
Feature Image Source- X handle.