আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গরমে শুধু গলদঘর্মই নয়, প্রাণ পর্যন্ত কন্ঠায় এসে ঠেকছে মানুষের। বিশ্ব জুড়েই গরমের দাপট। গরম সাধারণত ইউরোপ খুবই উপভোগ্য হয় কিন্তু এবার সেখানেও মানুষ খুব একটা ভাল নেই। দক্ষিণ এশিয়া পুড়ছে। ভারতের যে’সব জায়গায় মৌসুমী বায়ু সক্রিয়, সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু উত্তর, মধ্য ও পূর্ব ভারতের বহু অংশে এখনও তাপপ্রবাহ চলছে। তবে কি জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হাতেনাতে মিলতে শুরু করল? পরিবেশ বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া খানিকটা তেমনই। সবথেকে খারাপ অবস্থা পাকিস্তানের। তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে করাচিতে গত কয়েকদিনে ৫৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ইধি ফাউন্ডেশন নামে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে গত পাঁচদিনে করাচি শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৬৮টি দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাদের অ্যাম্বুলেন্স। সংগঠনটি দাবি করেছে, গত ২৫ জুন থেকে দিনে গড়ে ৪০টি করে দেহ উদ্ধার করছেন তাদের লোকেরা। যদিও গরমে মৃতের সংখ্যা অনেক কম করে দেখাচ্ছে প্রশাসন। করাচির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাপপ্রবাহের কারণে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে মাত্র ১৩ জন।
এপ্রিল থেকেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। মে মাসে পাকিস্তানের একাধিক শহরে পারদ ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছিল। জুনেও সিন্ধ প্রদেশের বহু জায়গায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। করাচির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে কয়েক দিন ধরে। গত ২৪ জুন পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ শহরের তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৭ ডিগ্রি বেশি। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় মানুষের কাছে গরম আরও বেশি অসহনীয় ঠেকছে। এখনও পর্যন্ত জুনে সিন্ধ প্রদেশে হিটস্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে ২,১০০টি।
করাচি শহরের জনসংখ্যা দুই কোটির উপরে। তাপপ্রবাহের কারণে মৃতদের বড় অংশই দরিদ্র পরিবারের বলে ইদি ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ফয়সাল ইদি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। শ্রমিকেরা কাজের খোঁজে বেরিয়ে হিটস্ট্রোকে রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছেন। করাচি শহরে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। নিজেদের ঘুপচি ঘরে অসহ্য গরমে অসুস্থ হয়েও মারা যাচ্ছেন অনেক বস্তিবাসী। যদিও সিন্ধ প্রদেশের স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র আলি নাওয়াজ চান্না ইডি ফাউন্ডেশনের দাবিকে অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
২০১৫-র জুন মাসে পাকিস্তানে গরমে প্রাণ গিয়েছিল ১,৩০০ জনের। এবারের পরিস্থিতি সেই দিকেই যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন পাকিস্তানের মুখ্য আবহবিদ সর্দার সরফরাজ। দেশটির আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে আগামী তিনদিন করাচি সহ সিন্ধ প্রদেশে তাপপ্রবাহ চলবে।
Feature image is representational.