জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে ফের দোভালেকেই বাছলেন মোদী

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে ফের দোভালেকেই বাছলেন মোদী


বৃহস্পতিবার‌ই ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার পদে ৭৯ বছরের দোভালকে পুনর্নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিটি’। ২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই অজিত দোভালকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে বসান মোদী। ২০১৯-এ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এনডিএ কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরে। বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক দিন পরেই দোভালকে এন‌এস‌এ পদে পুনর্নিয়োগ করেন নরেন্দ্র মোদী।

চব্বিশে বিজেপির আসন এক ধাক্কায় কমে ২৪০। কিন্তু জোটগতভাবে এনডিএ-র আসন সংখ্যা ম্যাজিক ফিগারের থেকেও ২০টি বেশি। ইন্ডিয়া জোট নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নায়ডুকে দলে টানার চেষ্টা করেও সফল হয় নি। ফলে তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হ‌ওয়া আটকায় নি। আগের দুই দফায় মোদী হাত খুলে সরকার চালিয়েছেন। তৃতীয় দফায় মোদী কি আগের মেজাজেই সরকার চালাবেন নাকি শরিকদের চাপে আপোষ করবেন, এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলের আগ্রহের শেষ নেই। অজিত দোভালকে এন‌এস‌এ পদে পুনর্বহাল করে মোদী বোঝালেন, এই যাত্রায়‌ও অনেক ব্যাপারেই তিনি নিজের মর্জি মাফিক‌ই চলবেন। তাই মোদীর তিন নম্বর টার্ম, এন‌এস‌এ পদে দোভালের‌ও তিন নম্বর টার্ম।

আর‌এন কাওয়ের মতোই ঝানু গোয়েন্দা অজিত দোভাল। ১৯৬৮ ব্যাচের আইপিএস দোভাল ‘ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো’র সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। ‘ফরেন ইন্টেলিজেন্স’ থেকে ‘কাউন্টার টেরোরিজম’, প্রতিরক্ষা নীতি থেকে পররাষ্ট্র নীতি, এমনকি পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়েও দোভালের যথেষ্ট দখল আছে। পাকিস্তানে সাত বছর গুপ্তচরগিরি করা দোভালকে তাঁর সহকর্মীরা ‘জেমস বন্ড’ বলে ডাকেন। ২০১৬ সালে উরিতে জঙ্গি হামলার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক আর ২০১৯ সালে পুল‌ওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গিহানার জেরে পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গিশিবিরে বিমান হামলা- নেপথ্যে ছিল অজিত দোভালের পরিকল্পনা।

অনেক কূটনৈতিক বিষয়েও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজ‌ দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু চিন-ভারত সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতেও দোভালের পরামর্শের উপরে নির্ভর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২০-এর জুনে পূর্ব লাদাখের গাল‌ওয়ান উপত্যকায় চিনা ও ভারতীয় সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরে বিপজ্জনক মোড় নিয়েছিল দুই দেশের সম্পর্ক। সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের থেকেও দোভালকে বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে দোভালের ভূমিকা জয়শঙ্করের থেকেও বেশি কাজে দিয়েছিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে।

প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি না থাকলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডিঙিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে দিল্লির কূটনৈতিক বোঝাপড়ায় দোভালের পক্ষে অংশ নেওয়া সম্ভব ছিল না। ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার’ পদটা বয়সে তেমন পুরোনো না। পদটির সাংবিধানিক গুরুত্ব‌ও কিছু নেই। কিন্তু ‘পিএম‌ও’-তে দোভালের দাপটের কথা সাউথ ব্লকে সবার জানা। প্রথম পাঁচ বছরে দোভালের পদমর্যাদা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর সমতুল্য। দ্বিতীয় মোদী সরকারের জামানায় দোভালকে ক্যাবিনেটমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়।

দোভালের সঙ্গে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং ও জয়শঙ্করের ইগোর লড়াই আছে বলে গুঞ্জন। অর্থাৎ দলের মধ্যেই অনেক হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে অজিত দোভালের সম্পর্কের রসায়ন ভাল নয়। কিন্তু মোদী সতীর্থদের কাউকে কাউকে খুশি করতে দোভালের মতো দ়ক্ষ উপদেষ্টাকে ক্যাবিনেটের বাইরে রাখতে রাজি নন।

Feature graphic is representational and created by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *