কলকাতা: ৫০০-১০০০ টাকা ভাতা দিয়েই যখন ভোট পাওয়া যাচ্ছে, তখন সরকার চাকরি দেবে কেন? তৃণমূলের জামানায় রাজ্য থেকে স্থায়ী নিয়োগ প্রায় উঠেই গেছে। যে সব জায়গায় নিয়োগ হয়েছে, সেখানেই আবার ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলার পাহাড়। সংখ্যালঘুদের ভোটে একচেটিয়া ভাগ বসিয়ে নির্বাচনের পর নির্বাচন উতরে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ ১৪ বছর ধরে শূন্যপদে নিয়োগ নেই রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতে! বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত এক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের।
৩,০০০ শূন্যপদের একটিতেও নিয়োগ নয়!
রাজ্যের সরকার পোষিত মাদ্রাসাগুলিতে নিয়োগের জন্য শেষবার পরীক্ষা হয়েছিল বাম জামানায় ২০১০ সালে। ‘গ্রুপ-ডি’র ৩,০০০ শূন্য পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল সে’বছর। ২০১১ সালে বাংলায় পালা বদল। বামফ্রন্টকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কিন্তু বাম আমলে নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তাঁদের কাউকেই চাকরি দেয় নি মমতার সরকার। ৩,০০০ শূন্যপদের একটিতেও নিয়োগ হয় নি এই ১৪ বছরে। নানা টালবাহানা করে নিয়োগ ঝুলিয়ে রাখছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন- এই অভিযোগে আদালতে মামলা করেন চাকরিপ্রার্থীরা।
হাইকোর্টকে অগ্রাহ্য করায় জরিমানা মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের
২০১৯ সালে ১৪ দিনের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একক বেঞ্চ। নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। ২০২০-এ একক বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ। ভিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরেও শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে গড়িমসি করতে থাকে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। এরপরে শুরু হয় কোভিড অতিমারি। কোভিডের দোহাই দিয়ে রায় কার্যকর করতে ছয়মাস সময় চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় কমিশন। এ’রকম করে চার বছরে অনেক ছয়মাস পার করে ফেলে রাজ্য।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে ফের মামলাটি উঠলে শুনানি শেষে বিচারপতিরা সাফ জানিয়ে দেন, “আর কোনও অতিরিক্ত সময় নয়। তিনমাসের মধ্যে ৩,০০০ শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে।” পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার ১৪ বছর পরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না করার শাস্তি হিসেবে কমিশনকে দু’লক্ষ টাকা জরিমানাও করে আদালত।
শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে ২০১০ সালের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে দিয়ে নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি চান মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী। কিন্তু তা শোনা মাত্রই খারিজ করে দিয়ে বিচারপতিরা জানান, “একাধিকবার নানা উছিলায় আদালতের নির্দেশ কার্যকর না করা ও বারংবার আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েও আদালতের নির্দেশ কার্যকর না করা অপরাধ। সেই অপরাধের শাস্তি হিসেবে কমিশনকে দু’ল়ক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।” বিচারপতিরা আরও বলেন, “আর কোনও সময় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিন মাসের মধ্যে ২০১০ সালের পরীক্ষায় সফলদের মধ্যে থেকে তিন হাজার শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করতে হবে।”
সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে নিয়োগ ঝুলিয়ে দেবে রাজ্য?
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে অবশেষে খানিকটা আশার আলো দেখছেন মামলাকারীরা। যদিও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না তাঁরা। কেননা, আদালতের ভর্ৎসনায় লজ্জিত হয়ে রাজ্য তিন মাসের মধ্যে তিন হাজার জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না করে মামলা সুপ্রিম কোর্টে টেনে নিয়ে গিয়ে নিয়োগ ঝুলিয়ে দিতেই পারে।
Feature graphic is representational and created by NNDC.