কেউ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে কিম্বা কারও অসুখবিসুখ হলে তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করা একদমই ভাল নয়। মানুষের আপদ-বিপদ যে কোনও মুহূর্তেই ঘটতে পারে এবং কারও জীবনেই বিপদ বলেকয়ে আসে না। প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর মতো পদাধিকারীরা কিম্বা অমিতাভ বচ্চন-মিঠুন চক্রবর্তীর মতো সেলিব্রেটিরা অসুস্থ হয়ে পড়লে ব্রেকিং নিউস হয়, সামাজিক মাধ্যমে শোরগোল ওঠে। বড় বড় নেতা, রাষ্ট্রপ্রধান, ভিভিআইপি ও সেলিব্রেটিদের অসুখ-বিসুখ নিয়ে বাজারে গুজবও ওঠে এন্তার। তাই তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহলকে এই ধরণের পরিস্থিতিতে সব সময় সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ করতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতেই পড়ে গিয়ে কপালে চোট পেয়েছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও নন্দীগ্রামে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন মমতা। সে’বার নিছক দুর্ঘটনাবশত মুখ্যমন্ত্রী পায়ে আঘাত পেলেও সেটা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছিল তৃণমূল। হুইলচেয়ারে চেপে গোটা প্রচারপর্ব সেরেছিলেন মমতা এবং ঘটনার দায় বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে জনগণের সহানুভূতি আদায়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন নি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এবারে বাড়িতেই চোট পাওয়ায়, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলার সুযোগ পায় নি শাসকদল। ঘটনাটা পথেঘাটে হলে মমতা সেই সুযোগ হেলায় নষ্ট করতেন, তাঁকে যাঁরা চেনেন তাঁরা কেউই তা বিশ্বাস করতে প্রস্তুত নন।
তবে তৃণমূলের তরফ থেকে সহানুভূতি লাভের একটা চেষ্টা তো হয়েইছে। আর সেটা করতে গিয়েই ঘটনাটিকে যুগপৎ উপহাস ও রহস্যের বিষয়বস্তু করে তুলেছে তারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে গিয়ে কপালে আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর কপালের রক্ত না মুছিয়েই, তাঁকে ‘ফাস্ট এইড’ না দিয়েই কপাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার দৃষ্টিকটু ছবি সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার কোনও প্রয়োজন ছিল কী? এই ধরণের পরিস্থিতিতে গুজব প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ বৃত্ত বরং ঘটনা চেপে যায়, সংবাদ গোপন করে।
মুখ্যমন্ত্রী আঘাত পেয়েছেন, এই খবর একবার মিডিয়ায় চাউর হয়ে গেলে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, গুজব তো ছড়াবেই। মুখ্যমন্ত্রী পেছন থেকে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন- এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ সংবাদ মাধ্যমের সামনে এমন বিবৃতি দেওয়ার পর রাজনৈতিক মহল চুপ করে থাকবে কেন। নিজের বাড়ির ভেতরে মুখ্যমন্ত্রীকে কে বা কারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে, এই প্রশ্ন তো বিরোধীরা তুলবেনই। মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়ির ভেতরেই ধাক্কা মারা হয়েছে, এমন খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়লে তার প্রতিক্রিয়া যা হতে পারে, এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সব থেকে মারাত্মক কথা, সরকারি মহল থেকেই প্রকারান্তরে এমন কথা ছড়িয়ে দেওয়া হল, মুখ্যমন্ত্রীকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে!
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বাড়িতে যে পরিবেশে ছিলেন, ঘটনার সময় তাঁকে ঘিরে ঘরে যাঁরা ছিলেন, তাতে তো তাঁর সর্বোচ্চ নিরাপদেই থাকার কথা। আপনজনদের মধ্যেই তো মানুষ সবথেকে সুরক্ষিত থাকে বলে আমরা জানি। ঘরের ভেতর পরিবারের একান্ত আপনজনদের বৃত্তে মমতার সে’দিন ঠিক কী ঘটেছে, তা তো আর বাইরের কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে কালীঘাটের বাড়িতে ঠেলাঠেলি কিছু হয়ে থাকলে, জনগণের জন্য তা উদ্বেগের তো বটেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠিক কোন পরিস্থিতিতে, কী কারণে মুখ্যমন্ত্রী চোট-আঘাত পেয়েছেন, তা স্পষ্ট করে রাজ্যবাসীর সামনে পেশ করার দায়িত্ব সরকারের। মুখ্যমন্ত্রীর শরীর-স্বাস্থ্য সম্পর্কে সত্যিটা জানার অধিকার জনগণের আছে।
Feature image- Collected .