ডেস্ক রিপোর্ট: বুধবার রাতেই উত্তর চব্বিশ পরগনার মিনাখাঁর বামনপুকুর এলাকা থেকে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপে মমতা শাহজাহানের মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিতেই রাজনৈতিক মহল বুঝে গিয়েছিল, এবার শাহজাহানের গ্রেফতারি আসন্ন। সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর হাতে নারী নির্যাতনের বীভৎস কাহিনী সামনে আসার পরে শাহজাহানের মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেওয়া ছাড়া তৃণমূলের সামনে দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। তারপরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছিলেন শাহজাহানকে আড়াল করার। কিন্তু অভিষেক বেঁকে বসায় শেষমেশ শাহজাহানকে গ্রেফতারে নির্দেশ দিতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে ইডির আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনার পর থেকেই গাঢাকা দিয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, সেদিন নিজের বাড়ির ভেতরেই লুকিয়ে ছিলেন এই তৃণমূল নেতা। উধাও হয়ে যাওয়ার ৫৫ দিনের মাথায় মিনাখাঁ থেকে শাহজাহানের গ্রেফতার হওয়ার পেছনে হাইকোর্টের ভূমিকাও কম নয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পর শেখ শাহজাহানকে আর রক্ষা করা সম্ভব ছিল না রাজ্য সরকারের। বুধবার প্রধান বিচারপতি এও জানিয়ে দেন, ইডি-সিবিআই কিম্বা রাজ্য পুলিশ, যে কেউই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে। প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশের পরে নিজেকে রাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াই শেখ শাহজাহানের জন্য নিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাহ কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়াটাও রাজ্য সরকারের জন্য কম জরুরি ছিল না।
মার্চের দশ তারিখের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা। বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উপর কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারাবে নবান্ন। তখন নির্বাচন কমিশন শাহজাহানকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলে আড়াল থেকে কালীঘাটের কলকাঠি নাড়ানোর সুযোগ থাকত না। যাই হোক, উধাও হয়ে যাওয়ার ৫৬ দিন পর শেখ শাহজাহানকে প্রকাশ্যে দেখতে পেল জনগণ। ইডির আধিকারিকদের উপরে হামলার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে এডিজি (দক্ষিণ) সুপ্রতিম সরকার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে শাহজাহান শেখকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে ধৃতের ১৪ দিনের হেফাজত চায় পুলিশ। ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
ইডি-সিবিআইয়ের হাতে আসা সময়ের অপেক্ষা
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের নামে ৫৬টি মামলা ঝুলছে। কেন তাকে এতদিন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না, এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত শাহজাহান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এখনও পর্যন্ত শাহজাহানকে এই মামলায় অভিযুক্ত না করলেও তাকে মামলার পার্টি করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছে হাইকোর্ট। কাজেই মমতা চাইলেও নারী নির্যাতনের মামলা থেকে শাহজাহানকে অব্যাহতি দিতে পারবেন না বলেই মনে করছে আইন বিশেষজ্ঞ মহল। রেশন দুর্নীতি মামলাতেও বালুর পরেই শেখ শাহজাহানের নাম বলে জানা গেছে। আজ না হোক কাল, ইডি-সিবিআইয়ের হেফাজতে ঢুকতেই হবে শাহজাহানকে।
প্রশাসনের ছত্রছায়াতেই ছিলেন শেখ শাহজাহান!
শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির খবরে সন্দেশখালিতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন মহিলারা। শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ায় কুণাল ঘোষ অভিষেককে কৃতিত্ব দিলেও বিরোধীরা বলছেন, তাঁদের আন্দোলন ও জনরোষের মুখে এই দুষ্কৃতিকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। শেখ শাহজাহান কোথায় আছে, পুলিশের তা জানা বলে বহুবার অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাহজাহান মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর দুয়ে-দুয়ে চার করতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে না। পুলিশ কার নির্দেশের অপেক্ষায় বসেছিল, তা বলাই বাহুল্য। ৫৫ দিন কি প্রশাসনই আশ্রয় দিয়েছে শেখ শাহজাহানকে? ‘শাহজাহান বন্দি’ সিনেমার দুর্বল চিত্রনাট্যই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে।
Feature image credit- NNDC.