বিশেষ প্রতিবেদন: লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার দেড় মাসও বাকি নেই। ভোটকে নজরে রেখে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু গুগলি ছাড়ছেন মোদী। ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়ে গেছে। বস্তুত সে দিন থেকেই জনসংযোগে নেমে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে ভোটের প্রস্তুতি ও প্রার্থী বাছাই সহ ঘর গোছানোর কাজও জোরকদমে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। রাহুল গান্ধীও পথে। তিনি ইম্ফল থেকে মুম্বাই ন্যায় যাত্রায় রয়েছেন। কিন্তু যাত্রাশেষে রাহুলের প্রাপ্তি কী হবে, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিজেপি যেখানে আসন ধরে ধরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে, সেখানে বিরোধী শিবিরে অনৈক্যের ছবিটা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।
রাহুল তাঁর দলের কর্মসূচিতে পথে আছেন ঠিকই কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অনেক ঢাক পিটিয়ে তেইশের ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল যে পাটনা থেকে, সেই পাটনায় ভোটের আগেই জোট কুপোকাত হতে বসেছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের সৌজন্যে। পরিস্থিতি যা, রাহুল সদলবলে বাংলা ছেড়ে বিহারে ঢোকার আগেই নীতিশ ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে এনডিএতে ফিরবেন। ইন্ডিয়া জোটের আরেক বড়মুখ ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছেন, তিনি জোটে আছেন ঠিকই তবে তাঁর রাজ্যে তিনি একাই লড়বেন। মমতার মনে কী আছে, মমতা আর ভগবান ছাড়া আর কেউ জানেন না। জোটের ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ নাকি মমতার করা। এই তো সেদিন মমতা অভিযোগ করলেন, ইন্ডিয়া নামটা পর্যন্ত আমার দেওয়া অথচ জোটের বৈঠকে আমাদের সম্মান মেলে না।
মার্চে ঘোষণা। এপ্রিলে ভোট। আর ফেব্রুয়ারি পড়ার আগেই বিরোধী জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা নীতিশ কুমার জোট ছেড়ে ভাগলবা হওয়ার পথে। জোটের নামকরণ করা মমতার মুখে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে উষ্মা। কিছুদিন আগে ইন্ডিয়া জোটের একটি বৈঠকে রাহুলের উপস্থিতিতেই মল্লিকার্জুন খড়্গেকে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী মুখ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া জোটের কতটা শুভাকাঙ্খী হলে মোদীর প্রতিপক্ষ হিসেবে খড়্গের নাম কেউ প্রস্তাব করতে পারেন! পশ্চিমবঙ্গে মমতার কাছ থেকে কংগ্রেসের এক জোড়া আসনও জুটবে বলেও মনে হয় না। হাতেপায়ে ধরেও শেষ পর্যন্ত মমতাকে বশ করতে না পারলে দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের মন খারাপ লাগবে নিশ্চয় কিন্তু অধীর চৌধুরী হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন।
সাতাত্তরে শক্তিশালী ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে জোটের মুখ ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো গান্ধীতুল্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সে’বারে এমার্জেন্সির মধ্যে ভোটটা হয়েছিল একটা গণঅভ্যুত্থানের চরিত্রে। ঊননব্বুইয়ের বোফর্স হাওয়ায় বিরোধী শিবিরের মুখ ছিলেন জনগণের চোখে ‘রাজর্ষি’ বনে যাওয়া ভিপি সিং। ২০২৪-এ নরেন্দ্র মোদীর মোকাবিলায় বিরোধীরা জোট গড়ে লড়ার পরিকল্পনা নিলেও না তুলতে পেরেছে মোদীর বিরুদ্ধে কোনও হাওয়া, না সামনে আনতে পেরেছে কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ। উল্টে জোটের ঘরে কতজন ছুপা রুস্তম মোদী ঢুকিয়ে রেখেছেন, সেটা নিয়েই ধন্ধে সবাই।
Feature image is representational.