পলিটিক্যাল ডেস্ক: বাংলায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের আসন রফা হচ্ছে না, বিষয়টা মোটামুটি চূড়ান্ত। দুই দলে আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনাটাও ছিল ক্ষীণ। গোড়া থেকেই গরজটা ছিল আসলে রাহুল-সোনিয়ার। কংগ্রেসের অন্দরের খবর, ছেলের থেকে মায়েরই বেশি আগ্রহ বাংলায় মমতার আঁচলে দলের গিঁট বেঁধে দেওয়ার। বরং, রাহুল বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন। কংগ্রেসকে দুটো কি তিনটে আসন ভিক্ষে দিতে মমতার আপত্তি নেই। তার মধ্যে একটি অধীর চৌধুরীর বহরমপুর আরেকটি আবু হাসেম খান চৌধুরীর মালদহ দক্ষিণ। উপরি হিসেবে উনিশে বিজেপির জেতা রায়গঞ্জ বড়জোর।
কথায় বলে ‘ভিক্ষার চাল কাড়া আর আকাড়া’। সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার মনোভাব এর চেয়ে ভাল বলে মনে করার কোনও কারণ নেই। যদিও গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রাহুল-সোনিয়াকে তাচ্ছিল্য করে আসা মমতার মানভঞ্জনে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির নেতারা খোষামোদের ত্রুটি রাখছেন না। তিনের জায়গায় পাঁচটি পেলেই হয়তো আসন রফা নিয়ে সবুজ পতাকা দেখিয়ে দেবেন বিগলিত সোনিয়া। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মমতার যা মনোভাব, তাতে কংগ্রেসকে আরও দুটো তিনি ঠেকাবেন বলে মনে হয় না।
তবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা নিয়ে নমনীয় না হয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর আত্মসম্মান বাঁচিয়ে দিয়েছেন মমতা। এর জন্য অধীরের উচিত মমতাকে বড় করে একটা ধন্যবাদ দেওয়া। বাংলার যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে তৃণমূলের সঙ্গে আসনরফা যে আত্মহত্যার সামিল, তা অধীরের চেয়ে ভাল আর কে বুঝবেন। শুরু থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বের গরজ নেই। আসলে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে মানুষের সামনে মুখ দেখাবেন কীভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা? পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এখন ‘ভোট টু মমতা আর নো ভোট টু মমতা’- এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। মাঝামাঝি কোনও জায়গা নেই। এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ নেতৃত্বের আপত্তি উড়িয়ে দলের হাইকমান্ড তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করার নির্দেশ দিলে কী করণীয় তা কৌস্তুভ বাগচীর মতো কট্টর মমতাবিরোধী কংগ্রেস নেতারা ঠিক করেই রেখেছেন।
কংগ্রেস ও তৃণমূলে জোট হলে বাংলায় বিজেপির দুটো ভোট বাড়বে ছাড়া কমবে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে অধীর চৌধুরীরা ঘাসফুলের বাগানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলে বামপন্থীদের অবস্থা হবে ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো। ছটফটিয়ে রাজনৈতিক মৃত্যু ছাড়া বামেদের সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা থাকবে না। কংগ্রেস ও বামেদের মমতা বিরোধিতা মেকি- এটা প্রমাণ করতে বেগ পেতে হবে না বিজেপির। দলমত নির্বিশেষে ‘অ্যান্টি মমতা’ ভোট ঝাঁকিয়ে পড়বে বিজেপির বাক্সে। তৃণমূলের সমর্থন ছাড়াই নিজের গড় বহরমপুর ধরে রাখার ক্ষমতা অধীর চৌধুরীর আছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। সংখ্যালঘুরা দূরে সরে না গেলে মালদহ দক্ষিণ থেকে জিতবেন আবুল হাসেম খান চৌধুরীও।
বাংলায় এই মুহূর্তে কংগ্রেসের জন্য বাস্তবতা হল এমন- তৃণমূলের সঙ্গে জোট না করলেও দুটো আসন পাওয়ার সম্ভাবনা আবার জোট করলেও দুটোই জুটতে পারে এমনকি একটি ফস্কেও যেতে পারে। মমতার হাত ধরে মুখে কালি মেখে একটি-দুটি আসন জেতার থেকে মমতার বিরোধিতা করে সমসংখ্যক আসনে জয়লাভ যে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অধিককতর ভাল; এটা বোঝার মতো বুদ্ধির পরিপক্কতা অধীর চৌধুরীর আছে। তবে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী বামেদের বিধি বড়ই বাম। তাঁদের শূন্য দশা চব্বিশেও ঘুচবে এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
Feature graphic is representational and created by NNDC.