ডেস্ক রিপোর্ট: রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা। বিকেলেই ফের শপথ নিয়ে একই পদে আসীন হওয়ার কথা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের কথা বলা হচ্ছে। সকাল সাড়ে এগারোটায় পাটনার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আর্লেকারের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়ে এসেছেন নীতিশ। এই পদত্যাগপত্র মহাগঠবন্ধন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। বিকেলে এনডিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতিশ কুমারের শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। ২০২২-এর ৯ অগাস্ট বিকেলে এনডিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ১০ অগাস্ট সকালে মহাগঠবন্ধন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন জেডি (ইউনাইটেড) প্রধান। এবার বেলাবেলিই পদত্যাগ এবং পদগ্রহণের কাজটি সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতের সবথেকে ভাগ্যবান রাজনীতিক।
নীতিশ কুমার মহাগঠবন্ধন বা ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে বেরিয়ে ফের বিজেপির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেওয়ায় তাঁকে বেঈমান-বিশ্বাসঘাতক বলছে কংগ্রেস, আরজেডি এমনকি তৃণমূলও। যদিও নীতিশ জোটকে কলা দেখিয়ে এনডিএ-তে ফিরতে চলেছেন, টের পেয়েই তাঁকে ধরে রাখতে চেষ্টা কিছু কম করে নি কংগ্রেস। মন গলাতে নীতিশকে বার কয়েক ফোন করেছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে। কিন্তু খড়্গের ফোন পর্যন্ত তুলেন নি নীতিশ। আসলে নীতিশ বরাবরই এক কথার মানুষ। পার্টনারের উপর থেকে মন উঠে যাওয়া মাত্রই তিনি তার সঙ্গে রাজনৈতিক সহবাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
২৪৩ সদস্যের বিহার বিধানসভায় নীতিশের দলের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ৪৫। একক বৃহত্তম দল লালু-তেজস্বীর আরজেডি, তাদের বিধায়ক ৭৯। ৭৮ বিধায়ক নিয়ে বিজেপি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। ২০১৫ থেকে জোট পাল্টাপাল্টি করেই মুখ্যমন্ত্রীর চাকরি দিব্যি টিকিয়ে রেখেছেন নীতিশ। ২০২০-এর বিধানসভা নির্বাচনে নীতিশের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিদায় নিয়ে রাজনৈতিক মহলের মনে কোনও সংশয় ছিল না। শেষ বেলায় হাল ধরেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। মোদী ম্যাজিকের জোরে সে যাত্রা বিহারে এনডিএ পরাজয় এড়ালেও জেডি (ইউ) তিন নম্বরে নেমে যায়। তারপরেও জোট অটুট রাখতে নীতিশ কুমারকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় বিজেপি। এনডিএ ক্ষমতায় ফিরলে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী রাখতে হবে, ভোটের আগেই অমিত শাহের সঙ্গে কড়ার করে নিতে ভোলেন নি নীতিশ।
শক্ত ঘাঁটি হলেও এখনও পর্যন্ত নিজের শক্তিতে বিহারে সরকার গঠন করতে পারে নি বিজেপি। বিহারে নীতিশ কুমারের জনপ্রিয়তা তলানিতে। জোটসঙ্গী হিসেবেও যে নীতিশ মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নন, নীতিশের বায়োডেটাই তার প্রমাণ। কিন্তু তারপরেও চঞ্চলমতি নীতিশকে দলে টেনে লোকসভা ভোটের মুখে বিরোধী জোটকে ভেঙে ফেলা যাচ্ছে; মোদী-শাহের জন্য এই প্রবল শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এর চেয়ে মন ভাল করা ঘটনা আর কী হতে পারে!
নীতিশ কুমার নিঃসন্দেহে বিরাট মাপের নেতা। বিহারের মতো রাজ্যে ১৮ বছর মুখ্যমন্ত্রী থেকেও নিজে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত। লালুপ্রসাদ যাদবের আমলের অরাজকতা থেকে বিহারকে মুক্ত করার কৃতিত্ব থেকে নীতিশকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না কিন্তু এখন তিনি নিতান্তই একজন রাজনৈতিক পরগাছায় পরিণত হয়েছেন। লোকসভা নির্বাচন মিটলে এবং দিল্লিতে ভালোয় ভালোয় ক্ষমতায় ফিরলে বিজেপির কাছে নীতিশের প্রয়োজন ফুরোবে। বিহারে পদ্মরাজ বিজেপির বহু দিনের স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নীতিশ কুমারকে ‘স্টপগ্যাপ চিফ মিনিস্টার’ হিসেবে মেনে নিতে মোদী-শাহের অসুবিধা নেই।
Feature image credit- X handle of Chief Minister Nitish Kumar.