সিরিয়ায় ইজরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের এক শীর্ষস্থানীয় জেনারেল খতম!

সিরিয়ায় ইজরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের এক শীর্ষস্থানীয় জেনারেল খতম!


ইজরায়েলি বিমান বাহিনীর বোমায় বিধ্বস্ত দামেস্কের উপকণ্ঠ। এখানেই নিহত হয়েছেন জেনারেল মৌসাভি। ছবি- সংগৃহীত

ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডের সবথেকে এলিট উইং ‘কুদস’ ফোর্সের প্রাক্তন সর্বোচ্চ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন জেনারেল মৌসাভি। ২০২০ সালে ইরাকে ড্রোন হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করে আমেরিকা। সোলাইমানির মৃত্যুর পর ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের সামরিক কর্মকান্ড পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান সাইদ রাজি মৌসাভি। মূলতঃ সিরিয়ায় সক্রিয় ইরানের যাবতীয় সামরিক ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন মৌসাভি। প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদের সরকারের সঙ্গে ইরানের সামরিক সংক্রান্ত সমস্ত লেনদেনে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন কমান্ডার মৌসাভি। আমেরিকার পাশাপাশি ইজরায়েল‌ও তাই দীর্ঘদিন ধরে মৌসাভিকে সরিয়ে দেওয়ার তালে ছিল।

যখন দু’জনেই জীবিত ছিলেন: কাসেম সোলাইমানির সঙ্গে সাইদ রাজি মৌসাভি (ছবির ডানে)। সোলাইমানির পরিণতিই বরণ করতে হল মৌসাভিকে। ফটো ক্রেডিট- এ‌এফপি

যে কোনও মুহূর্তে ইজরায়েল কিম্বা আমেরিকার ড্রোন হামলার শিকার হয়ে যেতে পারেন, এই ভয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে চলাফেরা করতেন মৌসাভি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইজরায়েলের নজর থেকে বাঁচতে পারলেন না ইরানের এই ঝানু সামরিক কমান্ডার। লেবাননে আশীর দশক থেকেই ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের সামরিক কর্মকান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন সাইদ রাজি মৌসাভি। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি লেবাননে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর সামরিক তৎপরতা পরিচালনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন অভিজ্ঞ মৌসাভি। মৌসাভির মৃত্যু ইরান, সিরিয়া ও হিজবুল্লাহর জন্য বড় ক্ষতি বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।

গত ৭ অক্টোবর সকালে দক্ষিণ ইজরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার পর থেকেই ইজরায়েল-লেবানন সীমান্তের পরিস্থিতি‌ও উত্তপ্ত। হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত ভূখন্ড থেকে ইজরায়েলের জমিতে রকেট হামলা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জবাবে লেবাননে ঘন ঘন গোলা বর্ষণ ও বিমান হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানে ব্যস্ত থাকায় লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে এখন‌ই কোন‌ও স্থল অভিযানের কথা ভাবছে না ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী। তবে সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে খর্ব করতে তারা যে এই দুই দেশের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও মুহূর্তে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে, মৌসাভিকে মেরে এটাই আরেকবার প্রমাণ করল ইজরায়েল।

সাইদ রাজি মৌসাভির মৃত্যুতে ইরানে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। ইরানের সরকারি টেলিভিশনে প্রয়াত মৌসাভিকে সিরিয়ায় সক্রিয় রেভলিউশনারি গার্ড কোরের সবথেকে অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মৌসাভির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, “অচিরেই এই মৃত্যুর বদলা নেওয়া হবে। ইজরায়েল যেনো মৌসাভির রক্তের মূল্য চোকানোর জন্য প্রস্তুত থাকে।” প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আরও বলেন, “গাজায় সামরিক অভিযানের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে এক ঘরে হয়ে পড়ায় তেল-আভিভ ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছে। মৌসাভির উপরে হামলা জায়নবাদীদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মৌসাভিকে হত্যা করে ইজরায়েল আরও কোনঠাসা হয়ে পড়ল।”
ইরান এই কথা বললেও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খুব পরিকল্পনা মাফিক‌ই সাইদ রাজি মৌসাভিকে হত্যা করেছে আইডিএফ এবং এই ধরণের ঘটনা আরও ঘটাবে তারা। সিরিয়া-লেবাননে ইরানপন্থীদের দুর্বল করতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ‘এয়ার স্ট্রাইক’ ইজরায়েলের জন্য নতুন কিছু নয়।‌ ইরানের উষ্কানিতে হিজবুল্লাহ আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতেই জবাবে সিরিয়া-লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কোরের কমান্ডারদের মেরে ফেলছে ইজরায়েল। ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় ইজরায়েলের বিমান হানায় ‘আইআরজিসি’-র দুই কমান্ডারের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছিল ইরান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *