পলিটিক্যাল ডেস্ক: পাঁচ রাজ্যের ভোটকে বলা হয়েছিল লোকসভার আগে সেমিফাইনাল। রবিবার চার বড় রাজ্যের ফল প্রকাশের পর মিডিয়ায় বাজছে পুরোনো রেকর্ড- “মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।” চারে তিন স্কোর করে ফাইনালের আগে বিজেপি তরতাজা। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেখানে কংগ্রেসের বিজয়কতেন উড়ল বটে কিন্তু রাজস্থান, ছত্তিশগড় হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ দখলের স্বপ্ন বিফলে যাওয়ায় তেলেঙ্গানা বিজয়ের স্বাদ রাহুল গান্ধীর জিভে পানসে লাগতে বাধ্য।
এক্সিট পোল ট্রোলড!
চার রাজ্যের ফলে গোল খেয়েছে অধিকাংশ চ্যানেলের এক্সিট পোলও। সকালের দিকে গণনার শুরুতে রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত থাকলেও বেলা বাড়তেই পরিষ্কার হয়ে যায়, এই দুই রাজ্য হাতের হাতছাড়া হচ্ছেই। রাজস্থানে বিজেপির দখলে ১১৫টি আসন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে ১৫টি আসন বেশি। কংগ্রেসের ঝুলিতে মাত্র ৬৯। অশোক গেহলটই শেষ পর্যন্ত কুর্শি ধরে রাখবেন, এমন পূর্বাভাস দিয়েছিল একাধিক এক্সিট পোল। কিন্তু ‘ট্রেন্ড’ মেনেই পালা বদল ঘটিয়ে দিলেন মরুরাজ্যের জনগণ।
তবে কংগ্রেসকে অপ্রত্যাশিত দাগা দিয়েছে ছত্তিশগড়ের ফল। রাজস্থানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত থাকলেও প্রায় সব চ্যানেলের এক্সিট পোলই ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের প্রত্যাবর্তনের স্পষ্ট আভাস দিয়েছিল। রবিবার দুপুর গড়ানোর আগেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বাঘেল নয় ছত্তিশগড়ে জয়ের মুকুট উঠতে চলেছে রমন সিংয়ের মাথাতেই। ছত্তিশগড়ে বিজেপি জিতেছে ৫৩ টি আসন। কংগ্রেসের দখলে ৩৫। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৪৬ টি সিট। ম্যাজিক ফিগার থেকেও ৭টি বেশি আছে পদ্ম শিবিরের। প্রচারে বিজেপি রমন সিংকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সে’ভাবে প্রোজেক্ট না করলেও ছত্তিশগড়ে পদ্মের অপ্রত্যাশিত বিজয়ের পর রমনের মতো জনপ্রিয় মুখের মুখ্যমন্ত্রীত্ব একপ্রকার নিশ্চিত বলাই চলে।
প্রত্যাশার চেয়েও পদ্মের ভাল ফল মধ্যপ্রদেশে
প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় এই যাত্রায় মধ্যপ্রদেশ নাও ভাসতে পারে, এমন পূর্বাভাস এক্সিট পোলে ছিল। কিন্তু ‘কাটে কা টক্কর’ শেষে বিজেপি মোটের উপর উতরে যাবে, এমন ইঙ্গিতই মিলেছিল অধিকাংশ এক্সিট পোলে। অথচ মধ্যপ্রদেশে এতটাই হাত উপুড় করে জনতাজনার্দন পদ্মকে দিলেন যা বিজেপিরও প্রত্যাশার অতিরিক্ত। ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় বিজেপি জিতে নিয়েছে ১৬৬টি। কংগ্রেসের মাত্র ৬২। ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস পেয়েছিল ১১৪টি আসন ও ৪০.৮৯ শতাংশ ভোট। পাঁচ বছর পরে হাতের হাত থেকে খোয়া গেল ৫২ টি আসন। এই বছর কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০.৪৭ শতাংশ। শতাংশের বিচারে কংগ্রেসের ভোট না কমলেও ধস নেমেছে আসনে। আঠারোতে ১০৯টি আসনে জিতে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৪১.০২ শতাংশ। তেইশে বিজেপির ভোট ৪৮.৬৯ শতাংশ। বেড়েছে ৭.৬৭ শতাংশ। পদ্মের ভোটের হারে এই উল্লম্ফনের প্রতিফলনই পড়েছে আসন সংখ্যায়। ৫৭টি আসন বাড়িয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি।
সেমিফাইনাল বের করে নিলেন মোদী
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়- এই তিন রাজ্যেই বিজেপির ভোটযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিন রাজ্যেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে তুলে ধরে প্রচার চালায় নি বিজেপি। এমনকি প্রচার পর্বে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের মতো জনপ্রিয় মুখ ও দক্ষ প্রশাসককেও মধ্যপ্রদেশে আড়ালে ঠেলে দিয়েছিলেন মোদী। ছত্তিশগড়েও রমন সিংকে মুখ্যমন্ত্রী করার আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দেয় নি পদ্ম শিবির। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার রাজস্থানেও বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করার ঝুঁকি নেন নি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
লোকসভা নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে পাঁচ রাজ্যের ভোটকে লোকসভার সেমিফাইনাল বলে দাবি করেছিল বিরোধীরাই। মোদী নিজেও জানতেন, ফল সুবিধার না হলে ঘরে-বাইরে চাপের সামনে পড়তে হবে তাঁকে এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রশ্নের মুখে পড়বে তাঁর ক্যারিশ্মা। ২০১৪-র পর থেকে যে কোনও রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও বিজেপির কান্ডারী একজনই- মোদী। মোদী ম্যাজিক কাজ করে নি, রাজ্যে রাজ্যে ভোটে এমন উদাহরণ আছে। কিন্তু মোদী একাই কঠিন লড়াইয়ে দলকে উতরে দিয়েছেন, এমন নজিরও বিধানসভার ভোটগুলিতে কম নয়।
কাল থেকে ফাইনালের জন্য নেমে পড়বেন মোদী
ছত্তিশগড় নিয়ে অনেক বড় বিজেপি সমর্থকও আশাবাদী ছিলেন না। মধ্যপ্রদেশে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া কাজ করার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। দল শুধু রাজস্থানে জিতলেও হয়তো খুশি থাকতেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু বৃহত্তর হিন্দি বলয়ে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে তিনে তিন! লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন চমকপ্রদ ফল পদ্ম শিবিরকে আনন্দে আত্মহারা করার জন্য যথেষ্ট। সোমবার থেকে ফাইনাল ম্যাচ জেতার লক্ষ্যে যে মোদী মাঠে নেমে পড়বেন, তাঁকে মোকাবিলা করার মতো কোনও সেনাপতি বিরোধী শিবিরে আছে বলে মনে হয় না।
Feature image is representational.