ডেস্ক রিপোর্ট: মাঝ আকাশে দাম্পত্য কলহ এমন বিস্ফোরক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে বিমান পর্যন্ত জরুরি অবতরণ করাতে বাধ্য হলেন পাইলট। স্বামী-স্ত্রীর হাতাহাতির জেরে বিমান জ্বলে ওঠার অবস্থা হয়েছিল। কেবিন ক্রুরা সময়ে হস্তক্ষেপ করায় রক্ষা! মিউনিখ থেকে ব্যাংককগামী লুফথানসা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বুধবার স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় মাঝ আকাশে কেঁপে উঠেছিল। ‘এয়ার টার্বুল্যান্স’-ও একজন দক্ষ পাইলট সামলে নিতে পারেন কিন্তু ‘কাপল টার্বুল্যান্স’ সামাল দিয়ে প্লেন উড়ানোর কৌশল তো পাইলটদের কারিকুলামেই নেই। তাই ব্যাংকক যাওয়ার পথে দিল্লিতেই জরুরি অবতরণ করতে হয় লুফথানসার ফ্লাইটটিকে।
স্বামীটি বছর ৫৩-র জার্মান নাগরিক। স্ত্রীটি থাইল্যান্ডের। মাঝ আকাশে হঠাৎ এই থাই-জার্মান দম্পতির মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টুকটাক বাওয়াল দেখার অভিজ্ঞতা কেবিন ক্রুদের আছে। তাই প্রথমে গা করেন নি তারা। কিন্তু ক্রমেই উভয়ের গলার আওয়াজ প্লেনের আওয়াজকেও ছাপিয়ে যায়। দু’জনের চেঁচামেচি চরমে উঠলে ক্রুরা থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু থাই স্ত্রীর কাছে বাকযুদ্ধে পর্যুদস্তু জার্মান স্বামী রাগে লাইটার দিয়ে কম্বলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে কেবিন ক্রুদের চোখ কপালে ওঠার উপক্রম হয়। ককপিটে খবর যায়, পাইলট-কোপাইলট বিমান জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। বিমানটি তখন দিল্লির আকাশে। ‘ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’-এর এটিসি থেকে জরুরি অবতরণের অনুমতি পাওয়া গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন দুই পাইলট।
বুধবার সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে লুফথানসা এয়ারলাইন্সের বিমানটি আইজিআই বিমানবন্দরে নামে। ততক্ষণে কেবিন ক্রুদের হস্তক্ষেপে স্বামী-স্ত্রী যুদ্ধ বিরতিতে গেলেও তাদের নিয়ে আর ব্যাংককে উড়ার সাহস পান নি পাইলটেরা। বিমানে ঢুকে ওই দম্পতিকে নামিয়ে নিয়ে যান সিআইএসএফ ও অভিবাসন দফতরের আধিকারিকেরা। কেবিন ক্রুরা জানিয়েছেন, দু’জনে প্রথমে কথা কাটাকাটি, অতঃপর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে তারা থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গোলমাল খাবার ছোঁড়াছুঁড়িতে পৌঁছালে ক্রুরা আশায় ছিলেন, এবার পরিস্থিতি ঠান্ডা হবে। কিন্তু জার্মান স্বামীটি হঠাৎই লাইটার দিয়ে কম্বল পোড়াতে গেলে বিমানের বাকি যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানের জরুরি অবতরণ করানো ছাড়া পাইলটদের সামনে আর কোনও উপায় ছিল না।
জার্মান স্বামীর ব্যাংকক গমনের মুড নষ্ট হয়ে গেলেও তাঁর থাই বউ বিমান থেকে নামতে চান নি। লুফথানসার ফ্লাইটেই তাঁকে একাই গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কেবিন ক্রুদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন সেই মহিলা। কিন্তু রাজি হয় নি লুফথানসা কর্তৃপক্ষ। স্বামী ও স্ত্রী দু’জনকেই প্লেন থেকে নেমে যেতে বলা হয়। পরে ওই দম্পতিকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঠান্ডা করে মিউনিখগামী ফ্লাইটে তুলে দেন অভিবাসন দফতরের আধিকারিকেরাই।
এই ঘটনায় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে লুফথানসা এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “দুই যাত্রীর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জেরে মিউনিখ থেকে ব্যাংককগামী ফ্লাইটটি দিল্লিতে নামাতে বাধ্য হয়েছেন পাইলট। দু’জনকেই ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনার পর ফ্লাইটটি সামান্য বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।” মাঝ আকাশে যে কোনও ধরণের পরিস্থিতিতে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তার বিষয়টি তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন বলে লুফথানসা এয়ারলাইনস-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন।
বোঝা গেল, শুধু সন্ত্রাসবাদীরাই নয় বিবদমান দম্পতিও মাঝ আকাশে বিমানের নিরাপত্তার জন্য রীতিমতো বিপজ্জনক।
Feature image is representational .