পলিটিক্যাল ডেস্ক: ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূলকে ধরে রাখতে অধীরকে মমতার ব্যাপারে নরম হওয়ার পরামর্শ দিলেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার। পাওয়ারের ভয়, সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে মমতার দোস্তি হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে অধীর চৌধুরী যে’ভাবে মুখ চালাচ্ছেন, তাতে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের কাঁচা পিরিত আবার ভেস্তে না যায়। শঙ্কিত শরদ পাওয়ার বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অধীর চৌধুরীর সম্পর্ক ক্রমশই তিক্ত হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। মমতাকে গালমন্দ করার বদভ্যাস অধীরের রয়েছে। এটা ওঁর বন্ধ করা উচিত।”
প্রদেশ কংগ্রেসের যে গুটি কয়েক শীর্ষনেতার মমতার সঙ্গে সত্যি সত্যি আড়ি, অধীর চৌধুরী তাঁদের মধ্যে পয়লা নম্বরে। কংগ্রেসের লোকসভার নেতার সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাবসাব যে কোনও কালেই ‘বেহেতর’ ছিল না, সেই কথা মাথায় রেখেই অধীরকে বৃদ্ধ শরদের পরামর্শ, দোহাই লাগে এবার মমতার সমালোচনা করা ছাড়ুন। দু’জন যখন একদলে ছিলেন, তখনও তাঁদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি হত না। দল ভিন্ন হওয়ার পর এঁরা কেউ কারও প্রশস্তি গেয়ে কখনও দুটো শব্দ খরচ করেছেন বলে সাংবাদিকেরা স্মরণ করতে পারছেন না। অধীরের উত্থানে মমতার কোনও কৃপা নেই। বরং তাঁর যাতে ভাল করেই পতন হয় সেই লক্ষ্যে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন শরদ পাওয়ারের কাছ থেকে অধীরকে শুনতে হচ্ছে- মমতার সমালোচনা করার বদভ্যাস ছাড়ুন! বহরমপুরের রবিনহুডের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে এমন ফ্যাসাদ আগে কখনও এসেছে বলে মনে হয় না।
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস তো কবেই গেছে কিন্তু
অধীর চৌধুরী টিকে আছেন এবং তা তৃণমূলের প্রবল চাপ সহ্য করেই। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর থেকে জিততে না পারলে অধীর আজ কোথায় থাকতেন? তাঁর উইকেটটি পড়লে যে সবচেয়ে বেশি খুশি হত, কাল তাঁর সঙ্গেই হাত মেলাতে হাইকমান্ড নির্দেশ দিলে অধীর কী করবেন? এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কট্টর বিরোধী দুই বড় নেতার একজন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী তো আরেকজন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। লোকসভা ভোটে বাংলায় কংগ্রেসকে দুটির বেশি আসন ছাড়তে নারাজ মমতা। তার একটি মালদহ দক্ষিণ হলে অপরটি বহরমপুর নিশ্চিত। তৃণমূলের সমর্থনে বহরমপুর থেকে দাঁড়িয়ে হারলে অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনে তো ফুলস্টপ পড়লোই এমনকি মমতার দয়ায় জিতলেও তাঁর ভাবমূর্তির বারোটা বাজা আটকাবে না।
ঝানু অধীর নিজেও তা বোঝেন বলেই তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের শরিক হয়ে ওঠার পরেও বাংলায় মমতার বিরোধিতায় ঢিলেমি দিতে চান না। শরদের কথার জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তাই জানিয়েছেন, “পাওয়ারের যা ভাল মনে হয়েছে বলেছেন। বাংলায় তৃণমূল আক্রমণকারী আর কংগ্রেস আক্রান্ত। সুতরাং আক্রমণকারীর সঙ্গে আক্রান্তের যে সম্পর্ক হওয়া উচিত, সেটা মেনেই এখানে আমরা চলছি।” কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলের নেতা হওয়ার সুবাদে সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বাধ্যবাধকতা অধীর চৌধুরীর আছে। কিন্তু অধীর এও জানেন, নিজের রাজ্যে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলে একদিন দিল্লিতেও কেউ পুছবে না। অধীররঞ্জন চৌধুরীর সাফ কথা, “সর্বভারতীয় স্তরের কথা বলতে পারব না। বাংলার রাজনীতিতে যা বাস্তব, যা ঘটছে, সেই অনুযায়ীই কথা বলছি।’’
বাংলার রাজনৈতিক বাস্তবতা শেষ পর্যন্ত রাহুল-সোনিয়াকে বোঝাতে ব্যর্থ হলে অধীর চৌধুরীর মতো কট্টর তৃণমূল বিরোধী প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা কী পদক্ষেপ করবেন, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহল।
Feature graphic is representational.